Tarapith: কৌশিকী অমাবস্যায় দ্বারকা নদীতে স্নান করলে মিলবে পুণ্যলাভ…
তারাপীঠের মা তারা। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মে (Hinduism) বিভিন্ন তিথিতে দেবী কালী মায়ের (Goddess Kali) নানা রূপের আরধানা করা হয়ে থাকে। শক্তি রূপে দেবীর আরাধনা বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ভাদ্র মাসের শুরুতেই যে অমাবস্যা পড়ে, তাই কৌশিকী অমাবস্যা (Kaushiki Amavasya) রূপে পালন করা হয়। এদিন ভক্তরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে মায়ের পুজো করে থাকেন।
এই বছর কৌশিকী অমাবস্যা (Kaushiki Amavasya) পড়েছে ১ সেপ্টেম্বর, রবিবার (বাংলা তারিখ ১৫ ভাদ্র)। ২ সেপ্টেম্বর সোমবার (বাংলা তারিখ ১৬ ভাদ্র) অহরাত্র থাকবে এই কৌশিকী অমাবস্যা। ছাড়বে ৩ সেপ্টেম্বর (বাংলা তারিখ ১৭ ভাদ্র) সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে।
এই কৌশিকী অমাবস্যার (Kaushiki Amavasya) সঙ্গে জড়িত আছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। মার্কণ্ডেয় পুরাণ সূত্র থেকে জানা যায়, মহাপরাক্রমী দৈত্য ভ্রাতৃদ্বয় শুম্ভ ও নিশুম্ভ ব্রহ্মাদেবের পরম ভক্ত ছিলেন। সাধনায় তুষ্ট হয়ে ভগবান ব্রহ্মা (Lord Brahma) তাঁদের বর দিয়ে বলেন, “তোমরা ত্রিভুবনে অবধ্য হবে। তবে কখনও যদি কোনও অযোনিসম্ভবা নারীর সঙ্গে তোমাদের সংঘাত ঘটে তবে ওই নারীর দ্বারাই তোমরা বধ হবে। তাই এই কথাগুলি স্মরণে রেখো।” ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে শুম্ভ-নিশুম্ভ ভাবতে শুরু করেন, ত্রিভুবনে কোনও নারীই মাতৃগর্ভজাত না হয় জন্মলাভ করতে পারবেন না, তাই আমরা অমর। আমাদের মৃত্যু ভয় নেই। এই অসুরদ্বয় প্রথমেই স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করেন। দেবকুল তখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে শুম্ভ-নিশুম্ভর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহাদেবের শরণাপন্ন হন।
মহাদেব (Lord Shiva) ঠাট্টার ছলে ঘোর কৃষ্ণবর্ণা পার্বতীকে (Goddess Parvati) ডেকে বলেন, ‘হে কালীকে, তুমি এই বিপদ থেকে দেবতাদের রক্ষা করো।’ জনসমক্ষে পতিমুখে কালীকে সম্বোধন শুনে দেবী পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তৎক্ষণাৎ মানস সরোবরে গিয়ে নিজেকে অভিষিক্ত করে নিজ গাত্রের সকল কৃষ্ণবর্ণ কোষগুলিকে পরিত্যাগ করে এক অসামান্যা সুবর্ণ রূপ ধারণ করে নিজেকে প্রকট করেন। অপর দিকে, পার্বতীর দেহ থেকে ফেলে দেওয়া কোষ থেকে আর এক দেবী আবির্ভুত হন। সেই দেবীর নাম কৌশিকী (Kaushiki Amavasya)। দেবী কৌশিকীর আবির্ভাবের পর দেবী ভগবতী কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন এবং দেবী কালিকা বা কালী নামে পরিচয় লাভ করেন।
দেবী কৌশিকী (Kaushiki Amavasya) অযোনিসম্ভবা ছিলেন, সেই কারণে কৌশিকী দেবীই শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে দেবী কৌশিকীর শরীর থেকে হাজারও যোদ্ধা সৃষ্ট হয় এবং তারাই সমগ্র অসুরকুলকে ধ্বংস করে দেন। এই ঘটনাটি ভাদ্র মাসের প্রথম অমাবস্যায় ঘটেছিল। পরবর্তীকালে এটি কৌশিকী অমাবস্যা নামে ধরাধামে খ্যাত হয়।
ভাদ্র মাসের এই কৌশিকী অমাবস্যা তিথি যে সকল মানুষ ধর্ম, তন্ত্র, মন্ত্র, সাধনা এবং ঈশ্বর বিশ্বাসী তাঁদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। কৌশিকী অমাবস্যার সঙ্গে তারাপীঠের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। বিশ্বাস, তন্ত্রমত ও শাস্ত্র মতে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেবীর পুজো করলে অশুভ শক্তির বিনাস ঘটে। তন্ত্রশাস্ত্র মতে গুপ্ত সাধনায় এই দিনে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। কৌশিকী অমাবস্যার পবিত্র লগ্নে তারাপীঠ মন্দিরে, বিশেষ উপাচারে পুজো করা হয় তারা মায়ের৷ তন্ত্র মতে, এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়।
কথিত আছে, ওই অমাবস্যা তিথিতেই বামাক্ষ্যাপাকে দেবী কৌশিকী ‘তারা’ নামে তারাপীঠ (Tarapith) মহাশ্মশানে দর্শন দিয়েছিলেন। অমাবস্যার এই বিশেষ তিথিতে সাধক বামাক্ষ্যাপা (Sadhak Byamakhyapa) তারাপীঠের মহাশ্মশানের শিমূল গাছের তলায় মা তারার (Tara Maa) আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি সূত্রে শোনা যায়, দেবী কৌশিকী ‘তারা’ নামে ওই বিশেষ অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে বিরাজিতা থাকেন। সেই কারণে তারাপীঠ মহাশ্মশানে ওই দিন লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাবেশ ঘটে। ভক্তগণের বিশ্বাস, ওই দিন মাকে পূজা করলে ভক্তগণের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
আরও পড়ুনঃ ‘বিষ্ণু সহস্রনাম’ পাঠে চারপাশে তৈরি হয় ইতিবাচক শক্তির বলয়, বদলে যায় জীবন
দেবী কৌশিকী এবং তারা মা অভিন্ন বলে বিশ্বাস ভক্তদের। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই দিন মা তারার পুজো দিলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয়। এই স্নান কুম্ভস্নানের সমতুল্য। বিশেষ এই তিথিতে তারাপীঠে তারা মায়ের পুজো করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। এই বিশ্বাসে আজও ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ওই দিনটিতে তারাপীঠে ছুটে আসেন। কৌশিকী অমাবস্যার (Kaushiki Amavasya) দিন বাড়ি রাখুন পরিচ্ছন্ন। পুরনো ছেঁড়া কোনও জামাকাপড় থাকলে তা ফেলে দিন। সন্ধ্যের পর বাড়ির তুলসী মঞ্চে তিলের প্রদীপ জ্বালালে তা সংসারে কোনও নেতিবাচক শক্তিকে প্রবেশ করতে দেয় না। এই তিথি কেবলমাত্র হিন্দুশাস্ত্রে নয়, বৌদ্ধ শাস্ত্রেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।