অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার আরাধনা করা হয়
সন্ধি পুজো
শুভ্র চট্টোপাধ্য়ায়: মহাষ্টমীর (Mahastami) দিনে ঐ বিশেষ পুজোর কথা সবাই জানি। যে পুজোর কোনো নির্দিষ্ট সময় থাকেনা, কখনো ভোরে, কখনো বা মাঝরাতে , কোনো কোনো বছর বিকেলে সম্পন্ন হয়। বিশেষ ঐ পুজো সমাপ্ত হয়েছে বোঝা যায় যখন একজন পুরোহিত দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ব্যাপক জোরে "জয় মা" ধ্বনি তোলেন। সাথে সাথেই শুরু হয় মাতার আরতি অনুষ্ঠান। পুজো মন্ডপের বাচ্চারা তখন পটকা ফাটাতে থাকে। প্রচলিত ভাষায় এই বিশেষ পুজোকে বলে ক্ষণের পুজো । বর্ণ বিপর্যয় হতে হতে এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে "ক্ষ্যানের" পুজো। ঐ পুজোর হলো আসল নাম হলো "সন্ধিপূজা" (Sandhi Puja)। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট থেকে নবমী শুরুর প্রথম ২৪ মিনিট ধরে চলে ঐ পুজো। এই সময়টাই সন্ধিক্ষণ। কিন্তু সন্ধিপূজা করতে হয় কেন? এর তাৎপর্য বা মাহাত্ম্য কি রয়েছে ? এর উত্তর আছে আমাদের পৌরাণিক আখ্যান গুলিতে ।
সন্ধিপূজা আসলে দৈত্য দলনী দেবী দুর্গার আর এক ভীষণ দর্শনা রূপের পূজা । সেই দেবীর নাম 'চামুণ্ডা' । অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে বধ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী -
এই পুজোতে ১০৮ টি পদ্ম অর্পণ করা হয় মায়ের চরণে। এটা নিয়েও দুটি পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে।
ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করার জন্য সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন । তাই ভক্ত হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন দেবীদহে । কিন্তু দেবীদহ থেকে ১০৭ টি পদ্ম নিয়ে ফিরেছিলেন পবনপুত্র । কারণ দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না । সুতরাং মায়ের পায়ে দেওয়ার জন্য একটি পদ্ম কম পড়েছিল । সন্ধিক্ষণ সমাপ্ত হওয়ার উপক্রম হলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের নীল পদ্মের ন্যায় চোখ দুটির মধ্যে একটি তুলে মায়ের পায়ে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন ১০৮ তম পদ্ম হিসেবে । চোখ উপড়ে ফেলার মুহূর্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দেবী দুর্গা । মায়ের বরে বলীয়ান শ্রীরামচন্দ্র এই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণেই রাবণ বধ করেছিলেন বলে ভক্তদের ধারণা । অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত । ক্ষতগুলির যন্ত্রণা কমানোর জন্য ভগবান শিব মা দুর্গাকে দেবীদহে স্নান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন । দেবীদহে স্নান করার পর মায়ের শরীরের সেই ১০৭টি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৭টি পদ্ম । কিন্তু একটি ক্ষত তখনও অবশিষ্ট ছিল । দেবী দুর্গা ১০৮ তম ক্ষতের জ্বালায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। এটা দেখে মহাদেবের চোখ থেকে নির্গত হয়েছিল এক ফোঁটা অশ্রু । অশ্রুকণাটি গিয়ে পড়েছিল মায়ের ১০৮ তম ক্ষতে । এতে মা দুর্গার শরীরের অবশিষ্ট ক্ষতটিও সেরে উঠেছিল । দেবীদহে থেকে গিয়েছিল ১০৭ টি পদ্ম।
সন্ধিপুজা তে মহাফল লাভ হয় বলেই ভক্তদের ধারণা। মাতাকে প্রসন্ন করতে এই পুজোতে লাল জবা ফুল এবং নৈবেদ্য তে লাল যে কোন ফল অর্পণ করা হয়।