মাত্র এক টাকায় তেলেভাজা, অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি! কোথায় পাবেন?
Self_Reliance
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাত্র এক টাকায় তেলেভাজা বিক্রি করছেন হাওড়ার সলপ বাজারের গোপালচন্দ্র দে (Self Reliance)। তাও এক-দু' বছর নয়, বিগত ৩০ বছর ধরে। এই দুর্মূল্যের বাজারে যেখানে দৈনন্দিন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, সেখানে মাত্র এক টাকায় মিলছে গরমাগরম আলুর চপ, ফুলুরি, বেগুনি। এছাড়াও সিঙাড়া, কচুরি, নিমকিও পাওয়া যাচ্ছে এক টাকা দামেই। ডোমজুড়ের সলপ বাজারে সপ্তাহে প্রতিদিন দু' বেলাই স্থানীয় মানুষের রসনাতৃপ্তি ঘটিয়ে চলেছেন গোপালবাবু, মাত্র এক টাকাতে।
ন্যূনতম ছ' টাকার নিচে কিছু তো মেলেই না!
বর্ষাকালে গরমাগরম তেলেভাজা সহযোগে মুড়ির সঙ্গে বাঙালির নস্টালজিক যোগাযোগ। বিকেলের আড্ডা বা ঘরোয়া জলখাবার, তেলেভাজা-মুড়ি বাঙালির পছন্দের খাদ্য তালিকায় সব সময়ই 'হট ফেভারিট'। সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরলের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে তেলেভাজা-মুড়ি। কোভিড অতিমারির জেরে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিশেষত সর্ষের তেলের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই খাওয়ায় লাগাম টানতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মুড়ি-তেলেভাজাও সেই লাগাম টানার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। কলকাতা বা হাওড়ার যে কোনও তেলেভাজার দোকানে ন্যূনতম ছ' টাকার নিচে কিছু মেলে না। কিন্তু সলপ বাজারের গোপালচন্দ্র দে-র তাতে কিছু যায় আসে না। তিনি ওই এক টাকাতেই বেচে চলেছেন (Self Reliance) গরম তেলেভাজা। তাই বলে খাবারের গুণগত মানের সঙ্গে আপস করতে রাজি নন তিনি। লাভক্ষতির কথা মাথায় না রেখে স্থানীয় মানুষের হাতে এই নামমাত্র দামেই টাটকা খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি।
বয়স বেড়েছে, উৎসাহ এতটুকু কমেনি (Self Reliance)
আদি বাড়ি হাওড়ার আমতায়। আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। তাই রুটি-রুজির টানে বাবার হাত ধরে চলে আসেন ডোমজুড়ের সলপে। বছর পঞ্চাশেক আগে ডোমজুড়ের সলপ বাজারে রাস্তার ধারে পান-বিড়ির দোকান করেন তিনি (৬৫)। কিন্তু ব্যবসায় সেভাবে লাভ না হওয়ায় বাবার কথামতো ৩০ বছর আগে তেলেভাজার দোকান খোলেন। ব্যস, শুরুতেই ছক্কা। ১ টাকায় গোপালবাবু চপ, মুড়ি, বেগুনি, কচুরি, ডালের বড়া, সিঙ্গারা, নিমকি সহ নানা সুস্বাদু খাবার বিক্রি করতে থাকেন (Self Reliance)। জিভে জল আনা সেই খাবারের স্বাদ পেতে খদ্দেররাও ভিড় জমাতে শুরু করেন। বয়স বাড়লেও গোপালবাবু একই উৎসাহে কাজ করে চলেছেন। এক ছেলে মাঝে মাঝে বাজার করে দিয়ে গেলেও কার্যত এক হাতেই তিনি দোকান সামলান। সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যাবেলায় নিয়ম করে বিক্রি করেন বাঙালির প্রিয় তেলেভাজা।
'যতদিন বেঁচে থাকব, এই এক টাকাতেই তেলেভাজা বেচব' (Self Reliance)
সলপ বাজারের মোড়েই একচিলতে আটপৌরে দোকান। ব্যবসায় লাভক্ষতির প্রশ্নে তিনি বলেন, লাভ কম হলেও তাঁর পুষিয়ে নিতে অসুবিধা হয় না। ফলে বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে। আগে পান, বিড়ি, সিগারেট বেচতেন গোপালবাবু। বিগত ৩০ বছর ধরে তেলেভাজা, মুড়ি, চানাচুর ইত্যাদি বিক্রি করছেন। তাঁর নিজের কথায়, যতদিন বেঁচে থাকব, এই এক টাকাতেই তেলেভাজা বেচব। সর্ষের তেলের দাম বাড়লেও খাবারের দাম ওই এক টাকাই থাকবে! দুর্মূল্যের বাজারে সামান্য টাকায় মানুষের হাতে খাবার তুলে দিলে মানুষ খুশি হয়। আনন্দ পায়। মানুষের এই আনন্দটুকুই আমার কাছে বিরাট পাওয়া। জানাচ্ছেন গোপালবাবু (Self Reliance)।
কী বলছেন ক্রেতারা?
গোপালবাবুর দোকানে নিয়মিত খাবার কেনেন ঝাঁপরদহ এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষক জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ছাত্র বয়স থেকে গোপালদাকে দেখছি। অত্যন্ত হাসিখুশি, সৎ ও ভালো মানুষ। কোনও ফালতু ঝুটঝামেলার মধ্যে নেই। এক টাকাতে তেলেভাজা-মুড়ি বিক্রির ফলে গরিব মানুষ, পথচলতি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। আর এক ক্রেতা লক্ষ্মীকান্ত সাউ প্রায় ৩০ বছর ধরে তেলেভাজা কিনছেন গোপালবাবুর (Self Reliance) দোকানে। কম পয়সায় এত সুস্বাদু মুখরোচক খাবার নিঃসন্দেহে ভালো বলে মনে করেন তিনি। এই দুর্মূল্যের বাজারে এক টাকা করে খাবার পাওয়া মানে সাধারণ মানুষের পয়সা বেঁচে যাচ্ছে, মন্তব্য লক্ষ্মীকান্তবাবুর।
বাবা পরলোকগত। কিন্তু তাঁর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন গোপালবাবু। ৩০ বছর ধরে তিনি ওই এক টাকাতেই খরিদ্দারকে বেচে চলেছেন গরম তেলেভাজা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।