Kathamrita: “ভগবানদর্শন হলে আর গুরুশিষ্য বোধ থাকে না”…‘কথামৃত’ থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
১৮৮৩, ২২শে এপ্রিল
শ্রীরামকৃষ্ণ সিঁথির ব্রাহ্মসমাজে ব্রাহ্মভক্তসঙ্গে
ব্রাহ্মভক্ত ও ভোগান্ত—বিদ্যারূপিণী স্ত্রীর লক্ষণ—বৈরাগ্য কখন হয়
“আবার আছে খোসাটি আছে বলে (Kathamrita) তবে আমটি বাড়ে ও পাকে। আমটি তয়ের হয়ে গেলে তবে খোসা ফেলে দিতে হয়! মায়ারূপ ছালটি থাকলে তবেই ক্রমে ব্রহ্মজ্ঞান হয়। বিদ্যা-মায়া, অবিদ্যা-মায়া আমের খোসার ন্যায়; দুই-ই দরকার।”
ব্রাহ্মভক্ত—আচ্ছা, সাকারপূজা, মাটিতে গড়া ঠাকুরপূজা—এ-সব কি ভাল?
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তোমরা সাকার মান না, তা বেশ; তোমাদের পক্ষে মূর্তি নয়, ভাব। তোমরা টানটুকু নেবে, যেমন কৃষ্ণের উপর রাধার টান, ভালবাসা। সাকারবাদীরা যেমন মা-কালী, মা-দুর্গার পূজা করে, ‘মা’ ‘মা’ বলে কত ডাকে কত ভালবাসে—সেই ভাবটিকে তোমরা লবে, মূর্তি না-ই বা মানলে।
ব্রাহ্মভক্ত—বৈরাগ্য কি করে হয়? আর সকলের হয় না কেন?
শ্রীরামকৃষ্ণ—ভোগের শান্তি না হলে বৈরাগ্য হয় না। ছোট ছেলেকে খাবার আর পুতুল দিয়ে বেশ ভুলানো যায়। কিন্তু যখন খাওয়া হয়ে গেল, আর পুতুল নিয়ে খেলা হয়ে গেল, তখন “মা যাব” বলে (Kathamrita)। মার কাছে নিয়ে না গেলে পুতুল ছুঁড়ে ফেলে দেয়, আর চিৎকার করে কাঁদে।
সচ্চিদানন্দই গুরু—ঈশ্বরলাভের পর সন্ধ্যাদি কর্মত্যাগ
ব্রাহ্মভক্তেরা গুরুবাদের বিরোধী। তাই ব্রাহ্মভক্তটি এ-সম্বন্ধে কথা কহিতেছেন।
ব্রাহ্মভক্ত—মহাশয়, গুরু না হলে কি জ্ঞান হবে না?
শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—সচ্চিদানন্দই গুরু; যদি মানুষ গুরুরূপে চৈতন্য করে তো জানবে যে, সচ্চিদানন্দই ওই রূপ ধারণ করেছেন। গুরু যেমন সেথো; হাত ধরে নিয়ে যান। ভগবানদর্শন হলে আর গুরুশিষ্য বোধ থাকে না। ‘সে বড় কঠিন ঠাঁই, গুরুশিষ্যে দেখা নাই!’ তাই জনক শুকদেবকে বললেন, ‘যদি ব্রহ্মজ্ঞান চাও আগে দক্ষিণা দাও।’ কেননা, ব্রহ্মজ্ঞান হলে আর শিষ্য ভেদবুদ্ধি থাকবে না। যতক্ষণ ঈশ্বরদর্শন না হয়, ততদিনই গুরুশিষ্য সম্বন্ধ।
ক্রমে সন্ধ্যা হইল। ব্রাহ্মভক্তেরা কেহ কেহ ঠাকুরকে বলিতেছেন, “আপনার বোধহয় এখন সন্ধ্যা করতে হবে।”
শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—না, সেরকম নয়। ও-সব প্রথম প্রথম এক-একবার করে নিতে হয়। তারপর আর কোশাকুশি বা নিয়মাদি দরকার হয় না।
আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"
আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির
আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”
আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।