Chandannagar: কৃষ্ণনগর-চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস জানেন কি?
জগদ্ধাত্রী পুজোর ঠাকুর। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জগৎকে ধারণ করেন মা দেবী শক্তি, তাই তাঁর নাম দেবী জগদ্ধাত্রী (Jagadhatri Puja 2024)। তাঁর বিশাল রূপ, টানা চোখ, অপরূপ সুন্দর ত্রিনয়ন, চার হাতে শোভা পাচ্ছে অসুর সংহারের জন্য অস্ত্র। দেবী দুর্গার আরেক রূপ মা জগদ্ধাত্রী। তিনিও সিংহবাহিনী। এই রূপেই পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। সারা বাংলা জুড়েই বিশাল বিশাল মাতৃ মূর্তি নির্মাণ করে আরাধনা করা হয়। কৃষ্ণনগরেই জন্ম জগদ্ধাত্রী পুজোর (Jagaddhatri Puja 2024)। তবুও চন্দননগরের পুজোই বিখ্যাত হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। উল্লেখ্য চন্দননগরের পুজোর আলোকসজ্জা, সুবিশাল প্রতিমা দর্শনার্থীদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। আশেপাশের জেলা, রাজ্য এমনকী বিদেশ থেকেও দর্শনার্থীরা পুজো দেখতে আসেন। অথচ এই পুজো শুরুর পিছনে রয়েছে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিশেষ প্রভাব এবং অবদান। কীভাবে প্রচলিত হল চন্দননগরের পুজো? আসুন জেনে নিই এই অজানা কাহিনি।
সময়টা তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে দমন করতে ব্রিটিশদের সহযোগী হয়ে বাংলার রাজাদের বন্দি করেন মির কাশিম। এই বন্দিদের তালিকায় ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং তাঁর ছেলে। কিন্তু যখন রাজা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান সেই সময় দেখেন দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গিয়েছে। পুজোর আনন্দ থেকে রাজা বঞ্চিত হন এবং এরপর মনমরা হয়ে পড়েন। কথিত আছে রাজা এরপরেই দেবীর কাছে স্বপ্নাদেশ পান। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মায়ের চতুর্ভূজা রূপের আরাধনা করার আদেশ পান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। দেবী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, "জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagaddhatri Puja 2024) করতে হবে। জনসেবা এবং বিশ্বকে সব রকম অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত করতে দেবী পুজো আবশ্যক।" সেই থেকে শুরু হয় কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। পরবর্তীতে রাজবাড়ির রাজপ্রাসাদের গণ্ডি টপকে ছড়িয়ে পড়ে নগরের অলিগলিতে। এরপর থেকেই এই পুজো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে গোটা কৃষ্ণনগরে। মোটামুটি জানা গিয়েছে, ১৭৬৩-৬৪ সালে হৈমন্তিকার আরাধনা শুরু হয় জলঙ্গি নদীর পাড়ে। তবে, সঠিক সময় নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
তবে বাংলার জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja 2024) নিয়ে পৌরাণিক মত খুব একটা স্পষ্ট করে পাওয়া যায় না। একটি মতে বলা হয়, ত্রেতা যুগের শুরুতে করীন্দ্রাসুর নামে এক হস্তীরূপী অসুরকে বধ করার জন্য দুর্গার মতো ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শক্তি থেকে সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা এই দেবীর জন্ম হয়। জগদ্ধাত্রী দেবী চার হাতে থাকে চক্র, শঙ্খ, ধনুক এবং পঞ্চবান। আবার অপর আরেক মতে, কোনও অসুর বধ নয়, মহিষাসুরের বধের পর অগ্নি, পবন, বরুণ এবং চন্দ্র দেবতা আত্ম অহংকারে ভুগতে শুরু করেন।দেবতাদের দর্পচূর্ণ করতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আর্বিভাব। সেখানে হস্তীকে অহংকারের স্বরূপ ধরা হয়। তাঁকেই বধ করেন দেবী। শাস্ত্রমতে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো।
আরও পড়ুনঃ রবিবার মাত্র একদিন জগদ্ধাত্রী পুজো হবে কৃষ্ণনগরে, চলছে চূড়ান্ত পর্যায়ের মণ্ডপসজ্জার কাজ
কৃষ্ণনগরের পাশাপাশি চন্দননগরেও পুজো শুরু হয়েছিল। জলঙ্গির পাড় থেকে গঙ্গার পাড়ে কীভাবে পৌঁছাল পুজো? জানা যায়, জমিদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন ফরাসিদের দেওয়ান জনৈক ইন্দ্রনারায়ণ রায়। তিনি নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja 2024) শুরু করেছিলেন। ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপট্টির বাসিন্দা। সেখানেই চাউলপট্টির নিচুপাটিতে ইন্দ্রনারায়ণ প্রথম শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো। আবার আরেকটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারামের বিধবা কন্যা থাকতেন ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায়। সেখানে রাজার অনুমতি নিয়ে পুজো শুরু হয়েছিল। এই পুজোর অনুদান দিতেন স্বয়ং রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ক্রমে ক্রমে এই পারিবারিক পুজো এবং সর্বজনীন পুজোতে (Jagadhatri Puja 2024) পরিণত হয়েছে। তবে সময়ের ব্যবধানে জাঁকজমক, আলোর খেলায় চন্দননগরের জনপ্রিয়তা অনেক বড় জায়গা করে নিয়েছে। এখানকার সুবিশাল মণ্ডপ, প্রতিমা ভক্ত, দর্শকদের ব্যাপক ভাবে আকর্ষণ করে। দেশ-বিদেশেও বাঙালির বড় পুজোর মধ্যে এই জগদ্ধাত্রী পুজো বড় জায়গা করে নিয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।