Dayamayee kalibari: দয়াময়ী মা জাগ্রতা বলে সবাই বিশ্বাস করেন, কালীপুজোয় ভোগ রান্না করা হয় হাজার চার-পাঁচেক লোকের!
বহু মানুষের সমাগম হয় এই দয়াময়ী কালীবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণেন্দু হোতা মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন সয়দাবাদে শিবমন্দির সহ একটি কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এই মন্দিরের গর্ভগৃহে কোনও রকম বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানো হয় না। এখানে প্রদীপের আলো এবং মোমবাতি জ্বালিয়েই সারা বছর মায়ের পুজো (Kali Puja 2024) হয়। মুর্শিদাবাদ জেলায় চারচালা বৃহত্তম মন্দির বলে এই দয়াময়ী কালীবাড়িকেই মানুষ জানে। কিন্তু এই কৃষ্ণেন্দু হোতা কে? জানা যায়, তিনি কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নায়েক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সাধকও। এই মন্দির এবং মায়ের মূর্তি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। দয়াময়ী মন্দিরের (Dayamayee kalibari) সামনের দালানমন্দিরে গ্রহরাজের পুজো হয়। দয়াময়ী মা জাগ্রতা বলে সবাই বিশ্বাস করেন। কৃষ্ণেন্দু হোতার বাড়ি ছিল মায়ের মন্দিরের পিছনে। তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে মায়ের দর্শন পান। শোনা যায়, সে সময় সেখানে মায়ের ছাল রেখে গিয়েছিলেন। তিনি তার পর মাকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে কোনও রকম ঘটে পুজো হয় না। কারণ মা এখানে তাঁর দেহের অংশ ছেড়ে রেখে গিয়েছেন। সে কারণে এখানে মায়ের পুজো হয় দেহে। অমাবস্যার দিন ১২ মাসেই তাঁর পুজো এখানে হয়। বিশেষ আমাবস্যার পুজো হয় কার্তিক মাসে। এই সময় বহু মানুষের সমাগম হয় এই দয়াময়ী কালীবাড়িতে এবং হাজার চার-পাঁচেক লোকের ভোগ রান্না করা হয়।
এ বিষয়ে দয়াময়ী কালীবাড়ির পুরোহিত বলেন, যতক্ষণ মা শিবের উপর দণ্ডায়মান আছেন, ততক্ষণ শক্তি। যেই মা নেমে যাবেন, আর আমাদের শক্তি থাকবে না। এই দয়াময়ী কালীবাড়ির মূর্তি নিয়ে নানান ধরনের ঘটনা উল্লেখিত আছে। কথিত আছে, একবার জহুরা মা এসে সাধনার জন্য জবরদস্তি করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, মায়ের আসনে বসে সাধনা করবেন। কিন্তু আমার দাদু বলেছিলেন, "আপনি অবশ্যই সাধনা করতে পারবেন। কিন্তু তার আগে আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।" কী সেই পরীক্ষা? "আমি একটা মালা ওখানে রেখে দিয়ে আসব। সেই মালাটি কোনও রকম স্পর্শ না করে কারও সহযোগিতা না নিয়ে মায়ের গলায় পরাতে হবে।" এই কথা শোনার পর জহুরা মা বলেন, এটা কখনও সম্ভব? তার উত্তরে তিনি বলেন, সম্ভব এবং তিনি তা করেও দেখিয়েছেন। তাঁর দাবি, দাদু বেশ কয়েকবার মায়ের দর্শন পেয়েছেন।
তাঁর মুখ থেকে শোনা যাক তেমনই কিছু ঘটনা। তিনি বলে চলেন, "দুপুরবেলায় বাচ্চারা এখানে খেলতে আসত। সে সময় বন্যা হওয়ার কারণে মন্দিরের নীচের চত্বর থেকে জলে পরিপূর্ণ ছিল।। তারা খেলতে এসে দেখে, মন্দিরের সামনে একজন মাথা নিচু করে পড়ে আছে। তার চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাচ্চারা ওই দেখে ভয় পেয়ে ছুটে গিয়ে দাদুকে সমস্ত কথা জানায়। তখন দাদু ছুটে এসে দেখে মায়ের সেই রূপ।" এই দয়াময়ী কালীবাড়ির (Kali Puja 2024) মাকে নিয়ে নানান ধরনের ঘটনা আছে। শোনা যাক আরও একটি ঘটনা। তিনি বুলেন, "দাদুর বন্ধু ঠাকুর-দেবতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। দাদু ওই বন্ধুকে বলেছিলেন, মন্দিরের এই ঘরে তুই যদি থাকতে পারিস এক রাত, তোকে ৫ টাকা দেওয়া হবে এবং পেট ভর্তি রসগোল্লা খাওয়ানো হবে। এই কথা শুনে সেই বন্ধু ওই ঘরে রাতে থাকার জন্য ঢোকেন। দু-দিন পর সেই বন্ধু বাড়িতে আসেন এবং দাদুকে বলেন, আমি আর জীবনে কোনও দিন মন্দিরে রাতের বেলায় প্রবেশ করব না। কী হয়েছে জানতে চাইলে ওই বন্ধু বলেন, আমি যখনই শুতে যাচ্ছি, তখনই দেখা যাচ্ছে কেউ নূপুর পরে আমার দরজা পর্যন্ত এসে চলে যাচ্ছে। কিন্তু দরজা খুলে দেখা যাচ্ছে, কেউ নাই। এই রকম ঘটনা তিন-চার বার হওয়ার পর ওই বন্ধু নিজেকে সামলাতে না পেরে পাশে কাঠের দরজা টপকে পালিয়ে যান। জানিয়ে দিয়ে যান, তিনি আর জীবনে কোনও দিন এই মন্দিরে থাকবেন না। এই কারণে রাত নটা-দশটার পর এই মন্দিরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
তিনি জানান, এখানে আগাগোড়া আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। এখানে মায়ের ভোগে মাছ প্রত্যেক দিন লাগবে। মাছবিহীন কখনও ভোগ হবে না। এখানে আমাবস্যার দিন মায়ের বিশেষ দুটি পছন্দের মাছ বোয়াল এবং শোল ভোগে দেওয়া হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।