Shri Krishna Chapanna Bhog: লুচির উপর তালের বড়া, জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের ছাপান্ন ভোগে হরেক রকম...
শ্রীকৃষ্ণকে ৫৬ ভোগ নিবেদন।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাখি বন্ধনের ঠিক ৮ দিন পরে সারা ভারতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উত্সব (Janmashtami 2024) পালন করা হয়। দক্ষিণ ভারতে পালন করা হয় গোকুলাষ্টমী। ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দেশজুড়ে মহাধূমধাম করে জন্মাষ্টমী পালিত হয়। দেশের প্রতিটি কৃষ্ণ মন্দির সেজে ওঠে এই দিন। ঘরে ঘরে আরাধনা করা হয় যশোদা-কা নন্দলালার। "হরে-কৃষ্ণ নাম"-এ মেতে ওঠে নবদ্বীপ থেকে মায়াপুর, মথুরা-বৃন্দাবন। লুচি, মালপোয়া, মোহনভোগ, তালের বড়া, তাল ক্ষীর সাজিয়ে শ্রী কৃষ্ণের প্রার্থনায় মেতে ওঠেন আট থেকে আশি। গোপালকে নিবেদন করা হয় মাখন, মিছরি, ননী-ক্ষীর-সহ ছাপান্ন ভোগ (Shri Krishna Chapanna Bhog)।
দ্বাপর যুগে মর্ত্যে আবির্ভাব ঘটে বিষ্ণুর অষ্টম (Janmashtami 2024) অবতার শ্রী কৃষ্ণের। সনাতন ধর্মে, পাপভার থেকে পৃথিবীকে মুক্তি দিতে ও সাধু-সন্ন্যাসীদের পরিত্রাণের জন্য মর্ত্যে আর্বিভূত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ভাদ্রমাসের রোহিনী নক্ষত্র অবস্থিত অষ্টমী তিথিকে শ্রীকৃষ্ণের আর্বিভাব তিথি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথি জন্মাষ্টমী হিসেবে পরিচিত। এদিন ধুমধাম করে সারা দেশে কৃষ্ণ পুজো করা হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রাধা, বলরাম ও সুভদ্রার পুজোও করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল মথুরায়। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন গোকুলে। সেজন্য মথুরা ও বৃন্দাবনে এই উত্সব সবচেয়ে বড় করে হয়।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গোপালকে ৫৬ ভোগ (Shri Krishna Chapanna Bhog) দেওয়া হয়। জন্মাষ্টমীতে (Janmashtami 2024) গোপালকে ৫৬ ভোগ অর্পণ করে তাঁর প্রসাদ গ্রহণ করা অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। ৫৬ ভোগে ভগবান কৃষ্ণ প্রসন্ন হন ও ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ করেন, এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের। ৫৬ রকমের ভোগ অর্পণ করা হয় গোপালকে। ভাত, ডাল, লুচি থেকে তালের বড়া, ক্ষীর, মালপোয়া, লস্যি কী থাকে না! আর মাখন, মিছরি ছাড়া তো গোপালের ভোগই অসম্পূর্ণ।
জন্মাষ্টমীর (Janmashtami 2024) দিন বালগোপালকে ৫৬ রকম পদ সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে, দেব-দেবীদের পুজোর সময় সাধারণ বিজোড় সংখ্যায় নৈবেদ্য সাজানো হয়ে থাকে। কিন্তু কৃষ্ণকে দেওয়া ৫৬ ভোগ (Shri Krishna Chapanna Bhog)। পৌরাণিক কাহিনি মতে, বৃন্দাবনবাসীরা ইন্দ্রকে নানারূপে মহার্ঘ ভোগ নিবেদন করে সন্তুষ্ট রাখতেন। হিন্দুশাস্ত্র মতে, ইন্দ্র হলেন বৃষ্টি ও ব্রজের দেবতা। তাঁর আশীর্বাদেই সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত বর্ষণ হয়। তাই চাষীরা ইন্দ্রদেবকে তুষ্ট করতে দামি ও প্রচুর ভোগ রান্না করে নিবেদন করতেন। কিন্তু, গরিব চাষীদের পক্ষে দামি ভোগ নিবেদন করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। চাষীদের কষ্ট দূর করতে এগিয়ে আসেন শ্রীকৃষ্ণ। এভাবে ভোগ নিবেদন না করে ইন্দ্রকে