img

Follow us on

Friday, Nov 22, 2024

Shyama Prasad Mukherjee: আজ, ৬ জুলাই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন, জানুন তাঁর জীবনকথা

BJS: জনসঙ্ঘ গঠন থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিতে আন্দোলন, জন্মদিনে জানুন শ্যামাপ্রসাদের কর্মকাণ্ড

img

ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (সংগৃহীত ছবি)

  2024-07-05 14:25:57

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিজেপির পূর্বতন ভারতীয় জনসঙ্ঘ গঠন, পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তানে যেতে না দেওয়া, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিতে আন্দোলন-এই সব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বাঙালি নাম। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আজ শনিবার তাঁর জন্মদিন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Shyama Prasad Mukherjee) জন্ম ১৯০১ সালের ৬ জুলাই। ‘বাংলার বাঘ’ বলে খ্যাত আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও যোগমায়াদেবীর পুত্র একাধারে ছিলেন শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে একজন জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা। তাঁর জন্মস্থান কলকাতার ৭৭ রুসা রোডে (বর্তমানে আশুতোষ মুখার্জি রোড)। জন্মদিনে আমরা জানব শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনী।

শিক্ষাজীবন ও বিবাহ

- ১৯০৬ সালের ২৩ জুলাই কলকাতার ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। 

- ১৯১৭ সালে মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় মেধা বৃত্তি (১০ টাকা প্রতি মাসে) সহ উত্তীর্ণ হন। 

- ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আর্টসে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

- ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন, ইংরেজি অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। 

- ১৯২২ সালের ১৬ এপ্রিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shyama Prasad Mukherjee) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ডাঃ বেণীমাধব চক্রবর্তীর কন্যা সুধাদেবীর সঙ্গে। 

- ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো (Shyama Prasad Mukherjee)

১৯২৪ সালের ২৫ মে বিহারের পাটনায় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ঘটনা গভীর রেখাপাত করে যুবক শ্যামাপ্রসাদের মনে। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, পিতার মৃত্যুতে তাঁর জীবন থেকে সমস্ত আনন্দ উধাও হয়ে যায়। এরপরেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মাত্র ২৩ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯২৬ সালে আইন পড়তে তিনি ইংল্যান্ড যান। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সম্মেলনে ওই বছরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। কলকাতায় ফিরে আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে যোগদান করেন। তবে হাইকোর্টের কর্মজীবনকে তিনি খুব বেশি গুরুত্ব দেননি। ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বিধানসভায় প্রবেশ করেন। ১৯৩৩ সালে তাঁর জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে, প্রয়াত হন স্ত্রী সুধাদেবী।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ 

১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই সময়ে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। নতুন কোর্স হিসেবে এগ্রিকালচারের ওপর ডিপ্লোমা তিনিই চালু করেন। চিনা ও তিব্বতীয় ভাষাশিক্ষার ওপরে কোর্স চালু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর আমলে নতুনভাবে তৈরি হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি হল। তিনি (Shyama Prasad Mukherjee) উপাচার্য থাকাকালীন প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করতেন। ১৯৩৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি প্রথমবারের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ জানান বক্তব্য রাখতে।

হিন্দু মহাসভায় যোগদান 

১৯৩৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি নির্বাচিত হন। ওই বছরেই হিন্দু মহাসভায় যোগদান করেন তিনি। ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৩৯ সালে বিনায়ক দামোদর সাভারকারের সভাপতিত্বে কলকাতায় বসে হিন্দু মহাসভার অধিবেশন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪০ সালে তিনি হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন।

শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা 

১৯৪১ সালে সাম্প্রদায়িক মুসলিম লিগকে বাংলার ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার জন্য হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট হয় ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির। এই জোট জনপ্রিয় ছিল শ্যামা-হক মন্ত্রিসভা নামে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওই মন্ত্রিসভায় অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন।

