Hindu Dharma: ঝুলনযাত্রায় শ্রীকৃষ্ণকে হলুদ পোশাক পরালে মিলবে বিশেষ শুভ ফল, বলছেন হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রবিদরা
প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মের (Hindu Dharma) অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব হল ঝুলন যাত্রা (Jhulan Yatra 2024)। এই উৎসব প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে পালিত হয়। ইংরেজি মাস হিসেবে দেখলে জুলাই-অগাস্টের মধ্যেই পড়ে ঝুলন যাত্রা। কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব মনে করা হয় ঝুলন যাত্রাকে। ঝুলন উৎসব পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয় তাই একে শ্রাবণী পূর্ণিমাও বলা হয়। শ্রাবণ মাসের শুক্লা পক্ষের একাদশী তিথি থেকে রাখিপূর্ণিমা — এই পাঁচ দিন ধরে ঝুলনযাত্রা পালন করা হয়। দোলযাত্রা এবং জন্মাষ্টমীর মতোই কৃষ্ণ ভক্তরা এই উৎসবে প্রভুর বন্দনায় মেতে ওঠেন। ২০২৪ সালের ঝুলন যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ৩১ শ্রাবণ শুক্রবার। ইংরেজি তারিখ হিসেবে ১৬ অগাস্ট।
দেশজুড়েই পালিত হয় এই উৎসব (Jhulan Yatra 2024)। এর মধ্যে মথুরা, বৃন্দাবন, পুরী ও মায়াপুর- ঝুলন যাত্রার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। ঝুলন যাত্রাকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের পা পড়ে মথুরা-বৃন্দাবন-পুরী-মায়াপুরে। বৃন্দাবনের মধ্যে শ্রী রূপ-সনাতন গৌড়ীয় মঠ, বাঁকেবিহারী মন্দির এবং রাধারমণ মন্দির, মথুরার দ্বারকাধীশ মন্দির, পুরীর গৌড়ীয় মঠ, ইস্কন মন্দির, গোবর্ধন পীঠ, শ্রী রাধা কান্ত মঠ, শ্রী জগন্নাথ বল্লভ মঠ এবং মায়াপুরের ইসকন প্রভৃতি স্থানে এই উৎসব অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। দোলনায় অধিষ্ঠিত করা হয় রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। ভক্তরা কৃষ্ণ বন্দনায় মেতে ওঠেন। তবে শুধুমাত্র মন্দিরেই নয়, এর পাশাপাশি হিন্দু (Hindu Dharma) বাড়িগুলিতেও রাধাকৃষ্ণের ভক্তরা, এই উৎসব পালন করেন। দুই মূর্তিকে সাজিয়ে পুজো করা হয়। প্রতি পাড়াতেই হিন্দু বালক-বালিকারা এদিন রাধাকৃষ্ণের বেশে সেজে ওঠে।
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে শুধুমাত্র মায়াপুরই নয়, এর পাশাপাশি নবদ্বীপ ও শান্তিপুরেও ঝুলনযাত্রা বড় করেই পালিত হয়। ঝুলন যাত্রায় (Jhulan Yatra 2024) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকাল থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত পৌরাণিক ঘটনাগুলিকে পুতুল দিয়ে সাজানো হয়। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে, ঝুলন উৎসবে রাধার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকে দোলনায় অধিষ্ঠিত করলে ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। কলকাতার বরানগরের পাটবাড়ি আশ্রম ও বউ বাজারের বিখ্যাত রামকানাই অধিকারীর বাড়িতে ঝুলনযাত্রা উৎসব দেখার জন্য প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। হিন্দু শাস্ত্রবিদরা বলছেন, ঝুলন যাত্রার বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণকে হলুদ রঙের বস্ত্র পরিয়ে, হলুদ মিষ্টি, হলুদ ফল, হলুদ ফুল সহযোগে পুজো করলে বিশেষ সুফল মেলে। এর পাশাপাশি ঝুলন যাত্রার উৎসবে ময়ূরের পালক কিনে তা ভগবানের পাশে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি শুভ ফল পাওয়া যায়।
হিন্দু শাস্ত্রবিদরা বলছেন, যুগ যুগ ধরেই ঝুলন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বৃন্দাবনে থাকাকালীন তিনি নানা লীলা করেন। কিশোর শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানির প্রেমের অংশই হল ঝুলন যাত্রা উৎসব।
এই নিয়ে একটি কাহিনীও বৈষ্ণবদের শাস্ত্র অনুযায়ী প্রচলিত রয়েছে। একবার ব্রজের গোপীরা সেজেগুজে কুঞ্জবনে এসেছিলেন, সেখানে তাঁরা রাধা ও কৃষ্ণকে দোলনায় দোল খাওয়াবেন বলে সমবেত হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সেদিন রাধাকে নিজের হাতে সাজিয়েছিলেন। বৈষ্ণব শাস্ত্র অনুযায়ী, ঐদিন গোপীরা কোনওভাবেই বুঝতে পারছিলেন না, কোনটা রাধা আর কোনটা কৃষ্ণ! দুজনকেই তাঁরা শ্রীকৃষ্ণ হিসেবে দেখতে পাচ্ছিলেন আবার কখনও দুজনকেই রাধা হিসেবে দেখছিলেন। এভাবেই তাঁরা শ্রীকৃষ্ণকে রাধা মনে করে তাঁকেই দোলনার কাছে নিয়ে যান। রাধা ভেবে গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন যে, তাঁর চেহারা এমন পুরুষের মতো কীভাবে হল? কথিত আছে, সেসময় শ্রীকৃষ্ণ রাধার কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন যে, তাঁর ওপর মন্ত্রপূত জল ফেলে শ্রীকৃষ্ণ এরকম পুরুষালী চেহারা করে দিয়েছেন, তিনি আসলে রাধা। বৈষ্ণব শাস্ত্র মতে, এরপরেই গোপীদের একে একে আড়ালে নিয়ে যেতে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁদের বোঝাতে থাকেন, তিনি রাধা নন। আবার যোগমায়া বলে গোপীদের সেসব কথা তিনি ভুলিয়েও দেন। এরপরে জানা যায়, রাধা গোপীদের শ্রীকৃষ্ণের (Jhulan Yatra 2024) ছলনা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। গোপীদের ভুল ভেঙেছিল এর ফলে। তারপর একে একে সমস্ত সখীরা, রাধাকৃষ্ণকে দোলনায় বসিয়ে দোল খাইয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু ঝুলনযাত্রা। সাধারণভাবে ঝুলনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দোল খাওয়ানোর রীতি রয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।