Firingi Kalibari: লোককথা থেকে রূপোলি পর্দায় বার বার উঠে এসেছে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কথা, জানুন ইতিহাস
ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি একটি চাঁদনি স্থাপত্যের মন্দির, এই মন্দিরের কালী মূর্তিটি মাটির তৈরি (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লোককথা থেকে রূপোলি পর্দায় বার বার উঠে এসেছে এই মন্দিরের কথা। কথিত আছে, এই মন্দিরে বসে গান গাইতেন অ্যান্টনি কবিয়াল। ভিনদেশি ভক্ত কবিয়ালের নামেই পরিচিত পেয়েছে মন্দির। যদিও অনেকে একথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, ফিরিঙ্গি পাড়ার কাছাকাছি হওয়াতেই নাম হয়েছে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি (Kali Puja 2024)। নতুবা এই কালীবাড়ি বহু প্রাচীন।
২৪৪, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিট, ৭০০০১২। বউবাজার থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে যে রাস্তা গিয়েছে, সেই রাস্তার ডান দিকে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি। এক সময় এই অঞ্চলটি ছিল শ্মশান। হোগলাপাতার একটি ঘরে ছিল শিবের অবস্থান। সামনে ছিল গঙ্গা থেকে আসা একটা খাল। কালীবাড়ির ইতিহাস অনুযায়ী, ১৪৩৭ সনে ভাগীরথী নদীর তীরে জঙ্গলের মধ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল শিব ও কালী বিগ্রহের। মূলত মন্দিরটি প্রথমে ছিল একটি শিবমন্দির। ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির (Firingi Kalibari) সঠিক প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে জানা যায় না। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মন্দিরটি ৫০০ বছরের পুরনো।
জানা যায়, ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত এই মন্দিরের পূজারি ছিলেন নিঃসন্তান শ্রীমন্ত পণ্ডিত। কালীমন্দির ও দেবীমূর্তি সর্বপ্রথম কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কেউই তা জানেন না। কথিত আছে, এই শিবমন্দিরে কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি আসতেন। একদিন এখানেই প্রতিষ্ঠিত হল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির সিদ্ধেশ্বরী কালী। পর্তুগিজ অ্যান্টনি মায়ের পুজোর দায়িত্ব দিলেন শ্রীমন্ত পণ্ডিতকে। ১৮৮০ সালে শশীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০ টাকার বিনিময় এই দেবোত্তর সম্পত্তি হাতে পান। সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এখনও এই ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সেবায়েত।
ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি একটি চাঁদনি স্থাপত্যের মন্দির। এই মন্দিরের কালী মূর্তিটি মাটির তৈরি। বিগ্রহটির উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট। বিগ্রহটি সবসনা। ত্রিনয়নী সুদর্শনা। মন্দির সংলগ্ন শিবের মন্দিরটি আটচালা। কালীমূর্তি ছাড়াও মন্দিরে আছে শীতলা, মনসা, দুর্গা, শিব ও নারায়ণের মূর্তি। সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মূর্তিটি দেখার মতো। চোখে পড়ে দেবীর রুপোর মুকুটটি। ত্রিনয়নে কোনও উগ্রতা নেই। নানা অলংকারে দেবী সজ্জিতা। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন-সব ধর্মের মানুষ দেবীকে প্রণাম করেন, জানান তাঁদের অন্তরের কথা।
মন্দিরে প্রতি অমাবস্যায় কালীপুজো ও প্রতি পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পুজো হয়। প্রতিদিন মন্দির রাত ন’টায় বন্ধ হলেও দীপান্বিতা কালীপুজোর (Kali Puja 2024) দিন যতক্ষণ অমাবস্যা থাকবে মন্দির খোলা থাকবে। প্রতি বছর কালীপুজোর আগে মায়ের অঙ্গরাগ হয়। কালীপুজোর দিন মায়ের ভোগে থাকে গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, দু’রকমের তরকারি, পোলাও, চাটনি, পায়েস। এছাড়া থাকে দই, মিষ্টি। দেবীকে দেওয়া হয় নিরামিষ ভোগ। এখনও এখানে পুজো হয় সম্পূর্ণ বৈদিক মতে। একদা পশুবলি হলেও এখন আর তা হয় না। এখন মন্দিরের ছয় শরিক। সেই অনুযায়ী পালা পড়ে। এ বছর যাবতীয় আচার মেনেই কালীপুজো সম্পন্ন হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।