নিজের ভোগ অবস্থা বুঝে নিবেদন করার পরামর্শ গরিব চাষীদের দেন কৃষ্ণ। তাঁর কথা শুনে চাষীরা সেই কাজই করেন। এদিকে, ভোগের সামগ্রীতে ঘাটতি দেখে ইন্দ্র অত্যন্ত রেগে যান। তাঁর ক্রোধে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও বজ্রপাত হতে থাকে। ক্রোধের কারণে বৃন্দাবনে হতে থাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি। তারপর থেকেই মানুষের জীবন হয়ে ওঠে বিপন্ন। বিপদে পড়ে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারস্থ হয় সকলে। বন্যা পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীরা গোবর্ধন পর্বতের দিকে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সকলেই দেখেন, শ্রীকৃষ্ণ পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুল তুলে রেখে দিয়েছেন। সেই পর্বতের তলায় আশ্রয় নেন সকল গ্রামবাসীরা। টানা সাতদিন ধরে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। সাতদিন টানা কৃষ্ণঠাকুর কড়ে আঙুলে পর্বতকে ধরে থাকেন। সাতদিন ধরে একচুলও নড়েননি তিনি। এমনকী, এককণা খাবারও মুখে তোলেননি। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাতা যশোদা এবং ব্রজবাসীরা মিলে সাত দিন ও অষ্টপ্রহর হিসেবে ৫৬ ধরনের খাবার প্রস্তুত (Shri Krishna Chapanna Bhog) করে কৃষ্ণের কাছে পরিবেশন করেন। তারপর থেকে প্রত্যেক জন্মাষ্টমীতে (Janmashtami 2024) তাঁর জন্য ছাপ্পান্ন ধরনের ভোগ প্রস্তুত করা হয়। কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণকে প্রসন্ন করতে এই ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করলে ভক্তদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: তালের বড়া, ক্ষীর কিংবা পিঠে! জন্মাষ্টমীর ভোগে এমন নানা পদের ছড়াছড়ি
ভাত (ভক্ত), ডাল (সুপ), চাটনি (প্রলেহ), কঢ়ী (সদিকা), দই-সব্জির কঢ়ী (দধিশাকজা), সিখরন (সিখরিণী), শরবৎ (অবলেহ), বাটী (বালকা), মোরব্বা (ইক্ষু খেরিণী), শর্করা যুক্ত (ত্রিকোণ), বড়া (বটক), মঠরী (মধু শীর্ষক), ফেনি (ফেণিকা), পুরী বা লুচি (পরিষ্টশ্চ), খজলা (শতপত্র), ঘেওয়ার (সধিদ্রক), মালপুয়া (চক্রাম), চোলা (চিল্ডিকা), জিলিপি (সুধাকুন্ডলিকা), মেসু (ধৃতপূর), রসগোল্লা (বায়ুপূর), চন্দ্রকলা (পগী হুই), মহারায়তা (দই), থুলি (স্থূলী), লবঙ্গপুরী (কর্পূরনাড়ী), খুরমা (খণ্ড মণ্ডল), ডালিয়া (গোধূম), পরিখা, সুফলঢয়া (মৌরী যুক্ত), বিলসারু (দধিরূপ), লাড্ডু (মোদক), শাক, অধানৌ আচার (সৌধান), মোঠ (মণ্ডকা), পায়েস (ক্ষীর), দই, গাওয়া ঘি, মাখন (হৈয়ঙ্গপীনম), মালাই (মন্ডূরী), রাবড়ি (কূপিকা), পাপড় (পর্পট), সীরা (শক্তিকা), লস্যি (লসিকা), সুবত, মোহন (সংঘায়), সুপারি (সুফলা), এলাচ (সিতা), ফল, তাম্বুল, মোহন ভোগ, লবণ, কষায়, মধুর, তিক্ত, কটূ, অম্ল।
জন্মাষ্টমীর (Janmashtami 2024) ভোরে উঠেই এই ভোগ রান্না তৈরি করা শুরু করে দেওয়া উচিত। শুদ্ধাচারে হলুদ বস্ত্র পরে এই ভোগ রান্না করা ভাল। অনেকে এই সময় মুখে কাপড় বেঁধে এই রান্না করেন। ছাপান্ন ভোগে শস্য, ফল, শুকনো ফল, মিষ্টি, পানীয়, নোনতা, আচার প্রভৃতিও নিবেদন করা হয়। নিয়ম অনুসারে ৫৬ ভোগে (Shri Krishna Chapanna Bhog) থাকে ১৬ ধরনের জলখাবার, ২০টি মিষ্টি এবং ২০ ধরনের শুকনো ফল। যার মধ্যে দুধের তৈরি খাবার সবার আগে পরিবেশন করতে হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।