গঙ্গার নিচে মেট্রোর পরিকল্পনা কত বছর আগের?
১০০ বছর আগে তৈরি ভূগর্ভস্থ রেলপথের নকশা। সংগৃহীত ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতে প্রথম বার গঙ্গার নিচে সুড়ঙ্গ পথে ছুটবে মেট্রো রেল (Metro Rail)। ভারতের ইতিহাসে এ এক নতুন মাইল ফলক বলা যেতেই পারে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শহরবাসী এই সুবিধা পেতে চলেছেন। ইতিমধ্যে গঙ্গার তলা দিয়ে পরীক্ষমূলক ভাবে চালানো হয়েছে মেট্রো রেল। কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা, প্রায় ১০০ বছর আগেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। আর তা করেছিলেন একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার স্যার হার্লে ডালরিম্পল।
কে এই হার্লে ডালরিম্পল?
হার্লে ডালরিম্পল ছিলেন একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত ইঞ্জিনিয়ার, যিনি ১৮৬১ সালে রাজ্যেরই বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কারিগরি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন যুক্তরাজ্যের এডিনবরায়। এর পর তিনি লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড নামের একটি পরিবহণ সংস্থায় কাজ শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, কলকাতার মাটির নিচ দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটারের কাছাকাছি একটি রেলপথ তৈরি করবেন। এটি হুগলি নদীর নিচ দিয়ে যাবে এবং হাওড়াকে সরাসরি কলকাতার সাথে যুক্ত করবে। এর সাথে যুক্ত মোট ১০টি স্টেশন (Metro Rail) রাখার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি, তাঁর পরিকল্পনা আরও বহুদূর বিস্তৃত ছিল। তিনি কলকাতার জন্য সম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড একটি নকশা তৈরি করেছিলেন, যা কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হার্লে এই পরিকল্পনা যখন তৈরি করেন, তখন আগে থেকেই লন্ডন, প্যারিস এবং নিউইয়র্কে ভূগর্ভস্থ রেলপথ চালু ছিল।
কী উদ্দেশ্য (Metro Rail) ছিল এই টানেলের?
ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ছিল মূল কেন্দ্রবিন্দু। আর হাওড়া ছিল বিভিন্ন কলকারখানার মূল জায়গা। তাই কলকাতা ও হাওড়াতে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ কাজ করতে আসতেন। তখন হাওড়া থেকে কলকাতা যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল হুগলির ওপর নির্মিত একটি সেতু। তাছাড়া নৌকাতেও যাতায়াত করতেন মানুষ। এই সব পর্যবেক্ষণ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, লন্ডনের মতো টিউব রেলপথ নির্মাণ করার, যা ভূগর্ভ পথে কলকাতা-হাওড়াকে সরাসরি যুক্ত করবে (Metro Rail)। তিনি কলকাতাতে না এসেই সুদূর বিদেশে বসে শহরের জন্য টিউবের নকশা তৈরি করেন। এমনকী সব বিষয়ে তথ্য পেতে এক সহকারীকের কলকাতায় পাঠান।
তাঁর প্রথম উদ্দেশ্য ছিল, হাওড়ার বাগমারি নামক এক জায়গাকে বেনারস রোড নামক আরেক জায়গার সাথে যুক্ত করা (Metro Rail)। একশো বছর আগে এই পরিকল্পনার জন্য বাজেট নির্ধারণ করা হয় ৩৫ লাখ পাউন্ড, যা ছিল তখন অনেক ব্যয় বহুল। তাই এই প্রজেক্ট অসম্পূর্ণই থেকে যায়। কিন্তু হার্লে কলকাতায় তাঁর এই পরিকল্পনার ছোঁয়া রেখে যান। ১৯২৮ সালে শহরের বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সিইএসসি হার্লেকে কলকাতা থেকে হাওড়ায় বৈদ্যুতিক তার পরিবহণের জন্য টানেল বানানোর দায়িত্ব দেয়। ১৯৩১ সালে কলকাতায় এই আন্ডার ওয়াটার টানেলটি স্থাপিত হয়, যা আজও আছে। এটি দিয়ে এখনও বৈদ্যুতিক তার পরিবহণ করা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।