Kathamrita: “যোগীর মন সর্বদাই ঈশ্বরেতে থাকে”……‘কথামৃত’ থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে নরেন্দ্রাদি অন্তরঙ্গ ও অন্যান্য ভক্তসঙ্গে
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
কামিনী-কাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত-সাধনা ও যোগতত্ত্ব
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ও যোগতত্ত্ব—যোগভ্রষ্ট-যোগাবস্থা-নিবতনিস্কম্পমিব প্রদীপম্—যোগের ব্যাঘাত।
কারু কারু যোগীর লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু তাদের সাবধান হওয়া উচিত। কামিনী-কাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত। যোগভ্রষ্ট হয়ে সংসারে এসে পড়ে,--হয়তো ভোগের বাসনা কিছু ছিল। সেইগুলো হয়ে গেলে আবার ঈশ্বরের দিকে যাবে,--আবার সেই যোগের অবস্থা। সটকা কল জানো?
মাস্টার—আজ্ঞে না—দেখি নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)-ও-দেশে আছে। বাঁশ নইয়ে রাখে, তাতে বঁড়শি লাগানো দড়ি বাঁধা থাকে। বঁড়শিতে টোপ দেওয়া হয়। মাছ যেই টোপ খায় অমনি সড়াৎ করে বাঁশটা উঠে পড়ে। যেমন উপরে উঁচুদিকে বাঁশের মুখ ছিল সেইরূপই হয়ে যায়।
নিক্তি, একদিকে ভার পড়লে নিচের কাঁটা উপরের কাঁটার সঙ্গে এক হয় না। নিচের কাঁটাটি মন—উপরের কাঁটাাটি ঈশ্বর। নিচের কাঁটার সহিত এক হওয়ার নাম যোগ।
মন স্থির না হলে যোগ হয় না। সংসার-হওয়া মানরূপ দীপকে সর্বদা চঞ্চল করছে। ওই দীপটা যদি আদপে না নড়ে তাহলে ঠিক যোগের অবস্থা হয়ে যায়।
কামিনী-কাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত। বস্তুত বিচার করবে। মেয়েমানুষের শরীরে কি আছে—রক্ত, মাংস, চর্বি, নারীভুঁড়ি, কৃমি, মুত, বিষ্ঠা এই সব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?
আমি রাজসিক ভাবের আরোপ করতাম—ত্যাগ করবার জন্য। সাধ হয়েছিল সচ্চা জরির পোশাক পরব, আংটি আঙুল দেব, নল দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক খাব। সাচ্চা জরির পোশাক পরলাম—এরা (মথুরবাবু) আনিয়ে দিলে। খানিকক্ষণ পরে মনকে বললাম, মন এর নাম সাচ্চা জরির পোশাক! তখন সেগুলোকে খুলে ফেলে দিলাম। আর ভাল লাগল না। বললাম, মন, এরই নাম শাল—এরই নাম আঙটি! এরই নাম নল দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক খাওয়া! সেই যে সব ফেলে দিলাম আর মনে উঠে নাই।
সন্ধ্যা আগত প্রায়। ঘরের দক্ষিণ-পূর্বের বারান্দায়, ঘরের দ্বারের কাছে ঠাকুর মণির সহিত নিভৃতে কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মণির প্রতি)—যোগীর মন সর্বদাই ঈশ্বরেতে থাকে, সর্বদাই আত্মস্থ। চক্ষু ফ্যালফ্যালে, দেখলেই বুঝা যায়। যেমন পাখি ডিমে তা দিচ্ছে—সব মনটা সেই ডিমের দিকে, উপরে নামমাত্র চেয়ে রয়েছে! আচ্ছা আমায় সেই ছবি দেখাতে পার?
মণি—যে আজ্ঞা। মাই চেষ্টা করব যদি কোথাও পাই।
আরও পড়ুনঃ “কামিনী-কাঞ্চনের ঝড় তুফানগুলো কাটিয়ে গেলে তখন শান্তি”
আরও পড়ুনঃ “হিন্দুরা জল খাচ্ছে একঘাটে বলছে জল; মুসলমানরা আর-এক ঘাটে খাচ্ছে বলছে পানি”
আরও পড়ুনঃ “সচ্চিদানন্দলাভ হলে সমাধি হয়, তখন কর্মত্যাগ হয়ে যায়”
আরও পড়ুনঃ “তিনি দাঁড়াইলে ঠাকুর বলিলেন, বলরাম! তুমি? এত রাত্রে?”
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।