শাস্ত্রকাররা বলছেন একাদশীর অর্থ হল আমাদের ১০ ইন্দ্রিয় এবং এক মন নিয়ন্ত্রণ
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শাস্ত্রকাররা বলছেন একাদশীর অর্থ হল আমাদের ১০ ইন্দ্রিয় এবং এক মন নিয়ন্ত্রণ। হিন্দু শাস্ত্রমতে, একাদশীতে দুটি শব্দ আছে, এক এবং দশ । দশ ইন্দ্রিয় এবং মনের ক্রিয়াকলাপকে জাগতিক জিনিস থেকে ঈশ্বরে রূপান্তরিত করাই আসল একাদশী। ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি আমলকী একাদশী (Aamlaki Ekadashi) নামে পরিচিত। এই দিনটিকে অনেকে রঙভরনী একাদশীও বলে থাকেন। আমলকী একাদশীতে আমলকী গাছের পুজো করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। ভগবান বিষ্ণুর পুজোও এদিন করা হয়। চলতি বছর আমলকী একাদশীর ব্রত পালন হবে ৩ মার্চ।
আমলকী গাছের উত্পত্তি নিয়ে পুরাণে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে আমলকী গাছের উৎপত্তি ভগবান বিষ্ণুর মুখ থেকে। বিশ্বাস মতে, তাঁর মুখ থেকে একবার চাঁদের সমান একটি বিন্দু প্রকট হয়ে পৃথিবীতে গিয়ে পড়ে। সেই বিন্দু থেকেই আমলকী গাছের উৎপত্তি হয়। বিষ্ণুর মুখ থেকে উৎপন্ন আমলকী গাছকে তাই সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, আমলকী ফল ভগবান বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী এই ফলের প্রচুর উপকারিতা আছে। ভক্তদের আরও বিশ্বাস, আমলকী খেলে তিন গুণ শুভ ফল লাভ করা যেতে পারে। অনেকে মনে করে আমলকী একাদশী তিথি এই গাছে অবস্থান করেন স্বয়ং লক্ষ্মী। সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির দেবীর লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়ার জন্যও এদিন আমলকী গাছের পুজো করার রীতি প্রচলিত আছে। দেশের অনেক জায়গায় আমলকী একাদশী থেকেই দোল উৎসবের সূচনা হয়। আবার অন্য একটি পৌরাণিক গল্প অনুসারে, ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে ব্রহ্মার জন্ম হয়েছিল। পরমব্রহ্মকে জানার জন্য তখন তপস্যা শুরু করেছিলেন ব্রহ্মা। সেই তপস্যায় খুশি হয়ে বিষ্ণু আর্বিভূত হন। চোখের সামনে নারায়ণকে দেখে ব্রহ্মা তাঁর চোখের জল সামলে রাখতে পারেননি। নারায়ণের পায়ে তাঁর চোখের জল পড়েছিল। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় এই গোল সবুজ ফল। নারায়ণ তখন বলেছিলেন, ‘আজ থেকে এই ফল আর এই গাছ আমার খুব প্রিয় হবে। এই দিনে ভক্তিভরে আমলকী গাছকে পুজোর মধ্যে দিয়েই আমার আরাধনা করা হবে। আমলকী একাদশীতে পুজো করলে সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে এবং জীবনে আসবে শুভ যোগ’।
কথিত আছে প্রাচীনকালে চিত্রসেন নামে এক রাজার রাজত্ব ছিল। তাঁর রাজ্যে একাদশী ব্রত অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করা হত। তাঁর রাজ্যের সমস্ত প্রজা একাদশী ব্রত পালন করতেন। অন্যদিকে রাজার মনে আমলকী একাদশীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ছিল। একদিন শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলে অনেক দূর এগিয়ে যান রাজা। সেখানে এক দল ডাকাতের কবলে পড়েন তিনি। অস্ত্র হাতে রাজাকে আক্রমণ করে ডাকাতরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রাজার ওপর যে অস্ত্রই প্রয়োগ করা হোক না কেন, সে সবই ফুলে পরিণত হয়ে যায়।
বিপুল সংখ্যক ডাকাতদের মোকাবিলা করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান রাজা। সে সময় রাজার শরীর থেকে একটি দৈব শক্তি প্রকট হয় ও ডাকাতদের বিনাশ করে পুনরায় অদৃশ্য হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে রাজা দেখেন সমস্ত ডাকাত মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হতবাক হয়ে যান রাজা চিত্রসেন। তখন আকাশবাণী হয়, ‘হে রাজা! এই সমস্ত রাক্ষস তোমার আমলকী একাদশীর ব্রতর প্রভাবে মারা গিয়েছে। তোমার শরীর থেকে উৎপন্ন আমলকী একাদশীর বৈষ্ণবী শক্তি এদের সংহার করেছে। এদের বধ করে সেই শক্তি পুনরায় তোমার শরীরে প্রবেশ করেছে। এই কথা শুনে রাজা প্রসন্ন হন এবং নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে একাদশীর মাহাত্ম্য প্রচার করেন।’
পণ্ডিতরা বলছেন, এদিন খুব সকালে অর্থাৎ ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে বিষ্ণুর পুজো করুন। এরপর বাড়ির পাশে যেখানে আমলকী গাছ রয়েছে সেখানেও বিষ্ণুর একটি ছবি বসিয়ে পুজো করতে হবে। আমলকী গাছের তলায় হলুদ কাপড় বিছিয়ে নারায়ণের ছবি রাখুন। এবার ধূপ, ফুল, চন্দন আর নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো করুন। পুজো শেষ হলে গাছতলায় ঘি-এর প্রদীপ জ্বালিয়ে আসুন। তবে প্রসাদে একটি গোটা আমলকী যেন অবশ্যই থাকে। এদিন নিরামিষ আহারের রীতি রয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
Tags: