Kathamrita: “সংসারে দাসীর মতো থাকবে”......“কথামৃত” থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
কমলকুটিরে শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীযুক্ত কেশব সেন
শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেনের বাটি হইয়া শ্রীযুক্ত কেশব সেনের কমলকুটির নামক বাটিতে আসিয়াছেন। সঙ্গে রাম, মনোমোহন, সুরেন্দ্র, মাস্টার প্রভৃতি অনেকগুলি ভক্ত। সকলে দ্বিতল হল ঘরে উপবেশন করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত প্রতাপ মজুমদার, শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য প্রভৃতি ব্রাহ্মভক্তগণও উপস্থিত আছেন।
ঠাকুর শ্রীযুক্ত কেশবকে বড় ভালবাসেন। যখন বেলঘরের বাগানে সশিষ্য তিনি সাধন-ভজন করিতেছিলেন, অর্থাৎ ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মাঘোৎসবের পর—কিছুদিনের মধ্যে ঠাকুর একদিন বাগানে গিয়া তাঁহার সহিত দেখা করিয়াছিলেন। সঙ্গে ভাগিনেয় হৃদয়রাম। বেলঘরের এই বাগানে তাঁহাকে বলেছিলেন, তোমারই ল্যাজ খসেছে, অর্থাৎ তুমি সব ত্যাগ করে সংসারের বাহিরেও থাকতে পার; আবার সংসারেও থাকতে পার; যেমন বেঙাচির ল্যাজ খসলে জলেও থাকতে পারে, আবার ডাঙাতেও থাকতে পারে। পরে দক্ষিণেশ্বরে, কমলকুটিরে, ব্রাহ্মসমাজ ইত্যাদি স্থানে অনেকবার ঠাকুর কথাচ্ছলে তাঁহাকে উপদেশ দিয়াছিলেন, নানা পথ দিয়া, নানা ধর্মের ভিতর দিয়া ঈশ্বরলাভ হতে পারে। মাঝে মাঝে নির্জনে সাধন-ভজন করে ভক্তিলাভ করে সংসারে থাকা যায়, জনকাদি ব্রহ্মজ্ঞানলাভ করে সংসারে ছিলেন; ব্যাকুল হয়ে তাঁকে ডাকতে হয়, তবে দেখা দেন; তোমরা যা কর, নিরাকার সাধন, সে খুব ভাল। ব্রহ্মজ্ঞান হলে ঠিক বোধ করবে—ঈশ্বর সত্য আর সব অনিত্য, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। সনাতন হিন্দু ধর্মে সাকার নিরাকার দুই মানে; নানাভাবে ঈশ্বরের পূজা করে—শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য মধুর। রোশনচৌকিওয়ালারা একজন শুধু পোঁ ধরে বাজায় অথচ তার বাঁশীর সাত ফোকর আছে। কিন্তু আর একজন তারও সাত ফোকর আছে, সে নানা রাগরাগিণী বাজায়।
তোমরা সাকার মানো না, তাতে কিছু ক্ষতি নাই, নিরাকারের নিষ্ঠা থাকলেই হল। তবে সাকারবাদীদের টানটুকু নেবে। মা বলে তাঁকে ডাকলে ভক্তি-প্রেম আরও বাড়বে। কখন দাস্য, কখন বাৎসল্য, কখন মধুর ভাব। কোন কামনা নাই তাঁকে ভালবাসি, এটি বেশ। এর নাম অহেতুকী ভক্তি। বেদ, পুরাণ, তন্ত্রে এক ঈশ্বরেরই কথা আছে ও তাঁহার লীলার কথা; জ্ঞান ভক্তি দুইই আছে। সংসারে দাসীর মতো থাকবে, দাসী সব কাজ করে, কিন্তু দেশে মন পড়ে আছে। মনিবের ছেলেদের মানুষ করে, বলে, আমার হরি, আমার রাম, কিন্তু জানে, ছেলে আমার নয়। তোমরা যে নির্জনে সাধন করছ, এ খুব ভাল, তাঁর কৃপা হবে। জনক রাজা নির্জনে কত সাধন করেছিলেন, সাধন করলে তবে তো সংসারে নির্লিপ্ত হওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ “গুরুর উপদেশ অনুসারে চলতে হয়, বাঁকাপথে গেলে ফিরে আসতে কষ্ট হবে”
আরও পড়ুনঃ “পাপ করলে তার ফল পেতে হবে! লঙ্কা খেলে তার ঝাল লাগবে না?”
আরও পড়ুনঃ “ব্যাকুলতা না এলে কিছুই হয় না, সাধুসঙ্গ করতে করতে ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।