img

Follow us on

Wednesday, Jan 15, 2025

Maha Kumbh Mela 2025: কুম্ভ মেলার সাত-সতেরো, জানেন আখড়া কী, অমৃত স্নানই বা কী?

Amrit Snan: কুম্ভ মেলায় আখড়াগুলির গুরুত্ব জানেন? জানেন অমৃত স্নানের যোগ?...

img

প্রয়াগরাজে চলছে কুম্ভ মেলা। ফাইল ছবি।

  2025-01-14 17:02:09

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মঙ্গল সংক্রান্তির দিন উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে অমৃত স্নান (Amrit Snan) সারলেন কয়েক কোটি পুণ্যার্থী (Maha Kumbh Mela 2025)। সোমবারই শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ ২০২৫। প্রথম শাহি স্নান হল মঙ্গলবার, মকর সংক্রান্তির পবিত্র দিনে। প্রতি ১২ বছর অন্তর হয় পূর্ণকুম্ভ। আর ১৪৪ বছর পর হয় মহাকুম্ভ। এবার সেই যোগ।

সঙ্গমে স্নান

প্রত্যাশিতভাবেই প্রয়াগরাজে গঙ্গা-যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতীর সঙ্গমে স্নান করবেন লাখ লাখ পুণ্যার্থী। কুম্ভস্নানে মোক্ষ লাভ হয় বলে হিন্দুদের বিশ্বাস। তাই কুম্ভমেলায় সাধুদের পাশাপাশি ভিড় করেন সাধারণ মানুষও। এঁদের সিংহভাগই পুণ্যার্থী। দর্শনার্থীও ভিড় করেন অনেকে। কুম্ভে আখড়া বসে। মোট ১৩টি আখড়া রয়েছে। এই আখড়াগুলি আবার তিনটি দলে বিভক্ত। এগুলি হল, সন্ন্যাসী (শৈব), বৈরাগী (বৈষ্ণব) এবং উদাসীন। শৈব আখড়াগুলির মধ্যে রয়েছে মহানির্বাণী, আতাল, নিরঞ্জনী, আনন্দ, ভৈরব, আওহান এবং অগ্নিষ। বৈরাগী আখড়াগুলি হল, নির্মোহী, দিগম্বর আনি এবং নির্বাণী আনি। উদাসীন আখড়া দুটি - উদাসীন আখড়া ও নির্মলা আখড়া।

আখড়ার ভূমিকা

আসুন, আখড়াগুলির সংগঠন, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং কুম্ভমেলায় তাদের মূল ভূমিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই আখাড়াগুলি কুম্ভমেলার (Maha Kumbh Mela 2025) রক্ষক হিসেবে কাজ করে, যেখানে তারা গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান পালন করে এবং পবিত্র ঘটনায় অবদান রাখে, যেমন ‘অমৃত স্নান’। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, আখাড়াগুলি হিন্দু ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের মন্দির এবং পবিত্র স্থানগুলি রক্ষায় সহায়ক ছিল। অষ্টম শতাব্দী থেকে বিভিন্ন আখাড়ার সাধুরা প্রয়াগরাজে জমায়েত হচ্ছেন অমৃত স্নান করতে। নবম শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আখাড়াগুলি একমাসব্যাপী কুম্ভ উৎসবের আয়োজন করত। অমৃত স্নানের ক্রম নির্ধারণ করত। বর্তমানে অমৃত স্নানের ক্রম প্রতিষ্ঠানভুক্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আখাড়াগুলির এখনও একটি প্রাধান্য রয়েছে।

আখড়ার গঠন

আখড়াগুলির শীর্ষে থাকেন একজন মহন্ত বা আচার্য। এঁরা আধ্যাত্মিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বগুলি পালন করেন। আখড়ার মধ্যে বিভিন্ন পদমর্যাদা রয়েছে। এঁদের মধ্যে আখড়ায় উচ্চ পদমর্যাদার সন্ন্যাসী হলেন মহামণ্ডলেশ্বর। তাঁদের প্রভাব এবং কর্তৃত্ব সবচেয়ে বেশি। আখড়াগুলিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নবাগতদের। যা অত্যন্ত কঠোর। প্রশিক্ষণ পর্বে আধ্যাত্মিক অনুশীলন, ধ্যান, ধর্মগ্রন্থ পাঠ, এবং শারীরিক অনুশীলন যেমন ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় কুস্তি এবং মার্শাল আর্টস অনুশীলন। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনুসৃত শৃঙ্খলা শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা উভয়ই অর্জন করে, যার লক্ষ্য আধ্যাত্মিকতা অর্জন।

হিন্দু ধর্মে আখড়ার গুরুত্ব

হিন্দু ধর্মে আখড়ার বিশাল (Amrit Snan) গুরুত্ব রয়েছে বিভিন্ন কারণে। এগুলি হল—

প্রথা সংরক্ষণ: আখড়া প্রাচীন আধ্যাত্মিক প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান এবং শিক্ষা সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা পবিত্র গ্রন্থ, স্তোত্র এবং অভ্যাসের জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দেয় এবং এভাবে তা সংরক্ষণ করে।

আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ: এই প্রতিষ্ঠানগুলি আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানীদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিবেশ দেয়। এখানে তারা কঠোর প্রশিক্ষণ নেয়। এগুলি শৃঙ্খলা, ভক্তি এবং আত্ম-আবিষ্কারের বিকাশ ঘটায়। আধ্যাত্মিক আলোকোজ্জ্বলতা অর্জনের উদ্দেশ্যে সদস্যরা কঠোর জীবনযাপন করেন।

সাংস্কৃতিক রক্ষক: প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, উৎসব এবং তীর্থযাত্রায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আখড়াগুলি হিন্দু সমাজের সাংস্কৃতিক পরিসরে অবদান রাখে। কুম্ভ মেলার মতো অনুষ্ঠানগুলিতে তাদের উপস্থিতি তাদের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক নেতৃস্থানীয় ভূমিকা তুলে ধরে।

যুদ্ধকালীন ঐতিহ্য: ঐতিহাসিকভাবে, আখড়াগুলি যুদ্ধ প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আখড়ার সদস্যদের ধর্মরক্ষা এবং পবিত্র স্থানগুলির সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হত। এই যুদ্ধকালীন ঐতিহ্য এখনও কিছু আখড়ায় দেখা যায়, বিশেষ করে নাগা সাধুরা — যারা তাদের যোদ্ধা-ভাবমূর্তির জন্যই পরিচিত।

সামাজিক প্রভাব: আখাড়াগুলি সামাজিক এবং দানশীল কর্মকাণ্ডে জড়িত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নানা প্রয়োজনে সাহায্য দিয়ে থাকে।

‘অমৃত স্নান’ ১৩টি আখড়ার (Maha Kumbh Mela 2025) অংশগ্রহণ দিয়ে শুরু হয়। প্রতিটি আখড়া তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রম এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পবিত্র স্নান সারেন। এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সংগঠিত হয়, যেখানে প্রশাসন সময়সূচি সমন্বয় করে নিশ্চিত করে যে প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে (Amrit Snan)।

কুম্ভমেলায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আখড়া হল-

জুনা আখড়া: এটি ১৩টি আখড়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। জুনা আখড়া শৈবধর্মের দশনামী সাম্প্রদায়ে বিশ্বাসী, যা আদি শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এঁরা ভগবান দত্তাত্রেয়র পুজো করেন। কিন্নর আখড়া (তৃতীয় লিঙ্গ আখাড়া) জুনা আখড়ারই একটি অংশ। জুনা আখড়ার অনুসারীরা প্রধানত শৈব, যাঁরা ভগবান শিবের প্রতি নিবেদিত। এঁদের মধ্যে অনেক নাগাও আছেন। জুনা আখড়া কুম্ভ মেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আখড়ার সাধুরা তপস্যা ও ত্যাগের জন্য পরিচিত। আখড়াটির একটি সমৃদ্ধশালী আধ্যাত্মিক ও মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের ঐতিহ্য রয়েছে। এর প্রধান হলেন আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী অভদেশনন্দ।