দাঙ্গা বিধ্বস্ত বাংলায় উদ্বাস্তুদের পাশে 

১৯৪৪ সালে মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুরে বসে হিন্দু মহাসভার সর্বভারতীয় অধিবেশন। ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সে বছর থেকেই চালু করেন ‘ন্যাশনালিস্ট’ পত্রিকা। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ এবং নোয়াখালি দাঙ্গা করে মুসলিম লিগ। সে সময় আক্রান্ত হিন্দুদের পাশে থাকা, উদ্বাস্তুদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, সবটাই তিনি নিজে হাতে করেছিলেন। সে সময় তিনি তৈরি করেছিলেন হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গার্ড।

পশ্চিমবঙ্গ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা

১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় এক ভোটাভুটির মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় পশ্চিমবঙ্গ। বাঙালি হিন্দু পায় তার নিজস্ব বাসভূমি। মুসলিম লিগের হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের ভারত-ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shyama Prasad Mukherjee)। তারপর থেকে এই দিনটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’। হিন্দু সংখ্যাগুরু পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রতিনিধিদের ৫৮-২১ ভোটে বাংলা ভাগ করার পক্ষে রায় যায়। পৃথক হয় পশ্চিমবঙ্গ। সরকার ২০ জুনকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণাও করে।

স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী

১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট নেহরুর মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শিল্পমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর হিন্দু মহাসভাকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি। ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ স্থাপন, সিন্ধ্রি সার কারখানা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। খড়্গপুরে ভারতের প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি স্থাপনা, কলকাতার প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্থাপনার ভাবনা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বেড়ে চলে। হত্যা, লুন্ঠন, নারীর সম্ভ্রমহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫০ সালের ১৪ এপ্রিল নেহরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েও এর প্রতিবাদে লোকসভায় গর্জে ওঠেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং পদত্যাগ করেন।

ভারতীয় জনসঙ্ঘ (BJS) গঠন

দেশভাগের পরবর্তীকালে হিন্দু শরণার্থীদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের বন্দোবস্ত তিনিই করেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। একমাত্র জাতীয়তাবাদী সাংসদ হিসেবে তিনিই আইনসভায় হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হতেন। এমন সময় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল স্থাপনের উদ্দেশ্যে গুরুজি গোলওয়ালকারের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। রাজনীতি ক্ষেত্রে গুরুজি কয়েকজন স্বয়ংসেবককে পাঠান, তাঁরা হলেন, দীনদয়াল উপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আদবানি, জগদীশ মাথুর, সুন্দর সিং ভাণ্ডারি প্রমুখ। ১৯৫১ সালের ২১ অক্টোবর দিল্লির রাঘোমাল গার্লস স্কুলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন ভারতীয় জনসঙ্ঘ (BJS)। তিনিই ছিলেন প্রথম সভাপতি। প্রতীক ছিল প্রদীপ। দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জনসঙ্ঘ তিনটি আসন পায়। যার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতা থেকে জেতেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজে।

জেলবন্দি অবস্থায় রহস্যজনক মৃত্যু  

দেশের প্রধান বিরোধী কণ্ঠস্বর তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলোপের জন্য তিনি আন্দোলন শুরু করেন। দাবি ছিল ‘এক প্রধান-এক নিশান-এক বিধান’। কারণ কাশ্মীরের জন্য ছিল তখন আলাদা পতাকা। কাশ্মীরে চালু ছিল না ভারতের সংবিধানও। বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল ৩৭০ ধারার মাধ্যমে। এই ধারা কার্যত কাশ্মীরকে পৃথক করে রেখেছিল ভারত থেকে। কাশ্মীরে প্রবেশ করতে ভারতীয়দের লাগত অনুমতিও। এর প্রতিবাদ করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বিনা পারমিটে কাশ্মীরে প্রবেশ করতে গেলে ফারুক আবদুল্লার সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে ১৯৫৩ সালের ১১ মে। জেলবন্দি অবস্থায় তাঁর (Shyama Prasad Mukherjee) রহস্যজনক মৃত্যু হয় ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

Kashmir

bangla news

Bengali news

West Bengal Foundation Day

Shyama Prasad Mukherjee

Noakhali Genocide

Article 370

great calcutta killing

birth dy of shyam prasad mukherjee

bjs


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর