img

Follow us on

Wednesday, Sep 25, 2024

Neel Saraswati Puja: কথিত আছে, দেবী নীল সরস্বতীর আশীর্বাদে জন্ম তারাশঙ্করের, কথাসাহিত্যিক-এর পৈতৃক ভিটের পুজোর কথা জানুন

দুর্গাপূজার পরে শুক্লা চতুর্দশী যা কিনা মা তারার আবির্ভাব তিথি হিসেবে গণ্য হয় , এই তিথিতেই নীল সরস্বতীর পুজো হয় লাভপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে।

img

Neel Saraswati Puja

  2022-10-09 09:45:29

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা', 'গণদেবতা' এর মতো জনপ্রিয় উপন্যাসগুলির লেখক তিনি। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরে তিনিই এ বাংলার অন্যতম প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক। বীরভূম জেলার লাভপুরের এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিক তাঁর 'গণদেবতা' উপন্যাসের জন্য ১৯৬২ সালে পেয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার।  তিনি ছিলেন মা তারার আটটি রূপের অন্যতম রূপ নীল সরস্বতীর (Neel Saraswati Puja) ভক্ত। মা তারা তাঁর গৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাইতো গণদেবতা, ধাত্রীদেবতা, কবি প্রভৃতি উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে মা তারার প্রসঙ্গ। কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (Tarasankar Bandyopadhyay) তখনও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাননি। সে সময় তাঁর গৃহের নীল সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করতেন পুরোহিত গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য।

কথিত আছে, লাভপুরের অদূরে কোতলঘোষা গ্রামের এই পূজারী ব্রাহ্মণ কে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন , "ভচ্চার মশায় , পুরস্কার পাবো তো?" প্রত্যুত্তরে গৌরী বাবু বলেন, "হ্যাঁ , নিশ্চয়ই পাবে।"‌ একথা বলার কিছুদিনের মধ্যেই এই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান। এমনটাই বললেন সুভাষ ভট্টাচার্য‌। গৌরীশঙ্কর বাবুর পুত্র। বর্তমানে কথাসাহিত্যিক-এর গৃহের নীল সরস্বতী (Neel Saraswati Puja) পূজার পুরোহিত। কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গৃহে নীল সরস্বতীর পূজার প্রচলন কবে থেকে? কেনই বা তাঁর গৃহে নীল সরস্বতীর পূজা  শুরু হলো? এর উত্তর জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে অনেকখানি।

আজ থেকে ১২৬ বছর আগে। ১৮৯৭ সাল নাগাদ। তখন লাভপুরের জমিদার ছিলেন হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। সতীপীঠ ফুল্লরা তে এসময় সাধনা করতেন তান্ত্রিক রামজী গোঁসাই ওরফে বলভদ্র পান্ডে। তিনি হরিদাস বাবু ও তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী দেবীকে আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজোর অন্তে শুক্ল চতুর্দশীর রাতে মা তারার আরেক রূপ নীল সরস্বতী (Neel Saraswati Puja) পূজার পরামর্শ দেন। তাঁর কথামতো নীল সরস্বতী পুজো সম্পন্ন করার ঠিক দশমাস পরে ৮ই শ্রাবণ ১৩০৫ সালে জন্ম হয় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মা তারার আশীর্বাদে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, এই বিশ্বাসের জন্যই তাঁর নাম তারাশঙ্কর রাখা হয়‌। তখন থেকেই নীলসরস্বতীর পুজোর প্রচলন হয়, এই কথাসাহিত্যিক এর  গৃহে। দুর্গাপূজার পরে শুক্লা চতুর্দশী যা কিনা মা তারার আবির্ভাব তিথি হিসেবে গণ্য হয় , এই তিথিতেই নীল সরস্বতীর পুজো হয় লাভপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে।

দেবীর গাত্রবর্ণ নীল (Neel Saraswati Puja)। সমগ্র দেহে সাপ জড়ানো। ভীষণ দর্শনা এই দেবীর পায়ের নীচে জটাধারী শবরূপ মহাদেব থাকেন। দেবীর  গলায় মুন্ড মালা, হাতে নরমুন্ড ও পরনে বাঘছাল থাকে। শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে সন্ধ্যায় এই পুজো শুরু হয়, চলে মধ্যরাত্রি অবধি। যজ্ঞও হয়। অন্যতম সতীপীঠ ফুল্লরা তলাতে প্রথমে দেবীর পুজো হয় তারপর কথাসাহিত্যিক এর বাড়িতে পুজো হয়। প্রথমে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে এক মন্দিরে এই পুজো সম্পন্ন হত। যা এলাকায় তারা মায়ের ডাঙ্গা নামেই প্রসিদ্ধ। পরে মন্দির বেহাল হয়ে গেলে, এই পুজো সম্পন্ন হতে থাকে কথাসাহিত্যিক এর পারিবারিক দুর্গা মন্দিরে। কথাসাহিত্যিক এর ভাইপো পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় তারা মায়ের ডাঙ্গায় অবস্থিত মন্দিরটি সংস্কার করেন ২০১৩ সালে। তখন থেকে নীল সরস্বতীর পুজো আবার তারা মায়ের ডাঙ্গায় সম্পন্ন হয়, যেমনটা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মের পরে হতো‌। এ প্রসঙ্গে কথিত আছে, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজনকে এই পুজোতে তখন ফুল্লরা মন্দিরে যেতে দেওয়া হতো না। তখন দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কাছে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপর তাঁদের জন্য তৈরী হয় নবফুল্লরা তলা। যেটি বর্তমান তারাশঙ্কর ভবনের একেবারে পাশেই। লাভপুরের নীল সরস্বতীর পুজো সমগ্র গ্রামের মানুষজনের আস্থা, বিশ্বাস ও ভক্তির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে আজ। আগে এই পুজোতে ছাগলবলি দেওয়া হতো। কিন্তু, এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে তারামায়ের ভোগ হিসেবে খিচুড়ি, লুচি, সুজি থাকে। গ্রামের প্রায় সমস্ত মানুষ জন রাত্রিতে পাত পেড়ে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন।

Tags:

Tarasankar Bandyopadhyay

Neel Saraswati Puja

Neel Saraswati

Lavpur


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর