"চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির"-কবিগুরুর লেখা সেই পংক্তি আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফাইল চিত্র
সমগ্র বিশ্বের বাঙালির মনে এই বৈশাখ মাসটি এক রোমাঞ্চকতায় ভরা। কারণ এই মাসেই ২৫ বৈশাখে এমন একজন মহাত্মার জন্ম হয়েছিল, যাঁকে নিয়ে আজও আমরা গর্বিত। কবিগুরুকে ছাড়া বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতি সত্যিই যেন অসম্পূর্ণ। বাঙালির সাহিত্যের শুরু ও শেষ তাঁকে দিয়েই। আপামর বাঙালির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সমস্ত অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রবিঠাকুর (Rabindranath Tagore)। আজ তাঁর ১৬২ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য। নিবেদনে মৃণালকান্তি সরকার।
স্রষ্টা মাত্রেরই সংশয়, সৃষ্টি বাঁচবে তো! নশ্বর জীবদেহ বিলীন হয়ে যাবে। মুছে যাবে বেঁচে থাকার যাবতীয় বাহ্যিক অহংকার। সাধারণ মানুষের তো পরিণতি এটাই। তাই বোধহয় এ নিয়ে কারও অভিযোগ থাকে না কিছু। কিন্তু সৃজনশীল মানুষের ভিন্নতর এক অন্বেষণ থাকে, থাকে অমরত্বের এক স্পৃহা। আমি বা আমার নামরূপের লয় হোক, ক্ষতি নেই! কিন্তু আমার সৃষ্টি যেন নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায়। মহাকালের অসম্ভাব্য পরিবর্তন তাঁর সর্বজনীন সৃষ্টিকে যেন নিঃশেষে বিদায় না করে দেয়! অনন্ত মানবস্মৃতিতে যেন চিরলগ্ন থাকতে পারে সেই স্মৃতি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতো বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মহান স্রষ্টারও সংশয় ছিল-আজি হতে শতবর্ষ পরে, কোন সে পাঠক, যিনি তন্ময় হয়ে থাকবেন কবির (Rabindranath Tagore) সৃষ্টিতে? সোচ্চার কোনও দাবি নয়, কবিসুলভ স্মিত এক প্রার্থনা নিজেরই সৃষ্টির কাছে,-‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে... তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে।’ সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক বিস্ময়ে যেন এই উক্তি-‘তুমি কেমন করে গান করো, হে গুণী!’ ক্ষণকাল থেকে চিরকালের উত্তরণের গুণ যেন আমার থাকে। এই আমার সাধনা, বিচারক আমি নই, বিচারক সেই মহাকাল! শতাব্দীর পর নতুন শতাব্দীতে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিটি বিভাগকে সঞ্জীবিত করে বিশাল গগনে রবিপ্রভা দীপ্যমান, রবিপ্রভা আজও মূর্তিমান, তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল!
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) বাঙালি তথা ভারতীয় তথা সারা বিশ্বের অনুপ্রেরণা। "চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির"-কবিগুরুর লেখা সেই পংক্তি আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই কবিতা যে কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিশ্চই আলাদা করে বলে দিতে হয় না। আমরা সবাই খুঁজে চলেছি রবীন্দ্র কবিতার সেই দেশ, সেই কবে থেকেই। যুগে যুগে, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে নাড়া দিয়েছেন বিশ্বকবি এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও তিনি থাকবেন পূজনীয়। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিশ্বকবি মলিন হন না, তিনি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ান। তাই আজ তাঁর ১৬২ তম জন্মবার্ষিকীতে একটাই চাওয়া, কবিগুরু বেঁচে থাকুন আমাদের গানে, গল্পে, আড্ডায়, প্রেমে, দিনের শেষে ক্লান্ত গলায়। কবিগুরু লহ প্রণাম।
এতবছর পরেও রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) জীবন-দর্শন ও তাঁর সৃষ্টি আজকের সমাজেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। রবি ঠাকুরের জীবন-দর্শন ও সৃষ্টি আমাদের এই অস্থিরময় সময়ে সঠিক পথের দিশা দেখাতে পারে, পারে আত্মগ্লানির হাত থেকে মুক্তি দিতে, পারে এই দমবন্ধকর আবহের মধ্যে একটু খোলা হাওয়া এনে দিতে। তাই তো প্রত্যেক বছর ২৫শে বৈশাখ আমাদের ‘চির নূতন’ হয়ে ওঠার ডাক দেয়। এবারও দিয়েছে। সেই প্রজ্ঞার পায়ে নিবেদিত হোক শ্রদ্ধার্ঘ্য।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।