img

Follow us on

Tuesday, Jun 18, 2024

Kirtan: কীর্তনের জনপ্রিয়তা ফেরাতে রিসার্চ অ্যাকাডেমি, তথ্যচিত্র তৈরির উদ্যোগ

কীর্তন ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে কেন? গরিমা ফেরাতে কী উদ্যোগ?

img

প্রতীকী চিত্র।

  2023-06-25 16:24:58

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শ্রী চৈতন্যের হাত ধরে একটা সময় কীর্তন (Kirtan) গান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল অবিভক্ত বাংলায়। বাংলার গ্রামে-শহরে গড়ে ওঠে কীর্তনের দল। বর্তমান সময়ে আধুনিক সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কীর্তন ক্রমশ তার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে৷ বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই কীর্তন সঙ্গীতের পুরনো ঐতিহ্য ও গরিমা ফিরিয়ে আনতে কীর্তন রিসার্চ অ্যাকাডেমি গড়ে তুলছে ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টার। পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে কীর্তনের একটি আর্কাইভ। সারা বছর ধরে, বিভিন্ন সময়ে আয়োজন করা হবে কীর্তন বিষয়ক সম্মেলন, সঙ্গীতানুষ্ঠান, কর্মশালা ইত্যাদি। শুরু হতে চলেছে একটি তথ্যচিত্রের কাজ। কলকাতার মতিলাল নেহরু রোডে ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের প্রধান কার্যালয় গীতা ভবনে এই প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয় ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের গ্রন্থাগার গীতা ভবনে।

কীর্তন (Kirtan) নিয়ে আলোচনায় কী উঠে এল?

আলোচনার বিষয় ছিল ‘কীর্তন: বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ'। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, অধ্যাপিকা ডঃ কঙ্কণা মিত্র (বাংলা গান-কীর্তন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) এবং অধ্যাপক বিশ্বজিত রায় (বাংলা, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)। সম্মেলনে আলোচনা করা হয় কীর্তনের সামাজিক প্রভাব, সাহিত্যমূল্য নিয়ে। বক্তব্য রাখেন  বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক ও সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র। সংস্থার ডিন সুমন্ত রুদ্র বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য শুধু কীর্তন গানের জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনাই নয়, বাংলা কীর্তনের প্রাচীন রূপটির সংরক্ষণ ও সংস্কার করা। সঠিক পদ্ধততিতে কীর্তন গান ও শ্রীখোলের শিক্ষার প্রসার ঘটানোও এই কর্মসূচির একটি লক্ষ্য। একদিকে যেমন তাত্ত্বিক দিক থেকে কীর্তন (Kirtan) বিষয়ক যত প্রামাণ্য গ্রন্থ বা প্রাচীন নথি আছে, সেগুলিকে সংরক্ষণ করে তাদের গ্রন্থাগারে গবেষণার জন্য রাখা হবে, তেমনই কীর্তনের প্রায়োগিক দিকটি সংরক্ষিত করা হবে তথ্যচিত্র, অডিও ও ভিডিওগ্রাফি, স্বরলিপি ইত্যাদির মাধ্যমে। তিনি বলেন, ভারতবর্ষ ছাড়াও বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে সংস্থার পক্ষ থেকে কীর্তনের দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে কীর্তন গানকে রেকর্ড করে আর্কাইভ করা হবে। এছাড়া কীর্তন শিল্পীদেরও নানাভাবে সহযোগিতা করা হবে।

কেন কীর্তন (Kirtan) ক্লাসিক লোকশিল্প?

সাহিত্যিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য বলেন, কীর্তন দিনের পর দিন চর্চায় চর্চায় নানা ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কীর্তনকে সংরক্ষণ করার এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। বিশিষ্ট কীর্তন বিশেষজ্ঞ ও 'দেবুজ' দরবারের অধ্যক্ষ দেবলীনা ঘোষ কীর্তন গেয়ে শোনান। পরে তিনি বলেন, দ্বাদশ শতাব্দী থেকে বাংলায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গান ও সাহিত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১২ শতকের শেষের দিকে, কবি জয়দেব ছিলেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভা-কবি। তিনি রাধাকৃষ্ণের প্রেমের গল্প নিয়ে সংস্কৃত কাব্য 'গীত গোবিন্দ' রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে, মৈথিলী কবি বিদ্যাপতি প্রাচীন ভাষা মৈথিলীতে অনেক জনপ্রিয় রাধা-কৃষ্ণ পদ (গীতিমূলক কবিতা) রচনা করেন।চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনের সময়, জয়দেব, বিদ্যাপতি এবং আরও অনেক প্রাচীন কবির এই প্রাচীন কীর্তন গানগুলি প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শ্রী চৈতন্য দেব তাঁর 'গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ' দর্শন প্রচারের মাধ্যম হিসেবে 'সংকীর্তন' ব্যবহার করেছিলেন। তার পরেই ক্রমশ ‘কীর্তনের’ (Kirtan) আবেগে আপ্লুত হতে থাকে বাংলা। বাংলার পাশাপাশি ভারতের অন্য রাজ্যেও বিভিন্নভাবে কীর্তনের বিকাশ ঘটেছিল। কিন্তু বাংলায় এর ‘আখর’ হিসাবে বিশদ ব্যাখ্যামূলক অংশ সহ নাটকীয় উপস্থাপনা, অনেক প্রাচীন তাল ও রাগের সংমিশ্রণ, গল্প বলার ধরন, ধর্মীয় আচার, তাৎপর্যপূর্ণ দর্শন ইত্যাদি শত শত বছর ধরে এটিকে একটি অনন্য ক্লাসিক-লোকশিল্পের রূপ দিয়েছে।

বৃহত্তর উদ্যোগের সূচনা

কীর্তন বাংলার সমস্ত অঞ্চলে এত জনপ্রিয় ছিল যে এটি ধর্ম, বর্ণ-প্রথা এবং সামাজিক অবস্থানের বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল। এক সময় প্রভাতী-কীর্তন শুনে বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনের প্রতিটি অনুষ্ঠানে কীর্তন পরিবেশনের সুযোগ ছিল সেই সময়। কীর্তনের (Kirtan) পদগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য অংশ। এছাড়াও কীর্তন বাংলার সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসে অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছিল। এমন গৌরবময় ইতিহাস এবং শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, বর্তমানে কীর্তন ক্রমশ তার আগের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কীর্তন গানের পুনরুদ্ধার, পুন:চর্চা, তার সংরক্ষণ  এবং আরও অগ্রগতির লক্ষে  ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টার ও দেবুজ দরবারের যৌথ উদ্যোগে একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা এবং ডকুমেন্টেশন প্রোগ্রামের কর্মসুচি নেওয়া হয়েছে। তার প্রাথমিক পদক্ষেপ এদিন শুরু হল।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

kirtan

sri chaitanya

research Academy


আরও খবর


খবরের মুভি