Kathamrita: “বদ্ধজীবেরা সংসারে কামিনী-কাঞ্চনে বদ্ধ হয়েছে”......কথামৃত' থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ
ভিন্ন প্রকৃতি--Are all men equal?)
ঈশ্বরের সৃষ্টিতে নানারকম জীবজন্তু, গাছপালা আছে। জানোয়ারের মধ্যে ভাল আছে মন্দ আছে। বাঘের মতো হিংস্র জন্তু আছে। গাছের মধ্যে অমৃতের ন্যায় ফল হয়, এমন আছে; আবার বিষফলও আছে। তেমনি মানুষের মধ্যে ভাল আছে, মন্দও আছে, সাধু আছে, অসাধুও আছে, সংসারী জীব আছে আবার ভক্ত আছে।
নিত্যজীবঃ যেমন নারদাদি। এরা সংসারে থাকে জীবের মঙ্গলের জন্য – জীবদিগকে শিক্ষা দিবার জন্য।
বদ্ধজীবঃ বিষয়ে আসক্ত হয়ে থাকে, আর ভগবানকে ভুলে থাকে – ভুলেও ভগবানের চিন্তা করে না।
মুমুক্ষজীবঃ যারা মুক্ত হবার ইচ্ছা করে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ মুক্ত হতে পারে, কেউ বা পারে না।
মুক্তজীবঃ যারা সংসার কামিনী-কাঞ্চন আবদ্ধ নয় – যেমন সাধু মহাত্মারা, যাদের মনে বিষয়বুদ্ধি নাই, আর যারা সর্বদা হরিপাদপদ্ম (Sri Ramakrishna Kathamrita) চিন্তা করে।
“যেমন জাল ফেলা হয়েছে পুকুরে। দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না – এরা নিত্যজীবের উপমাস্থল। কিন্তু সব মাছই জালে পড়ে। এদের মধ্যে কতকগুলি পালাবার চেষ্টা করে। এরা মুমুক্ষজীবের উপমাস্থল। কিন্তু সব মাছ পালাতে পারে না। দু-চারটে ধপাঙ ধপাঙ করে জাল থেকে পালিয়ে যায়, তখন জেলে বলে, ওই একটা মস্ত মাছ পালিয়ে গেল! কিন্তু যারা জালে পড়েছে, অধিকাংশই পালাতে পারে না; আর পালাবার চেষ্টাও করে না। বরং জাল মুখে করে, পুকুরের পাঁকের ভিতরে গিয়ে চুপ করে মুখ গুঁজরে শুয়ে থাকে – মনে করে, আর কোন ভয় নাই, আমরা বেশ আছি। কিন্তু জানে না যে জেলে হড় হড় করে টেনে আড়ায় তুলবে। এরাই বদ্ধজীবের উপমাস্থল।”
সংসারী লোক – বদ্ধজীব (Sri Ramakrishna Kathamrita)
বদ্ধজীবেরা সংসারে কামিনী-কাঞ্চনে বদ্ধ হয়েছে, হাত-পা বাঁধা। আবার মনে করে যে, সংসারের ওই কামিনী ও কাঞ্চনেতেই সুখ হবে, আর নির্ভয়ে থাকবে। জানে না যে ওতেই মৃত্যু হবে। বদ্ধজীব যখন মরে, তার পরিবার বলে, তুমি তো চললে, আমার কি করে গেলে? আবার এমনি মায়া যে, প্রদীপটাতে বেশি সলতে জ্বললে বদ্ধজীব বলে, তেল পুড়ে যাবে সলতে কমিয়ে দাও। এদিকে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে রয়েছে!
বদ্ধজীবেরা ঈশ্বরচিন্তা (Sri Ramakrishna Kathamrita) করে না। যদি অবসর হয় তাহলে হয় আবোল-তাবোল ফালতু গল্প করে, নয় মিছে কাজ করে। জিজ্ঞাসা করলে বলে, আমি চুপ করে থাকতে পারিনা, তাই বেড়া বাঁধছি। হয়তো সময় কাটে না দেশে, তাস খেলতে আরম্ভ করে।” (সকলে স্তব্ধ)
তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ, তৃতীয় দর্শন
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।