Triveni Sangam: কীভাবে কুম্ভমেলার সময় গণনা করে নির্ধারিত হয় জানেন?...
প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় সাধুদের সঙ্গম। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৫ সালের পূর্ণকুম্ভমেলা (Mahakumbh Mela 2025) আর বাকি কুম্ভমেলাগুলি থেকে আলাদা। কারণ হিন্দু শাস্ত্রমতে জানা গিয়েছে, এই কুম্ভ ১৪৪ বছর পর পূর্ণ যোগে পূর্ণ কুম্ভমেলা বসবে। ভারতীয় হিন্দু ধর্মের মহামিলন কেন্দ্র হল এই মেলা। পুরাণে কথিত রয়েছে বাসকী নাগের দ্বারা সুরাসুরের সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত উঠেছিল, তা এই গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে (Triveni Sangam) এক ফোঁটা পড়েছিল। ফলে এই স্থানের নদী সঙ্গমে স্নান করলে মোক্ষ প্রাপ্তি ঘটে। এবছর উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, মেলায় আনুমানিক ৪০-৪৫ কোটি মানুষ পুণ্যস্নান করবেন। আর তাই প্রস্তুতি চলেছে জোর কদমে।
মহাকুম্ভমেলা (Mahakumbh Mela 2025) হল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয়, সামজিক এবং সাংস্কৃতিক মহামিলন মেলা। প্রতি ১২ বছর এক যোগে পূর্ণকুম্ভের আয়োজন হয়ে থাকে। আর প্রতি বছর যে মেলা হয়, তাকে বলা হয় কুম্ভ। ছয় বছরে একবার কুম্ভকে বলা হয় অর্ধকুম্ভ। প্রতি ১২ বছরে অনুষ্ঠিত কুম্ভকে বলা হয় পূর্ণকুম্ভমেলা। আবার ১২টি পূর্ণকুম্ভ অতিক্রান্ত হয়ে বা ১৪৪ বছর পর যে পূর্ণকুম্ভমেলা আসে, তাকে বলা হয় মহাকুম্ভ মেলা। এই কুম্ভ মূলত চারটি জায়গায় চক্রাকারে অনুষ্ঠিত হয়। জায়গাগুলি হল, উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদী সঙ্গমে প্রয়াগরাজ (Triveni Sangam), উত্তরাখণ্ডের গঙ্গা নদীর তীরে হরিদ্বার, মধ্যপ্রদেশের শিপ্রা নদীর তীরে উজ্জয়িনী এবং মহারাষ্ট্রের গোদাবরীর তীরে নাসিকে। সব জায়গায় মূলত নদী সঙ্গমে মেলা বসে এবং পুণ্যস্নান সম্পন্ন হয়। এই বছর পূর্ণ মহাকুম্ভ মেলা আয়োজিত হচ্ছে প্রয়াগরাজে।
কুম্ভমেলার (Mahakumbh Mela 2025) অবস্থান এবং তারিখ নির্ধারণ করতে, জ্যোতিষী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আখড়ার নেতারা একত্রে মিলিত হন। এরপর বৃহস্পতি এবং সূর্যের অবস্থান কেমন রয়েছে তা ভালো করে পরীক্ষা করেন। বৃহস্পতি (গুরু) এবং সূর্য উভয়ই হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয়। তাদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে সময়, দিনক্ষণ, তারিখ এবং তিথি নির্ধারিত হয়। এই মেলা সধারণত মাঘ-ফাল্গুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এই কুম্ভমেলার (Mahakumbh Mela 2025) উৎপত্তি, হিন্দু পুরাণে, বিশেষ করে সমুদ্র মন্থনের গল্পে নিহিত। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে দেবগণ (দেবতা) এবং অসুররা (দানব) অমৃত পাওয়ার জন্য একটি মহাজাগতিক মোক্ষ লাভের জন্য কাজ করে ছিলেন। সমুদ্র মন্থনটি হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র অমৃতে ভরা একটি কুম্ভ বা পাত্র উদ্ভূত হয়েছিল। অসুরদের হাত থেকে ওই অমৃতভান্ডার রক্ষা করতে ভগবান বিষ্ণু মোহিনীর ছদ্মবেশে পাত্রটি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর যাত্রার সময়, অমৃতের কয়েকটি ফোঁটা চারটি স্থানে পড়েছিল। এই স্থানগুলি হল— প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক। এই স্থানগুলি পবিত্রস্থান হিসাবে হিন্দু শাস্ত্রে শ্রদ্ধা করা হয়। এরপর থেকে কুম্ভমেলা ঘূর্ণায়মান হয়ে এই স্থানগুলিতে পালিত হয়।
আরও পড়ুনঃ ২২ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদে রাম মন্দিরের সূচনা, ঘোষণা অম্বিকানন্দের, কারা কারা আমন্ত্রিত?
হিন্দু শাস্ত্রের তিথি নক্ষত্র অনুয়ায়ী দেখা গিয়েছে, গ্রহ এবং নক্ষত্রের একটি বিরল জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার ফলে এবারের কুম্ভমেলা (Mahakumbh Mela 2025) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু জন্মান্তরবাদে সূত্রে এই কুম্ভে স্নান করলে সকল পাপের অবসান ঘটবে এবং জন্ম-মৃত্যুর মায়া বন্ধন ত্যাগ করে মোক্ষলাভ হবে। নিজের, পরিবার এবং সমাজ, দেশের কল্যাণ কামনায় কোটি কোটি ভক্তরা এই মহামিলন সাগরে সমাবেত হন। এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে আনুমানিক ৪৪ দিনের বেশি সময় ধরে। আগামী ১৪ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তি থেকে মেলা শুরু হবে এবং চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি, শিবরাত্রি পর্যন্ত। বিশেষ বিশষ স্নান হল, ২৯ জানুয়রি মৌনী অমবস্যা স্নান, ৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত পঞ্চমী স্নান, ১২ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা স্নান, ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি স্নান।
কুম্ভমেলায় (Mahakumbh Mela 2025) হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা মত এবং ভাগের সাধু-সন্ত এবং সন্ন্যাসী সমাজের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাঁদের নিজের নিজের আখড়ার ঐতিহ্য, শোভাযাত্রা নিয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হাতি, ঘোড়া, রথ নিয়ে বেশ সজ্জিত হয়ে নিজের নিজের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে তুলে ধরে থাকেন সন্তসমাজ। হিন্দু সমাজের পরম্পরা এবং ঐতিহ্য তুলেধারার একটা ধারাও লক্ষ্য করা যায় মেলায়। এই সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা যাত্রা দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ সমববেত হন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।