কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পুজোর নিয়ম অনুসরণ করা হয় সেই তান্ত্রিকের মতোই...
বাঁদিকে মৃণ্ময়ী মাতৃমূর্তি, ডানদিকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বৈদ্যুতিক চুল্লিতে পুড়ছে শবদেহ। পাশেই তন্ত্রমতে পুজো হচ্ছে শ্মশানকালীর (Kali Puja 2023)। ফি বছর কালীপুজোর রাতে এ ছবি দেখা যায় কালীঘাটের কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। এক সময় এখানে দেহ দাহ হত কাঠের চুল্লিতে। পরে হয়েছে বৈদ্যুতিক চুল্লি। চুল্লি জ্বলে প্রায় সারাদিনই। কালীপুজোর রাতেও এর বিরাম থাকে না। এই আবহেই এখানে হয় মাতৃ আরাধনা।
মাতৃমূর্তি করুণাময়ী
কেওড়াতলায় মাতৃমূর্তি করুণাময়ী। ১৬ ফুট উচ্চতার মাতৃমূর্তি লোলজিহ্বা নয়, হাস্যময়ী। অসুর মুণ্ডমালিনী নয়। দেবীর দুই হাত। ডান হাতে নৈবেদ্যরূপী মাংস, অন্য হাতে মদ। অনেকেই এখানে দেবীকে মদ্য মানত করেন। সেই পানপাত্র থেকে মদ্যের একটা অংশ নিয়ে পুরোহিত দেবীর হাতে থাকা পাত্রে রাখেন। বাকিটা প্রসাদ করে তুলে দেওয়া হয় মানতকারীর হাতে। কালীপুজোয় বলিদান সিদ্ধ। তাই বলিদানের রীতি শুরু থেকেই রয়েছে এখানে। ভক্তদের (Kali Puja 2023) মানত করা ছাগ বলি হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, কেওড়াতলার মা কালী কাউকে শূন্য হাতে ফেরান না।
রাতভর চলল পুজো-হোম-বলিদান
এখানে শ্মশানকালী পুজোর একটি ইতিহাস রয়েছে। গভীর জঙ্গলে আকীর্ণ এই এলাকায় এক সময় ছিল শুধুই শ্মশান। মূলত দেহ দাহ করতেই লোকজন আসতেন এখানে। এই জায়গাটিকেই সাধনস্থল হিসেবে বেছে নিলেন জনৈক চন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য ও মতিলাল ভট্টাচার্য। এক অমাবস্যার রাতে এখানে এসে হাজির হন ভিনদেশি এক তান্ত্রিক। হাতে লৌহনির্মিত একটি ছোট্ট কালীমূর্তি। সাধনারত দুই ব্রহ্মণকে তিনি বললেন, “আজকের এই রাত্রির লগ্ন মাতৃপূজার শুভক্ষণ। আমি এখানে দেবীর আরাধনা করতে চাই। আপনারা আমায় সহযোগিতা করুন।” তখনই ব্রাহ্মণরা আয়োজন করলেন মাতৃ আরাধনার। স্থানীয় জনবসতি থেকে জোগাড় হল পুজোর উপকরণ। রাতভর চলল পুজো-হোম-বলিদান। তন্ত্রমতে সাঙ্গ হল দেবী আরাধনা।
আরও পড়ুুন: পুরীর জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের মূল্য একলাফে বেড়ে ৩ গুণ! ভক্তমহলে অসন্তোষ
আকাশে ভোরের আলো ফোটার আগেই দেবীমূর্তি নিয়ে কোথায় যেন চলে গেলেন তান্ত্রিক। তবে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজও হচ্ছে পুজো। যেহেতু তান্ত্রিক তাঁর দেবীমূর্তি নিয়ে চলে গিয়েছেন, তাই এখন মৃণ্ময়ী প্রতিমা গড়ে হয় পুজো। তবে পুজোর নিয়ম অনুসরণ করা হয় সেই তান্ত্রিকের মতোই। জনশ্রুতি এই (Kali Puja 2023) যে, দ্বীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে যখন মায়ের আরাধনা হয়, তখনও জ্বলতে থাকে চিতা। কালীপুজোর রাতে এখানে এলে মনে পড়ে কাজী নজরুল ইসলামের সেই কথা কটি, “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা মা...।”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।