সিউড়ির মালঞ্চ ক্লাবের পুজো কেন সবার থেকে আলাদা? জানেন কি?
সিউড়িতে এভাবেই হয়ে আসছে ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দুর্গাপুজোর আমেজ শেষ হতে না হতেই সামনে দীপান্বিতা অমাবস্যা আর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মধ্যে একটি কালীপুজো (Kali Puja 2023)। এই সময় কয়েকটা দিন গোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষ রঙিন আলোয় সেজে ওঠে। সাধারণ মানুষের কাছে এটি যেমন একটি আনন্দোৎসব, পাশাপাশি সাধকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে একটি অন্য রকম কালীপুজোর কথা জানব, যেটি বীরভূম জেলার সিউড়ি শহরে অবস্থিত মালঞ্চ ক্লাব নামে পরিচিত।
কেন এই মালঞ্চ ক্লাবের পুজো আলাদা?
প্রত্যেক বছর চিরাচরিত কালীমূর্তির পরিবর্তে এখানে দেখা যায় হিন্দু পুরাণের কোণে লুকিয়ে থাকা অজানা ও ভিন্ন দেবীদের। এখানে থাকে না কোনও চিরাচরিত কালী মূর্তি। আর এই বিষয়টিই সব ক্লাবের পুজোর থেকে এটিকে আলাদা ও আকর্ষণীয় করে তোলে। এর সঙ্গে প্রত্যেক বছর যে মূর্তি পুজো হয় (Kali Puja 2023), সেই মূর্তির সম্বন্ধে মানুষকে অবগত করার জন্য থাকে সেই দেবীর পরিচয় পত্রিকা। এই বিষয়টির পিছনে আছে এক ইতিহাস।
প্রত্যেক বছর ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি
সিউড়ি শহরের মালঞ্চ ক্লাবের নিকটবর্তী বাসিন্দাদের কাছে থেকে জানা যায়, সম্ভবত ৭০ এর দশকের শুরু থেকে এই ধরনের পরীক্ষামূলক কাজের সূচনা ঘটে, কালীমাতার বিভিন্ন রূপ নিয়ে প্রত্যেক বছর ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি স্থাপন করা হত (Kali Puja 2023)। যা দেখতে বহু দূর দূরান্তের মানুষ ভিড় করত। আর এই ধরনের মূর্তি স্থাপনের পিছনে যাঁর উদ্যোগ ছিল, তিনি অর্ণব মজুমদার। কোনও বার কালীর দশ মাথা ও দশ হাত যুক্ত মূর্তি, আবার কোনও বার ভয়ংকর উগ্রচণ্ডী মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু হয়। এছাড়াও আর কিছু রূপ যেমন মধুকৈটভবধ, ব্রহ্মসরস্বতী, কামেশ্বরী, উগ্রতারা ইত্যাদির মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
কিন্তু কেন এমন রীতি?
১৯৬০ সালে এই মালঞ্চ ক্লাবের পুজো শুরু হয়। সিউড়ির ইতিহাস গবেষক অর্ণব মজুমদার নানা পৌরাণিক বই, নথি, বৌদ্ধতন্ত্র চর্চা করে কালীর বিভিন্ন রূপ সবার সামনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর পর পুরাণের বিভিন্ন শ্লোক থেকে কল্পনা করে দেবীর বিভিন্ন রকম কাল্পনিক রূপের মূর্তির ছবি কাগজে অঙ্কন করে সেটি মৃতশিল্পীর কাছে পাঠাতেন। পরে সেই মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু হত। প্রায় ৩০ বছর তিনি আলাদা আলাদা মূর্তি সামনে নিয়ে এসে মানুষকে অবাক করে দিয়েছিলেন (Kali Puja 2023)। এখনও একই রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এই মালঞ্চ ক্লাবে ভিড় করতেন। প্রত্যেক বছর যে মূর্তি স্থাপন করা হয়, সেই মূর্তিটি সম্পর্কে মানুষকে জানানোর জন্য একটি লিফলেটে সেই দেবীর সম্বন্ধে সমস্ত নথি ছাপানো হয়ে থাকে। এই বছর দেবীর যে রূপটি পূজিত হবে, সেটি কৌমরী মাতা নামে পরিচিত। ক্লাবের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, এক সময় রেডিওতে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই মালঞ্চ ক্লাবের পুজো প্রচার করা হত। প্রত্যেক বছর মানুষ অপেক্ষা করে থাকতেন দেবীর নতুন রূপের দর্শন পাওয়ার জন্য।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের , Twitter এবং Google News পেজ।