img

Follow us on

Thursday, Nov 21, 2024

Odantapuri University: নালন্দার পর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, জানুন ওদন্তপুরী মহাবিহারের ইতিহাস

কেমন ছিল প্রাচীন ভারতের ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়?

img

ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয় (সংগৃহীত ছবি)

  2024-05-18 16:57:11

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ওদন্তপুরী ছিল প্রাচীন ভারতের অন্যতম এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, অষ্টম শতাব্দীতে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে (Odantapuri University) স্থাপন করেছিলেন। তবে পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন, এই নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। বেশ কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ওদন্তপুরে বিশ্ববিদ্যালয় গোপালের পুত্র ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আবার অন্য অনেক গবেষকের মতে, ওদন্তপুরীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দেবপাল। জানা যায়, সে সময়ে পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছিল ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়। পাল যুগে বিক্রমশিলা ছিল প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্রমশিলা এবং ওদন্তপুরী- এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় বিপুল পরিমাণে আর্থিক সাহায্য লাভ করত পাল রাজাদের কাছ থেকে। এই সাহায্য নালন্দার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

আরও পড়ুন: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

মহাপাল নামে একজন রাজার কথা জানা যায়

মহাপাল নামে একজন রাজার কথা ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Odantapuri University) সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি ছিলেন মহিপালের পুত্র এবং তিনি ওদন্তপুরীর অত্যন্ত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সেখানকার ৫১ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং ৫০ জন শিক্ষককে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপরে। ধর্মের অগ্রগতির সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্ম মহাযান, হীনযান, বজ্রজান প্রভৃতি সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, পাল রাজা রামপালের রাজত্বকালে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষকের সঙ্গে হীনযান এবং মহাযান উভয় সম্প্রদায়ের এক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুক স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন।

নালন্দার মতো বড় গ্রন্থাগার 

নালন্দাতে বেশ বড় একটি গ্রন্থাগারের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Odantapuri University) গ্রন্থাগারও নালন্দার চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না এবং এতে হিন্দু এবং বৌদ্ধ রচনার বিশাল সংগ্রহ ছিল। নালন্দার মতোই বখতিয়ার খিলজির বাহিনী ওদন্তপুরীর গ্রন্থাগারকে পুড়িয়ে দেয়। খিলজীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা নেপাল এবং তিব্বতে চলে যায় বলে জানা যায়। তিব্বতের বেশ কিছু নথি থেকে জানা যায় ওদন্তপুরীতে প্রায় বারো হাজার ছাত্র ছিলেন এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র এবং পণ্ডিতরা এখানে গবেষণা তথা শিক্ষা লাভ করতে আসতেন। মনে করা হয়, নালন্দার মতোই বখতিয়ার খিলজির আক্রমণে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এটি ছিল আধুনিক ভারতের একটি বৌদ্ধ মহাবিহার। ওদন্তপুরীর অবস্থান ছিল মগধে এবং নালন্দার পরে ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম মহাবিহার হিসেবে এটিকে গণ্য করা হয়।

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

ওদন্তপুরী ছিল পূর্ব ভারতে থাকা পাঁচটি মহাবিহারের মধ্যে একটি

ঐতিহাসিকদের মতে, ওদন্তপুরী (Odantapuri University) ছিল পূর্ব ভারতে থাকা পাঁচটি মহাবিহারের মধ্যে একটি। অন্যান্য মহাবিহারগুলি হল- নালন্দা, বিক্রমশীলা, সোমপুরা, এবং জগদ্দলা। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, একাদশ শতকের শেষের দিকে ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজি এই মহাবিহারটিকে ধ্বংস করেন। তিব্বতের পণ্ডিত এবং ছাত্রদের কাছে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আলাদা গুরুত্ব ছিল। তাঁরা এটিকে প্রেরণার স্রোত হিসেবে দেখতেন। বিভিন্ন তিব্বতীয় নথি অনুসারে জানা যায়, ওদন্তপুরীর ধাঁচে তিব্বতে তৈরি করা হয়েছিল স্যাম ইয়ে মঠ। যা স্থাপিত হয়েছিল ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে। ওদন্তপুরী মহাবিহার নালন্দা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বলে জানা যায়। ভারতবর্ষের এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন শ্রী গঙ্গা, যিনি পরবর্তীকালে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়েছিলেন বলে জানা যায়।

বৌদ্ধ ধর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা নতুন মাত্রা পায়

ঐতিহাসিকদের মতে, বৌদ্ধ ধর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতা নতুন মাত্রা পায়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ভারতীয় সভ্যতার সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যেতে থাকে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তখন ধর্মীয় আচরণ-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষার বিষয়েও ভাবতে থাকেন। এরই ফলস্বরূপ বেশ কতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের সেসময় গড়ে ওঠে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওদন্তপুরী (Odantapuri University)। মনে করা হয়, ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির ধ্বংস করার আগে পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল।

তাইওয়ান থেকে আসা প্রতিনিধি দল

চার বছর আগে ২০২০ সালে বৌদ্ধ ধর্মের একটি প্রতিনিধিদল তাইওয়ান থেকে আসেন ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে। কিন্তু সেই স্থানে এসে তাঁরা একপ্রকার হতাশ হন যখন তাঁরা ওদন্তপুরীর সে অর্থে কোনও ধ্বংসাবশেষ খুঁজে না পান। লি ওয়েন নামের ওই বৌদ্ধ প্রতিনিধি দলের নেতা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, প্রাচীনকালের বেশ কিছু নথি থেকে জানা যায়, পাল বংশের রাজা গোপাল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থাপন করেছিলেন। সে সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষাদানের কেন্দ্রগুলিকে বিহার নামে অভিহিত করা হতো। ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল সপ্তম শতাব্দীতে। বিহারে দাঁড়িয়েই তাইওয়ানের ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী দলের নেতা জানান যে ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের যা কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এখানে, তার সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে 'বিহার হেরিটেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি'র এক আধিকারিক সে সময় জানিয়েছিলেন যে বিহার শরীফের অংশটি জনঘনত্ব পূর্ণ। এর ফলে সেখানে খননকার্যে অনেক রকমের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: রামায়ণেও উল্লেখ মেলে! জানুন প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

buddhist history

bihar sharif

Odantapuri University

ancient indian universities

bihar history


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর