Kathamrita: মাস্টার ভাবিতে লাগিলেন, “এ সৌম্য কে? যাঁহার কাছে ফিরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে!" ... 'কথামৃত' থেকে শুনুন সেই অমৃত বাণী
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। সংগৃহীত চিত্র।
এটি রাসমণির দেবালয়
সিধুর সঙ্গে ঘরের বাহিরে আসিতে না আসিতে আরতির মধুর শব্দ হইতে লাগিল। এককালে কাঁসর, ঘণ্টা, খোল, করতালি বাজিয়ে উঠল। বাগানের দক্ষিণসীমান্ত হইতে নহবতের মধুর শব্দ আসিতে লাগিল। সেই শব্দ ভাগীরথীবক্ষে যেন ভ্রমণ করিতে করিতে অতিদূরে গিয়া কোথায় মিশিয়া যাইতে লাগিল। মন্দ মন্দ কুসুমগন্ধবাহী বসন্তানিল! সবে জ্যোৎস্না উঠিতেছে। ঠাকুরদের আরতির যেন চতুর্দিকে আয়োজন হইতেছে! মাস্টার দ্বাদশ শিবমন্দিরে, শ্রীশ্রী রাধাকান্তের মন্দিরে ও শ্রীশ্রীভবতারিণীর মন্দিরে আরতি দর্শন করিয়া পরম প্রীতিলাভ করিলেন। সিধু বলিলেন, “এটি রাসমণির দেবালয়। এখানে নিত্যসেবা। অনেক অতিথি, কাঙাল আসে।”
কথা কহিতে কহিতে ভবতারিণীর মন্দির হইতে বৃহৎ পাকা উঠানের মধ্য দিয়া পাদচারণ করিতে করিতে দুইজনে আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের সম্মুখে আসিয়া পড়িলেন। এবার দেখিলেন, ঘরের দ্বার দেওয়া (Sri Ramakrishna Kathamrita)।
এইমাত্র ধুনা দেওয়া হইয়াছে। মাস্টার ইংরেজী পড়িয়াছেন, ঘরে হঠাৎ প্রবেশ করিতে পারিলেন না। দ্বারদেশে বৃন্দে (ঝি) দাঁড়াইয়াছিল। জিজ্ঞাসা করিলেন, “হ্যাঁ গা, সাধুটি কি এখন এর ভিতর আছেন?”
বৃন্দে-- হ্যাঁ এই ঘরের ভিতর আছেন।
মাস্টার-- ইনি এখানে কত দিন আছেন –
মাস্টার—আচ্চা, ইনি এখানে কতদিন আছেন?
বৃন্দে—তা অনেকদিন আছেন –
মাস্টার—আচ্ছা, ইনি কি খুব বই-টই পড়েন?
বৃন্দে-- আর বাবা বই-টই পড়েন?
বৃন্দে—আর বাবা বই-টই! সব ওঁর মুখে!
মাস্টার সবে পড়াশুনা করে এসেছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বই পড়েন না শুনে আর অবাক্ হলেন।
মাস্টার—সবে পড়াশুনা করে এসেছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বই পড়েন না শুনে আরও অবাক্ হলেন।
মাস্টার—আচ্ছা, ইনি বুঝি এখন সন্ধ্যা করবেন?—আমরা কি এ-ঘরের ভিতর যেতে পারি?—তুমি একবার খবর কিবে?
বৃন্দে—তোমার যাও না বাবা। গিয়ে ঘরে বস।
তখন তাঁহার ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখেন, ঘরে আর অন্য কেহ নাই। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ঘরে একাকী তক্তপোশের উপর বসিয়া আছেন। ঘরে ধুনা দেওয়া হইয়াছে ও সমস্ত দরজা বন্ধ। মাস্টার প্রবেশ করিয়াই বদ্ধাঞ্জলি হইয়া প্রণাম করিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বসিতে অনুজ্ঞা করিলেন তিনি ও সিধু মেঝেতে বসিলেন। ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় থাক, কি কর, বরাহনগরে কি করতে এসেছ” ইত্যাদি। মাস্টার সমস্ত পরিচয় দিলেন। কিন্তু দেখিতে লাগিলেন যে, ঠাকুর মাঝে মাঝে যেন অন্যমনস্ক হইতেছেন (Sri Ramakrishna Kathamrita)। পরে শুনিলেন, এরই নাম ভাব। যেমন কেহ ছিপ হাতে করিয়া মাছ ধরিয়া মাছ ধরিতে বসিয়াছে। মাছ আসিয়া টোপ খাইতে থাকিলে ফাতনা যখন নড়ে, সে ব্যক্তি যেমন শশব্যস্ত হইয়া ছিপ হাতে করিয়া ফাতনার দিকে একদৃষ্টে একমনে চাহিয়া থাকে, কাহারও সহিত কথা কয় না; এ- ঠিক সেইরূপ ভাব। পরে শুনিলেন ও দেখিলেন, ঠাকুর সন্ধ্যারপর এই রূপ ভাবান্তর হয়, কখন কখন তিনি একেবারে বাহ্যশূন্য হন!
মাস্টার – আপনি এখন সন্ধ্যা করবেন, তবে এখন আমরা আসি।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ভাবস্থ)-- না – সন্ধ্যা -- তা এমন কিছু নয়।
আর কিছু কথাবার্তার পর মাস্টার প্রণাম করিয়া বিদয় গ্রহণ করিলেন। ঠাকুর বলিলেন, “আবার এস”।
মাস্টার ফিরিবার সময় ভাবিতে লাগিলেন, “এ সৌম্য কে? যাঁহার কাছে ফিরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে। বই না পড়িলে কি মানুষ মহৎ হয়?—কি আশ্চর্য, আবার আসিতে ইচ্ছা হইতেছে। ইনি বলিয়াছেন, “আবার এস! কাল কি পরশু সকালে আসিব (Sri Ramakrishna Kathamrita)।”
তথ্যসূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, ২য় পরিচ্ছেদ, প্রথম দর্শন
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।