Hindu scripture: পৃথিবীর পুরনো সূর্যগ্রহণের সূত্র লিপিবদ্ধ রয়েছে হিন্দুদের ঋগ্বেদে, কীভাবে জানেন?
ঋগ্বেদের অংশ বিশেষ। প্রতীকী চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ঋগ্বেদে (Rigveda solar eclipse) লুকিয়ে রয়েছে ৬০০০ বছরের পুরনো মহাজাগতিক বিস্ময়। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতের প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির (Hindu scripture) মধ্যে ঋগ্বেদ অন্যতম প্রধান গ্রন্থ। ধর্মশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র হিসেবেও এই গ্রন্থের বিশেষ মান্যতা রয়েছে। কিন্তু নিছক আধ্যাত্মিক কথাই এর সারবস্তু নয়, এর মধ্যে রয়েছে মহাজাগতিক ঘটনাবলীর বিশেষ রেকর্ডও। সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও একই দাবি তুলেছেন। জানা গিয়েছে, বিশ্বের সব থেকে পুরনো সূর্য গ্রহণের তথ্য সূত্র রয়েছে এই হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে। এই গ্রন্থ সুপ্রাচীন হলেও তার মধ্যে মহাজাগতিক নানা ঘটনার কার্য-কারণ সম্পর্কের বিবরণ গ্রন্থিত করায়, ভারতীয়রা কতটা প্রাজ্ঞ ছিলেন, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে।
ঋগ্বেদ (Rigveda solar eclipse) সংকলিত হয়েছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। তবে এই শাস্ত্র মূলত ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে লেখা। একই ভাবে নানা রকম ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং কিছু কিছু সূক্তের ব্যাখ্যাও রয়েছে। সময় এবং যুগের পরিসরে নানা বিষয় এখানে সঙ্কলিত হয়েছে। তবে কোনও একজন বিশেষ ব্যক্তি এই বেদ লেখেননি। সম্প্রতি মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মায়াঙ্ক ভাহিয়া এবং জাপানের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির মিৎসুরু সোমার, সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য এই গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এই দাবি করেছেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, আনুমানিক ৬০০০ বছরের আগের সূর্য গ্রহণের কথা এই ঋগ্বেদে রয়েছে।
দুই বিজ্ঞানী ঋগ্বেদ (Rigveda solar eclipse) নিয়ে অনেক দিন ধরে গবেষণা করছিলেন। তাঁরা বেশ কিছু অধ্যায় নিবিড়ভাবে পাঠ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, সূর্যকে বিদ্ধ করেছে অন্ধকার এবং এক ‘জাদুবিদ্যা’ অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। একই ভাবে হিন্দু পৌরাণিক (Hindu scripture) কাহিনিগুলিতে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণকে রাহু এবং কেতুর গ্রাস হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। অনেকের মতে, ঋগ্বেদ সংকলিত হয়েছে, রাহু এবং কেতুর কাহিনি নির্মাণের অনেক আগেই। এই গ্রন্থের মধ্যে সূর্যকে অন্ধকারে আবিষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। আর এই ঘটনাকেই বর্তমান বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণ বলেছেন। ফলে হিন্দু সমাজের পণ্ডিতেরা যে ভাবে সূর্যের গ্রহণকে নজরে এনেছিলেন তা সত্যই ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরার ভাবনাকে উৎকর্ষের জায়গায় নিয়ে গিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই ৬০০০ বছরের পুরনো সময়কে ঋগ্বেদে (Rigveda solar eclipse) চিহ্নিত করলেন? উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই গ্রন্থের মধ্যে অনুচ্ছেদগুলিতে কালপুরুষে ঘটতে থাকা মহাবিষুব রেখার কথারও উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রহণ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, এই গ্রহণ শুরু হয়েছিল শরৎকালীন বিষুবের তিন দিন আগে। এ থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণটির একটি কালপরিক্রমাকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। সূর্য গ্রহণ সব জায়গা থেকে সমান ভাবে দেখা যায় না। কোথাও পূর্ণ গ্রহণ আবার কোথাও আংশিক গ্রহণ দেখা যায়। ঋগ্বেদের সময়ের রচয়িতাদের অবস্থান ধরে কবে পূর্ণ গ্রহণ আর কবে আংশিক গ্রহণ ছিল, তাও চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুনঃ পরের শুনানি ১৭ই, আরজি করকাণ্ডে সিবিআইকে দ্বিতীয় স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশের সুপ্রিম-নির্দেশ
বিজ্ঞানীরা মূলত দুটি তারিখ নির্ণয় করেছেন। প্রথমটি ৪২০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ২২ অক্টোবর, দ্বিতীয়টি ৩৮১১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৯ অক্টোবর। এখনও পর্যন্ত সূর্যগ্রহণের (Rigveda solar eclipse) প্রাচীনতম রেকর্ড হিসেবে ধরা হয় সিরিয়ার একটি মাটির টালি এবং আয়ারল্যান্ডের একটি শিলা খোদাইকে। সিরিয়ান টালিটিতে যে গ্রহণের ছবি ছিল তা ১৩৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা ১২২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়কার। আইরিশ শিলা খোদাইটিতে যে সূর্যগ্রহণের কথা বলা আছে, তা ৩৩৪০ খ্রীস্টপূর্বাব্দের সময়ের বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য ঋগ্বেদে বর্ণিত সূর্যগ্রহণের (Rigveda solar eclipse) তারিখ এই দুই শিলাখণ্ড থেকেও পুরনো। ফলে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট যে, ভারতের জ্ঞান পরম্পরা অনেক উন্নত এবং আধুনিক ছিল। আজকের দিনের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে অনুসন্ধান করেছেন সেই সময়ের মাপকে। পৃথিবীর আদিম জ্ঞানকাণ্ডের যাত্রা যে ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু বা হিন্দু সভ্যতার মূলসূত্র থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই কথারও ইঙ্গিত বহন করে এই ঋগ্বেদ (Hindu scripture)-এর তথ্য। তাই ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতিকে আরও নিবিড় ভাবে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।