Hindu Heritage: অজস্র হিন্দু মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানি অহল্যাবাঈ, জানুন তাঁর জীবনকথা...
রানি অহল্যাবাঈ (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একজন আধুনিক ও আদর্শবাদী রানি ছিলেন অহল্যাবাঈ হোলকার (Rajmata Ahilyabai Holkar)। রানির জন্ম ১৭২৫ সালের ৩১ মে। তিনি ছিলেন মারাঠা মালওয়া রাজ্যের রানি। রাজমাতা অহল্যাবাঈ মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের জামখেদ অঞ্চলের চৌন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। ১৭৫৪ সালে কুমহেরের যুদ্ধে অহল্যাবাঈয়ের স্বামী খান্দেরাও হোলকর নিহত হন। এর ঠিক বারো বছর পরে, তাঁর শ্বশুর মল্লার রাও হোলকর মারা যান। এক বছর পর তিনি মালওয়া রাজ্যের রানি হিসেবে দায়িত্বভার নেন। যুদ্ধক্ষেত্রে রানি অহল্যাবাঈ নিজেই সেনাকে নেতৃত্ব দিতেন। তিনি তুকোজিরাও হোলকরকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন বলে জানা যায়।
মারাঠা মালওয়া রাজ্যের এই রানি (Rajmata Ahilyabai Holkar) তাঁর পিতা ও পরিবারের পরামর্শে স্বামীর মৃত্যুর পরে সতী না হওয়ার পথকেই বেছে নিয়েছিলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসের রানি অহল্যাবাঈয়ের একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। রানি হিসেবে তিনি ছিলেন একজন বিচক্ষণ ও অত্যন্ত মমতাময়ী শাসক। তাঁর প্রশাসনে প্রতিফলিত হত ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণ। জানা যায়, তিনি অসংখ্য মন্দিরও নির্মাণ (Hindu Heritage) করেছিলেন। অনেক ভগ্নপ্রায় মন্দিরকে পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। নদীর ঘাট নির্মাণ থেকে কূপ খনন, সড়ক নির্মাণ করেছিলেন এই রানি। তিনি ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের ভক্ত। রানি অহল্যাবাঈয়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব ছিল বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের জ্যোতির্লিঙ্গ পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
রাজমাতা অহল্যাবাঈয়ের (Rajmata Ahilyabai Holkar) গল্প শুরু হয় তাঁর শ্বশুর মল্লার রাও হোলকারকে দিয়েই। যিনি স্বপ্ন দেখতেন কাশীর ঐতিহাসিক বিশ্বেশ্বর মন্দিরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার। হিন্দু সমাজকে সংঘটিত করার স্বপ্ন দেখতেন অহল্যাবাঈয়ের শ্বশুর। কাশীর এই মন্দিরই মসজিদে পরিণত করেছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৬৬৯ সালে। কিন্তু মল্লার রাও হোলকারের এই স্বপ্ন পূরণে বাধা ছিল অযোধ্যার নবাব। কারণ তিনি কখনই চাননি ঔরঙ্গজেবের তৈরি করা মসজিদকে সরিয়ে সেখানে মন্দির নির্মাণ করা হোক। পরবর্তীকালে ১৭৫০ সাল নাগাদ জয়পুরের রাজা কাশীর বিশ্বেশ্বর মন্দির নির্মাণের জন্য একটি সমীক্ষা শুরু করেন কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর প্রচেষ্টাটিও মাঠে মারা যায়। কিন্তু শ্বশুরের দেখানো পথে চলেই পরবর্তীকালে ১৭৮০ সাল নাগাদ প্রচেষ্টা শুরু করেন অহল্যাবাঈ (Rajmata Ahilyabai Holkar)। আদি মন্দিরটি ছিল ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। জানা যায়, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ধ্বংস করা মন্দিরের কাছেই ১৭৮০ সাল নাগাদ নতুন ভাবে বিশ্বেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এই মহান কাজে হিন্দুরা হারিয়ে যাওয়া জ্যোতির্লিঙ্গের পূজা পুনরায় শুরু করতে পারে। তবে শুধুমাত্র কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে তিনি থামেননি তিনি।
১৭৯১ সালে বারাণসীতে সমগ্র মনিকর্ণিকা ঘাট পুনঃনির্মাণ করেন রানী অহল্যাবাঈ। ১৭৮৭ সালে তিনি বিষ্ণুপদ মন্দিরও পুনঃনির্মাণ করেন। প্রসঙ্গত, এই মন্দিরটি বিহার রাজ্যের গয়াতে অবস্থিত। ফল্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দির ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এখানে ভক্তরা ভগবান বিষ্ণুর পদচিহ্নের পূজা করেন। সোমনাথ মন্দিরের নামও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বারবার মুসলিম আক্রমণের শিকার হতে হয় এই মন্দিরকে। ঐতিহাসিকরা বলেন, গজনীর সুলতান মামুদ, আলাউদ্দিন খিলজি এবং জাফর খানের নেতৃত্বে সতেরোবার লুট চালানো হয় এই মন্দিরে। কিংবদন্তি অনুসারে, রানি একটি স্বয়ম্ভূ লিঙ্গের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই স্বপ্নই তাঁকে মন্দির নির্মাণে অনুপ্রাণিত করে।
এভাবে মুসলিম আক্রমণকারীদের ভেঙে ফেলা মন্দিরের জায়গায় তিনি হিন্দুদের মন্দির নতুনভাবে গড়ে তোলেন। হিন্দু জাতির ধর্ম ও উপাসনা কেন্দ্রগুলি পুনরুদ্ধার করার জন্য অহল্যাবাঈ হোলকারের প্রচেষ্টা সারা ভারত জুড়ে বন্দিত। তিনি অসংখ্য মন্দির নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। শ্রীনগর, হরিদ্বার, কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, ঋষিকেশ, প্রয়াগরাজ, নাসিক, ওমকারেশ্বর, মহাবালেশ্বর, পুণে, ইন্দোর এমনকি নেপালের কাঠমান্ডুতেও মন্দির নির্মাণে তাঁর অবদান দেখা যায়। জানা যায়, হিন্দু সমাজের আধ্যাত্মিকতা ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে অত্যন্ত শক্তিশালী করার জন্যই তিনি মন্দির নির্মাণে ব্রতী (Rajmata Ahilyabai Holkar) হয়েছিলেন। তাঁর রাজত্বে মন্দির পুনরুদ্ধারের একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে স্মরণ করা হয়। তাঁর অবদান আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
অহল্যাবাঈ হোলকারের জীবনী আধুনিক নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। অহল্যাবাঈ হোলকার দেখিয়েছিলেন একজন রানি সহানুভূতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালীও হতে পারেন। রাজমাতা অহল্যাবাঈ ছিলেন একজন দূরদর্শী সম্পন্ন নারী। হিন্দু সমাজকে সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবিরাম প্রচেষ্টা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারতীয়ত্ববোধের প্রতি তাঁর আস্থা নিশ্চিত ভাবে বর্তমান প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হতে পারে। ১৭৯৫ সালের ১৩ অগাস্ট তিনি প্রয়াত হন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।