প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) সারা বিশ্বের গণিত চর্চা কে সমৃদ্ধ করেছেন
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আগের দুটি পর্বে আমরা প্রাচীন ভারতের বেদ এবং ঋষিদের ভূমিকা, প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছি। বিশ্বের গণিত কোষকে প্রাচীন ভারত নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে। আজকে আমরা প্রাচীন ভারতের কয়েকজন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং গণিত ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান (Mathematics in Ancient India) নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথম পর্ব: সনাতন ধর্মে ঋষি এবং বেদের ভূমিকা জানুন
বৃত্তের অঙ্ক আমরা সবাই করেছি। বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় হোক বা বৃত্তের পরিধি নির্ণয়, গণনাতে π অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি π এর মান ২২/৭। কিন্তু জানেন কী আনুষ্ঠানিকভাবে π আবিষ্কারের আগে ভারতবর্ষের এক গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) এটা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বইতে। এই বিখ্যাত গনিতজ্ঞের নাম ছিল মহর্ষি বৌধায়ন। তাঁর লেখা বৌধায়ন সুল্বা সূত্র গ্রন্থে এসম্পর্কে তিনি বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন। মূলত জ্যামিতির উপরে লেখা এই বইতে তিনি অসংখ্য উপপাদ্য সংকলন করেছেন।
দ্বিতীয় পর্ব: আলোর গতিবেগ, মহাকর্ষ বল, পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব নির্ণয়ের বিষয়ে বেদে কী বলা আছে জানেন?
মহর্ষি বৌধায়ন জ্যামিতিতে পিথাগোরাসের উপপাদ্যের বিকল্প প্রমাণ দিতে পেরেছিলেন। পিথাগোরাসের জন্মেরও কয়েকশত বছর আগে বৌধায়ন এই পিথাগোরাসের উপপাদ্যের মত একটি উপপাদ্য লেখেন।
এছাড়াও বৌধায়ন ‘২’-সংখ্যাটির বর্গমূল বের করার চেষ্টা করেছিলেন; যার মান পেয়েছিলেন ১.৪১৪২১৬, যা দশমিকের পর পাঁচ অঙ্ক পর্যন্ত সঠিক ছিল।
মহর্ষি আর্যভট্ট প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের (Mathematics in Ancient India) মধ্যে একজন। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে "আর্যভট্ট" রাখা হয়।
আর্যভট্টের অন্যতম ভাষ্যকার প্রথম ভাস্করের ভাষ্য অনুযায়ী মহান এই গণিতজ্ঞের জন্ম হয়েছিল অশ্মকা নামের একটি জায়গায়। প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রীতিতে এই জায়গাটিকে নর্মদা এবং গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ গুজরাত এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের আশেপাশের একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একাধারে আর্যভট্ট ছিলেন সুমহান গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষী এবং একজন পদার্থবিজ্ঞানী। তাঁর আবিষ্কার এবং গবেষণা সমস্ত কিছু সংকলিত হয়ে রয়েছে "The Aryabhattiya" এই বইতে। এখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে আধুনিক গণিতের বিভিন্ন তত্ত্ব, দশমিক পদ্ধতি, সংখ্যাতত্ত্ব, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন বিষয়।
গণিতের (Mathematics in Ancient India) উপর তাঁর কাজকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমভাগ হল, গণিত (Mathematics)
দ্বিতীয়ভাগ হল, কাল-ক্রিয়া (Time Calculation)
তৃতীয়ভাগ হল, গোল (Sphere)
প্রথমভাগ অর্থাৎ গণিতে তিনি সংকলিত করেছেন দশমিক পদ্ধতিগুলি এবং তার সঙ্গে π এর মানও তিনি নির্ণয় করেছেন। আর্যভট্ট π এর মান নির্ণয় করেছিলেন, ৩.১৪১৬ । আধুনিক গণিতজ্ঞরা π এর মান নির্ণয় করেছেন ৩.১৪১৫৯ যা কিনা প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) আর্যভট্টের গণনার মানের একেবারে কাছাকাছি।
দ্বিতীয়ভাগ অর্থাৎ কাল-ক্রিয়াতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বকে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। এখানেই সংকলিত রয়েছে সূর্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রহের নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণের গতি সংক্রান্ত তত্ত্ব।
তৃতীয়ভাগ অর্থাৎ গোল, এখানে রয়েছে প্রায়োগিক ত্রিকোণমিতি এবং জ্যামিতির বিভিন্ন তত্ত্ব।
আর্যভট্ট শূন্য আবিষ্কার করেছিলেন, যেটি গণিতের ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের একটি বড় অবদান (Mathematics in Ancient India)।
প্রাচীন ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) ছিলেন মহর্ষি ব্রহ্মগুপ্ত। শূন্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। প্রাচীন ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম কেন্দ্র "astronomical observatory of Ujjain"-এর তিনিই ছিলেন প্রধান। সমগ্র জীবনে তিনি চারটি বই লিখেছিলেন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত বইটি হল ব্রহ্ম-ষ্পুত্র-সিদ্ধান্ত।
তিনি উল্লেখ করে গেছেন যে এক বছর মানে হল ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ১২ মিনিট ৯ সেকেন্ড। প্রাচীন এই গণিতজ্ঞ গণনা করেছিলেন পৃথিবীর পরিধি। গণনায় মান এসেছিল ৩৬০০০ কিলোমিটার বা ২২,৫০০ মাইল। ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক সংখ্যা সম্পর্কেও তিনি ধারণা দিতে পেরেছিলেন।
মহর্ষি দ্বিতীয় ভাস্করাচার্য একজন খ্যাতনামা প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। যিনি ব্রহ্মগুপ্তের সংখ্যাতত্ত্বের উপর কাজ করেছিলেন। তাঁর কাজ সংকলিত আছে ছটি খন্ডে। এগুলি হল
লীলাবতী- Mathematics
বীজগণিত- Algebra
গণিত অধ্যায়- Mathematical Astronomy
গোল অধ্যায়- Sphere
কর্ণকুটুহল- Calculation of Astronomical on dots
ভাসানভাষ্য- সিদ্ধান্ত শিরোমণির উপর ভাস্করাচার্যের নিজের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে এই গ্রন্থে।
বিবরণ- এটিও তাঁর বক্তব্য একটি সংকলন।
সিদ্ধান্ত শিরোমনি গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
অন্যদিকে তাঁর রচিত সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থটিতে তিনি অভিকর্ষ বল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গণিতজ্ঞ (Mathematics in Ancient India) সারা বিশ্বের গণিত চর্চা কে সমৃদ্ধ করেছেন। শূন্য আবিষ্কার,ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত, জ্যামিতি, জ্যোতিষ বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব, অ্যালগরিদম ইত্যাদির দ্বারা। প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চায় (Mathematics in Ancient India) আরও যে নামগুলি উল্লেখ করতেই হবে সেগুলি হল হলায়ুধ, ভদ্রবাহ, মহাবীর, জয়দেব, হেমচন্দ্র, বীরসেনা ইত্যাদি।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।