Indian Standard Time: সারা দেশে এক সময় চালু করতে রেল ও সর্দার প্যাটেলের গুরুত্ব অপরিসীম, জানুন সেই ইতিহাস...
হাওড়া স্টেশনে বড় ঘড়ি। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সারা ভারতে এখন ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম (IST Story) মেনে সময় নির্ধারণ করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে ভারতে আইএসটি চালু করা হয়েছিল। এতে ঠিক হয়েছিল যে ভারত যে আইএসটি (Indian Standard Time) বলে টাইম জোন মেনে চলবে তা গ্রিনিচ মিন টাইম-এর থেকে ৫.৩০ঘণ্টা এগিয়ে থাকবে। মানে গ্রিনিচ মিন টাইম-এ কোথাও সকাল ৬টা বাজলে ভারতে তখন সময় হবে ১১.৩০টা। ভারতের সমস্ত প্রদেশকে এ বিষয়ে এক ছাতার তলায় এনেছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। এক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়েরও একটা ভূমিকা ছিল।
কমন এরার চার শতকে অবশ্য ভারতে সময় গোনার পদ্ধতি একটু অন্যরকম ছিল। সূর্য সিদ্ধান্তে বর্ণিত স্ট্যানডার্ড টাইম (IST Story) মেনে এই সময় গোনা হত। অবন্তি তথা উজ্জয়ন-এর উপর দিয়ে আদ্য দ্রাঘিমা গিয়েছে বলে সূর্য সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল। ২৩ডিগ্রি ১১ ইঞ্চি উত্তর ও ৭৫ডিগ্রি ৪৫ ইঞ্চি পূর্ব দিয়ে উজ্জয়নের উপর দিয়ে এই আদ্য দ্রাঘিমা গিয়েছে বলে বর্ণিত করা হয়েছিল এই গ্রন্থে। আবার রোহিতাকা, যার আধুনা নাম রোহতক-এও ২৮ ডিগ্রি ৫৪ ইঞ্চি উত্তর, ৭৬ডিগ্রি ৩৮ ইঞ্চি পূর্ব দিয়ে আদ্য দ্রাঘিমা যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল সূর্য সিদ্ধান্তে। এমনকী এই গ্রন্থে এটাও উল্লেখ করা হয় যে রোহিতাকা ও অবন্তি বিষুবরেখা ও উত্তর মেরুর লাইন বরাবর স্থাপিত।প্রাচীন ভারতে এই সূর্য সিদ্ধান্ত মতে উজ্জয়নের আদ্য দ্রাঘিমা রেখায় সূর্যোদয় দেখে প্রাথমিকভাবে সময় গোনা হত। এরপর এই সময়কে গণিতিক আকারে ভেঙে ছোট ছোট সময়-এ ভাগ করা হত। তবে, সময় গণনাকে তখনকার দিনে শুধুমাত্র জ্যোতিষশাস্ত্রেই ব্যবহার করা হত। সে সময় বিভিন্ন রাজ্য়গুলি হিন্দু ক্যালেন্ডার মেনে নিজস্ব স্থানীয় সময় নির্ধারণ করত।
১৭৩৩ সালে জয়পুরে যন্তর-মন্তর তৈরি করেছিলেন মহারাজা সোয়াই জয় সিং। যিনি সময় গণনার জন্য যন্তর-মন্তরে বড় ডায়ালের ঘড়িও লাগিয়েছিলেন। ১৭৯২ সালে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি চেন্নাই-এ মাদ্রাজ অবজারভেটরি তৈরি করে। এরপর ১৮০২ সালে জ্যোতিষবিদ জন গোল্ডিনংহাম চেন্নাই লংঙ্গিটুড গঠন করেন। যা গ্রিনিচ মিন টাইমের থেকে ৫ ঘণ্টা এগিয়ে ছিল।
১৮৫০ সালে ভারতীয় রেলের জন্মের আগে পর্যন্ত দেশের ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোন কাজ চালিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু রেলের জন্ম হতেই দেশজুড়ে একই সময় গণনার দাবি উঠল। এক দেশ এক টাইমের দাবিতে সওয়াল হতে শুরু করেছিল। সমস্যা সমাধানে রেল এক অভূতপূর্ব ব্যবস্থার আমদানি করল। ১৯ শতকে রেল টাইম সিগন্যালের মাধ্য়মে বিভিন্ন রেলস্টেশনকে সূচনা দিতে থাকল সেখানকার স্থানীয় সময় অনুসারে কখন ট্রেন পৌঁছবে।
টাইম-জোন-এর গণনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। এর ফলে ভারতে টাইম জোনের আবির্ভাব ঘটেছিল, একটি কলকাতা ও অন্যটি মুম্বই। কলকাতার টাইমজোন গ্রিনিচ মিন টাইমের থেকে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ও ২১ সেকেন্ড এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে মুম্বই টাইম জোন গ্রিনিচ মিন টাইমের থেকে ৪ ঘণ্টা ৫১ মিনিট এগিয়ে ছিল। ১৮৮৪ সালে ওয়াশিংটন ডিসি-তে আন্তর্জাতিক মেরিডিয়ান কনফারেন্সে ইউনিফর্ম টাইম জোনস গঠনের দাবি ওঠে। ১৯০৫ সালে ভারতের ব্রিটিশ সরকার স্ট্যান্ডাডাইজড টাইম জোনের নীতি গ্রহণ করে। এর জেরে এলাহাবাদকে এই নীতির আওতায় আনা হয়। কারণ, দেশের অন্যান্য জায়গার থেকে দ্রাঘিমার রেখার কাছে এর সর্বনিকট অবস্থান। ১৯০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এলাহাবাদে কাজ শুরু করে।
শেষমেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদের সময় গণনাকে আইএসটির (Indian Standard Time) মর্যাদা দেওয়া হয়। এবং তখন থেকে ভারত জুড়ে এই আইএসটি (IST Story) প্রয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। চেন্নাই থেকে সেন্ট্রাল অবজারভেটরি সেন্টারকে এলাহাবাদের মিরজাপুরে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। আইএসটি মূলত নির্ধারণ হয় এলাহাবাদের মীরজাপুরের ক্লক টাওয়ার থেকে ৮২.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ভিত্তিতে। এই মীরজাপুর ভারতে দ্রাঘিমা রেখার সবচেয়ে কাছাকাছি এলাকা। সেই কারণে ক্লক টাওয়ারকে এখানেই প্রতিস্থাপন করা হয়।
কিন্তু স্বাধীনতার পরও প্রথমে কলকাতা এবং বোম্বে প্রেসিডেন্সিগুলি তাদের নিজস্ব সময় ধরে রেখেছিল। তারা ভারতীয় মান সময় মানতে চায়নি। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও বোম্বের মুখ্যমন্ত্রীদের সময়ের সাপেক্ষে জাতীয় মান অনুসরণ করার জন্য বল্লভভাই প্যাটেলের জোরাজুরির প্রয়োজন ছিল। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলই তখন রাজ্যগুলিকে বোঝায়। তাঁর বুদ্ধি ও যুক্তি গ্রহণ করে কলকাতা ও মুম্বই। তাই শুধু রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়নে একীভূত করার জন্য নয়, বাংলা ও বোম্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ভারতীয় প্রমাণ সময় মেনে নেওয়ার জন্যও প্যাটেলের কৃতিত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন: গুজরাটই ছিল তাঁর আদি বাড়ি, জানেন বিশ্বের একমাত্র হিন্দু শেখ কনকসি খিমজির গল্প?
দেবাশীষ দাস তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন , ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইমের (IST Story) ভূমিকা : একটি ঐতিহাসিক সমীক্ষা , “১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে, স্বাধীনতার ঠিক আগে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে বাংলার সময়কে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি অনুরোধ করা হয়েছিল: যখন একটি কঠোর পরিবর্তন সারা ভারতে, বিশেষ করে বাংলায় তৈরি করা হচ্ছে, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা উপেক্ষা করা হচ্ছে, অর্থাৎ, বেঙ্গল টাইম যা ভারতীয় মান সময়ের থেকে এক ঘন্টা এগিয়ে এবং শুধুমাত্র বাংলায় অনুসরণ করা হয় যা দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। নাগরিকেরা... আমরা বাঙালিরা এক সময় দাঁড়াতে চাই, অর্থাৎ ভারতীয় মান সময় অন্য সব প্রদেশে অনুসরণ করে।" বোম্বে সম্পর্কেও অনুরূপ অনুরোধ করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র দফতর পরামর্শ দিয়েছিল যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি বিবেচনা করতে পারে। এরপরই কলকাতা তথা বাংলায় ৩১ অগাস্ট বা ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালের মধ্যরাত থেকে আইএসটি (Indian Standard Time) গ্রহণ করে। এর প্রায় আড়াই বছর পরে বোম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ মার্চ ১৯৫০ আইএসটি গ্রহণ করে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।