Kathamrita: “শ্রীরামকৃষ্ণের কেশবের প্রতি স্নেহ”......‘কথামৃত’ থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) কেশবের প্রতি স্নেহ—জগন্মাতার কাছে ডাব-চিনি মানা
আজ কমলকুটিরে সেই বৈঠকখানাঘরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে উপবিষ্ট। ২রা এপ্রিল ১৮৮২, বেলা ৫টা। কেশব ভিতরের ঘরে ছিলেন, তাঁহাকে সংবাদ দেওয়া হইল। তিনি জামা-চাদর পরিয়া আসিয়া প্রণাম করিলেন। তাঁহার ভক্তবন্ধু কালীনাথ বসু পীড়িত, তাঁহাকে দেখিতে যাইতেছেন। ঠাকুর আসিয়াছেন, কেশবের আর যাওয়া হইল না। ঠাকুর বলিতেছেন, তোমার অনেক কাজ, আবার খপরের কাগজ লিখতে হয়; সেখানে (দক্ষিণেশ্বরে) যাবার অবসর নাই; তাই আমিই তোমায় দেখতে এসেছি। তোমার অসুখ শুনে ডাব-চিনি মেনেছিলুম; মাকে বললুম, মা! কেশবের যদি কিছু হয়, তাহলে কলিকাতায় গেলে কার সঙ্গে কথা কইব।
শ্রীযুক্ত প্রতাপাদি ব্রাহ্মভক্তদের সহিত শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) অনেক কথা কহিয়াছেন। কাছে মাস্টার বসিয়া আছেন দেখিয়া তিনি কেশবকে বলিতেছেন, ইনি কেন ওখানে (দক্ষিণেশ্বরে) যান না; জিজ্ঞাসা করত গা; এত ইনি বলেন, মাগছেলেদের উপর মন নাই। মাস্টার সবে এক মাস ঠাকুরের কাছে যাতায়াত করিতেছেন। শেষে যাইতে কয়দিন বিলম্ব হইয়াছে তাই ঠাকুর এরূপ কথা বলিতেছেন। ঠাকুর বলিয়া দিয়াছিলেন, আসতে দেরি হলে আমায় পত্র দেবে।
ব্রাহ্মভক্তেরা শ্রীযুক্ত সমাধ্যায়ীকে দেখাইয়া ঠাকুরকে বলিতেছেন, ইনি পণ্ডিত, বেদাদি শাস্ত্র বেশ পড়িয়াছেন। ঠাকুর বলিতেছেন, হাঁ এঁর চক্ষু দিয়া ভিতরটি দেখা যাচ্ছে, যেমন সার্সীর দরজার ভিতর দিয়া ঘরের ভিতরকার জিনিস দেখা যায়।
শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্য গান গাইতেছেন। গান গাইতে গাইতে সন্ধ্যার বাতি জ্বালা হইল, গান চলিতে লাগিলেন। গান শুনিতে শুনিতে ঠাকুর হঠাৎ দণ্ডায়মান—আর মার নাম করিতে করিতে সমাধিস্থ। কিঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া নিজেই নৃত্য করিতে করিতে গান ধরিলেনঃ
সুরা পান করি না আমি সুধা খাই জয় কালী বলে,
মন-মাতালে মাতাল করে মদ-মাতালে মাতাল বলে।
গুরুদত্ত গুড় লয়ে, প্রবৃত্তি তায় মশলা দিয়ে;
জ্ঞান শুঁড়িতে চোঁয়ায় ভাঁটি পান করে মোর মন মাতালে।
মূল মন্ত্র যন্ত্রভরা, শোধন করি বলে তারা;
প্রসাদ বলে এমন সুরা খেলে চতুর্বর্গ মেলে।
শ্রীযুক্ত কেশবকে ঠাকুর স্নেহপূর্ণ নয়নে দেখিতেছেন। যেন কত আপনার লোক; আর যেন ভয় করিতেছেন, কেশব পাছে অন্য কারু, অর্থাৎ সংসারে হয়েন! তাঁহার দিকে তাকাইয়া আবার গান ধরিলেন;
কথা বলতে ডরাই; না বললেও ডরাই
মনের সন্দ হয়; পাছে তোমা ধনে হারাই হারাই।।
আমরা জানি যে মন-তোর; দিলাম তোরে সেই মন্তোর।
এমন মন তোর, যে মন্ত্রে বিপদেতে তরী তারই।।
আমরা জানি যে মন-তোর সেই মন্তোর; এখন মনতোর। অর্থাৎ সব ত্যাগ করে ভগবানকে ডাক,--তিনিই সত্য আর সব অনিত্য; তাঁকে না লাভ করলে কিছুই হল না! এই মহামন্ত্র।
আবার উপবেশন করিয়া ভক্তদের সঙ্গে কথা কহিয়াছেন।
তাঁহাকে জল খাওয়াইবার উদযোগ হইতেছে। হলঘরের একপাশে একটি ব্রাহ্মভক্ত পিয়ানো বাজাইতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) হাস্যবদন, বালকের ন্যায় পিয়ানোর কাছে গিয়া দাঁড়াই দেখিতেছেন। একটু পরেই অন্তঃপুরে তাঁহাকে লইয়া যাওয়া হইল। জল খাইবেন। আর মেয়েরাও প্রণাম করিবেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জলসেবা হইল। এইবারেই তিনি গাড়িতে উঠিলেন। ব্রাহ্মভক্তেরা সকলেই গাড়ির কাছে দাঁড়াইয়া আছেন। কমলকুটির হইতে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরাভিমুখে যাত্রা করিল।
আরও পড়ুনঃ“এই স্থানে নরেন্দ্রের গান ঠাকুর প্রথমে শুনেন ও তাঁহাকে দক্ষিণেশ্বরে যাইতে বলেন”
আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”
আরও পড়ুনঃ "দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।