Kali Puja: আসল নাম কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত, জনপ্রিয় হয়েছিলেন ফাটাকেষ্ট নামে, কেমন ছিল তাঁর কালীপুজো?
ফাটাকেষ্টর কালীপুজোয় দেবী প্রতিমা (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’ সিনেমা। এই ফিল্মে মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ-‘‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে’’—আজও সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। জানেন, কে ছিলেন এই ফাটাকেষ্ট (Fatakesto)? এর উত্তর জানতে আমাদের যেতে হবে সাতের দশকে নকশাল আন্দোলনে উত্তাল কলকাতায়। প্রতিদিনই তখন হত্যালীলা চলছে, সারা রাজ্যের অলিগলি থেকে কলকাতার রাজপথে তখন রক্তের দাগ। কোথাও বৃষ্টির ফোঁটার মতো গুলিবর্ষণ হয়, তো কোথাও মুড়ি-মুড়কির মতো বোমাবাজি চলে। কলেজ স্ট্রিটের দেওয়ালে তখন নকশালদের দেওয়াল লিখন-'ফাটাকেষ্টর (Fatakesto) মুণ্ড চাই'। তৎকালীন সময় থেকেই জনশ্রুতি রয়েছে, 'নকশালদের ছোড়া বোমা নাকি তাঁর পায়ের কাছে পড়েও ফাটেনি, ওই বোমা তিনি উল্টোদিকে শট মারেন ঠিক ফুটবলের ধাঁচে'। তিনি যে ফাটাকেষ্ট। বোমা নিয়ে ফুটবল খেলা তো তাঁরই সাজে। এখন তিনি নেই, তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কালীপুজো আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। ফি বছর প্রচুর মানুষ ভিড় করেন ফাটাকেষ্টর কালীপুজো দেখতে।
এলাকার মসিহা ফাটাকেষ্ট (Fatakesto)
এলাকার মসিহা বলুন অথবা রবিনহুড। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত 'শাহেনশা' চরিত্র তাঁর সঙ্গে অনেকাংশে মেলে, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর ফ্যানদের। কলেজ স্ট্রিটের রাস্তা ধরে এলাকার মেয়েরা 'নাইট শো' দেখে নিশ্চিন্তে রাত্রিতে একাকী ফিরতে পারতেন, যখন দেখতেন, তাঁদের পাহারার জন্য 'ফাটাকেষ্ট' (Fatakesto) বারোয়ারি মন্দিরের মেঝেতে তোয়ালে বিছিয়ে রাত্রিযাপন করছেন। কলেজ স্ট্রিটের এই 'মসিহা'-র এমন অদ্ভূত নামকরণের কারণ তাঁর মুখমণ্ডল জুড়ে থাকা বসন্তের দাগ বলেও মনে করেন অনেকে।
আসল নাম কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। 'নব যুবক সঙ্ঘ'-এর কালী পুজোর (Kali Puja) উদ্যোক্তা। নকশাল আমলে কলেজ স্ট্রিটে দুই মস্তানের সঙ্গে ব্যাপক ছুরির লড়াই হয় 'কালীভক্ত' কৃষ্ণচন্দ্র দত্তের। লড়াই জিতলেও শরীরে ব্যাপক ছুরিকাঘাতের কারণে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাঁর। ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সুস্থ হয়ে পাড়ায় ফিরলে তাঁর নাম হয় 'ফাটাকেষ্ট'। ছোটোখাট চেহারা, সুঠাম দেহের অধিকারী ফাটাকেষ্টর কলেজ স্ট্রিটের কালীপুজো প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে সেই ছয়ের দশক থেকেই। কালীমায়ের ভক্ত কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্ট (Kali Puja) 'তন-মন-ধন' দিয়ে মায়ের আরাধনা করতেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পুজোর উদ্বোধন করতেন। সারা এলাকা জুড়ে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা থাকত, বিভিন্ন থিম দ্বারা সাজানো হত মায়ের মণ্ডপ। বিশালকায় মায়ের মূর্তির দর্শন করতে কাতারে কাতারে মানুষজন আসতেন।
প্রচলিত বিশ্বাস মতে, নব যুবক সঙ্ঘের কালীপুজোয় একবার এক মহিলার ভর হয় কালী মূর্তির সামনে। ওই মহিলা তখন বলতে থাকেন 'ছোট গ্লাসের জলে আমার চেষ্টা মেটে না, আমাকে বড় গ্লাসে জল দিতে পারিস না তোরা'? তখন দেখা গেল মাতৃ প্রতিমার নৈবেদ্যতে রাখা জলের পাত্রটি সত্যিই ছোট। এই ঘটনার পরে বড় গ্লাসে দেবী কালীকে জলদানের রীতি রয়েছে ফাটাকেষ্টর (Fatakesto) কালীপুজোতে।
কালীপুজোর প্রাক মুহূর্তে একবার পরিচালক দুলাল গুহর ছবির কাজে কলকাতায় এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন, সদ্য মুক্তি পেয়েছিল "নমক হালাল" সিনেমা। বাচ্চা থেকে বুড়ো অবধি তখন মোহাচ্ছন্ন নমক হালালের সংলাপে। ফাটাকেষ্টর ঘনিষ্ঠ ছিলেন পরিচালক দুলাল গুহ। মূলত তাঁরই অনুরোধে সেবার নব যুবক সঙ্ঘের কালীপুজো উদ্বোধন করেন অমিতাভ বচ্চন। মঞ্চ বাঁধা হয় তাঁর জন্য। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে তখন অমিতাভ বচ্চন বলছেন সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত 'নমক হালাল' সিনেমার একের পর এক বিখ্যাত সংলাপ। শুধু তাই নয়, ফাটাকেষ্টর কালীপুজোতে তিনি মায়ের জন্য গড়িয়ে দিয়েছিলেন হীরের নাকছাবি।
দেশ-বিদেশ খ্যাত অসংখ্য সেলেব্রিটি যুক্ত থেকেছেন ফাটাকেষ্টর কালীপুজোর উদ্বোধনে। এই তালিকায় যে যে নামগুলো ছিল একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। সিনেমা জগতের তারকা বিনোদ খান্না, শত্রুঘ্ন সিনহা থেকে সঙ্গীত জগতের হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, রাহুল দেব বর্মন, আশা ভোঁসলে, ক্রীড়া জগতের বিশ্ববিখ্যাত গোলকিপার লেভ ইয়াসিন-প্রতি বছর কালীপুজো উদ্বোধনে চাঁদের হাট বসত নব যুবক সঙ্ঘে। প্রয়াণের আগের বছর অবধি ওই পুজোতে এসেছেন স্বয়ং উত্তম কুমার অবধি।
১৯৯২ সালে প্রয়াত হন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্ট। কয়েক বছর আগেও তাঁর কালীপুজোর উদ্বোধন করে গিয়েছেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের এই কালীপুজো আজ একটা 'মিথ'। নবযুবক সঙ্ঘের কালীপুজোর জগৎজোড়া খ্যাতির নেপথ্যে ছিল কালী মায়ের ভক্ত, ছোটখাট চেহারার ওই দাপুটে মানুষটি। যাঁর কথায় নাকি এলাকার বাঘে-গরুতে একসঙ্গে জল খেত!
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।