নিরঞ্জনী আখড়া: দ্বিতীয় বৃহত্তম আখড়া হল শ্রী পঞ্চায়েতি নিরঞ্জনী আখড়া। ৯০৪ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানে ভক্তরা প্রধানত কার্তিকের পুজো করেন। এই আখড়ায় বহু উচ্চশিক্ষিত সদস্য রয়েছেন। পিএইচডি এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও রয়েছেন। এর প্রধান হলেন আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর কৈলাশানন্দজি মহারাজ।

মহানির্বাণী আখড়া (প্রয়াগরাজ): শ্রী পঞ্চায়েতি মহানির্বাণী আখড়ার প্রধান দেবতা হলেন ঋষি কপিলমুনি। ভক্তরা ভৈরব প্রকাশ ভল্লা এবং সূর্য প্রকাশ ভল্লার মতো পবিত্র চিহ্নগুলির পুজো করেন। এগুলি যথাক্রমে সুরক্ষা ও জ্ঞানদানের প্রতীক। এই আখড়ার প্রধান হলেন আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী বিশোকানন্দ।

আরও পড়ুন: দেশে সত্যিকারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন, বললেন ভাগবত

কিন্নর আখড়া: তৃতীয় লিঙ্গ আখড়া একটি অনন্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায় কুম্ভ মেলা এবং অন্যান্য পবিত্র আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ঐতিহ্যবাহী আখড়াগুলি মূলত পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। আর কিন্নর আখড়া পরিচালিত হয় তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের দ্বারা। কিন্নর আখড়ার সদস্যরা বিভিন্ন আধ্যাত্মিক চর্চায় অংশগ্রহণ করেন, যেমন আচার, প্রার্থনা, এবং ধ্যান। কুম্ভ মেলা প্রক্রিয়ায় অন্যান্য আখড়ার সঙ্গে তাঁদের অংশগ্রহণ তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা এবং পরিচিতির বড় প্রমাণ। কিন্নর আখড়ার উপস্থিতি হিন্দুধর্মের অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্যের একটি শক্তিশালী স্মারক। এটি আধ্যাত্মিক যাত্রায় সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে আলিঙ্গন করে (Maha Kumbh Mela 2025)।

অমৃত স্নান

কুম্ভে গিয়ে পবিত্র দিনে স্নানকে বলা হত শাহি স্নান। বর্তমানে এই নাম বদলে হয়েছে অমৃত স্নান। শব্দটি চালু করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি নিজে নাথ সম্প্রদায়ের যোগী। হরিদ্বারের মাণসা দেবী মন্দির ট্রাস্টের সভাপতি মহন্ত পুরী বলেন, ‘‘আমরা সবাই হিন্দি এবং উর্দু ভাষায় কথা বলি। এটা সম্ভব নয় যে আমরা কোনও উর্দু শব্দ বলি না। কিন্তু আমরা ভাবলাম যে যখন আমাদের দেবতাদের কথা আসে, তখন আমাদের চেষ্টা করা উচিত সংস্কৃত ভাষায় নাম রাখা বা ‘সনাতনী’ নাম দেওয়ার। সেই কারণেই শাহি স্নান হয়েছে অমৃত স্নান (Amrit Snan)। আমাদের উদ্দেশ্য, হিন্দু বনাম মুসলিম করা নয় (Maha Kumbh Mela 2025)।’’ প্রসঙ্গত, এবছর অমৃত স্নানের যোগ রয়েছে পাঁচটি। এগুলি হল, ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি, ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যা, ৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত পঞ্চমী, ১২ ফেব্রুয়ারি মাঘি পূর্ণিমা এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মহা শিবরাত্রি।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

Up

kumbh mela

Maha Kumbh Mela 2025

Maha Kumbh

News in Bengali    

Mela 2025

Akhara

Amrit Snan


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর