img

Follow us on

Thursday, Nov 21, 2024

Takshila University: রামায়ণেও উল্লেখ মেলে! জানুন প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে

সাড়ে দশহাজার আবাসিক ছাত্র, পাণিনি-চাণক্য-চরকের অধ্যাপনায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছিল তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

img

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (সংগৃহীত ছবি)

  2024-05-17 20:20:46

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তক্ষশীলা। অনেক ঐতিহাসিক একে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও বলে থাকেন। সিন্ধু নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন বৌদ্ধশাস্ত্রে, জাতকের কাহিনীতে। রামায়ণ-মহাভারতেও উল্লেখ মেলে তক্ষশীলার। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিখ্যাত প্রত্নতাত্বিক স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম তক্ষশীলার ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়টি সিন্ধু নদীর পূর্ব তীরে তক্ষশীলা শহরে অবস্থিত ছিল জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তক্ষশীলা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে জাতকের কাহিনীতে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। জানা যায়, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Takshila University) ১০,৫০০ জনেরও বেশি ছাত্র পড়াশোনা করতেন।

আরও পড়ুন: বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল প্রাচীন ভারতের বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়

সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও ভাব বিনিময়ের কেন্দ্র

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতবর্ষের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যে বাণিজ্যিক পথ সেখানেই অবস্থিত ছিল। অর্থাৎ তৎকালীন পারস্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকে যুক্ত করে যে বাণিজ্য পথ সেখানেই এর অবস্থান ছিল। এমন অবস্থানের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ছাত্র এবং পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন। যার ফলে তক্ষশীলা একটি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও ভাব বিনিময়ের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

কোন কোন বিষয় পড়ানো হতো?

বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, চিকিৎসা, দর্শন, সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, স্থাপত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং যুদ্ধবিদ্যার মতো বিষয়গুলিতে পঠন পাঠন চলত। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং সেখানকার অধ্যাপকরা ছাত্রদের বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করাতেন। পড়ুয়ারা বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার ব্যবহারিক দিকেও ছাত্ররা পারদর্শী হয়ে উঠতেন। ছাত্রদের মধ্যে বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা এই সমস্ত কিছুই বাড়ানো হতো পঠন-পাঠনের মাধ্যমে।

ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় 

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় যা নালন্দা এবং বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও অনেকটাই প্রাচীন ছিল। সেখানে ছিল একটি বিশাল আকারের গ্রন্থাগার। এখানে বিভিন্ন সাহিত্যের পান্ডুলিপি সংরক্ষণ করা ছিল। ছাত্র এবং অধ্যাপকরা এই লাইব্রেরীতে আসতেন। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুকুল পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হতো। যেখানে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপকদের সঙ্গেই থাকতেন। তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে উঠত। এইভাবে ছাত্রদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশ সম্পূর্ণ হতো। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতি তৎকালীন দিনে দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে উল্লেখ

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 

অর্থশাস্ত্র: প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিত কৌটিল্য বা চাণক্য বা বিষ্ণুগুপ্ত অর্থশাস্ত্র রচনা করেছিলেন এখানে বসেই। তাঁর গ্রন্থে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার এক খ্যাতনামা কেন্দ্র হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন।

মহাভারত: বহু শতাব্দী আগে রচিত মহাকাব্য মহাভারত। সেখানেও তক্ষশীলা নগর সমেত তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।

রামায়ণ: জ্ঞান চর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান হিসেবে রামায়ণে তক্ষশীলার উল্লেখ পাওয়া যায়। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Takshila University) প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব রামায়ণ অনুসারে কৈকেয়ীর পুত্র তথা ভগবান রামের ভাই ভরতকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। জানা যায়, ভরত তাঁর পুত্র তক্ষকে ওই নগর শাসনের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর নামানুসারে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় নামটি এসেছে বলে মনে করা হয়।

জাতকের কাহিনী: বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য হল জাতকের কাহিনী। এই জাতকের কাহিনীতে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন গ্রিক ও চিনা সাহিত্য: মেগাস্থিনিস সমেত অন্যান্য পরিব্রাজকদের বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়। এ থেকেই বোঝা যায় তক্ষশীলা কতটা খ্যাতিসম্পন্ন ছিল। সে সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ পাওয়া যায় চীনা পরিব্রাজকদের লেখাতেও।

মনুস্মৃতি: মনুস্মৃতি, কথাসরিত সাগর প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ পাওয়া যায়। 

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিক

কঠিন প্রতিযোগিতা: জানা যায় সে সময় ছাত্ররা সহজেই তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতেন না। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তাঁদেরকে একটি কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার দিতে হতো এবং তার মাধ্যমেই সুযোগ মিলতো সেখানে পড়াশোনা করার।

আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়: ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্য, চিনা এবং গ্রিক পরিব্রাজকদের লেখা থেকে জানতে পারা যায় যে এটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কারণ এখানে পারস্য, গ্রিস, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসতেন।

বৃত্তি: বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের গবেষণা থেকে জানতে পারা যায় তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা ছিল।

ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর: তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা ছাত্রদের ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর জোর দিতেন বলে জানা যায়। তাঁদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চলত।

কারা পড়াতেন?

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন পাণিনির খ্যাতনামা সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণিনির অষ্ট্যাধ্যায়ী তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় বসেই রচিত হয় বলে জানা যায়। এটি সংস্কৃতের জটিল এবং নিয়মভিত্তিক ব্যাকরণ ছিল। অন্যদিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী চাণক্যও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করতেন বলে জানা যায়। ভারতীয় চিকিৎসার জনক বলে পরিচিত চরক তক্ষশীলায় অধ্যাপনা করতেন। অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধের ব্যক্তিগত ডাক্তার বলে পরিচিত ছিলেন জিবক, তিনিও তক্ষশীলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু কিছু বৌদ্ধ সাহিত্য দাবি করে যে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে অধ্যয়ন ও শিক্ষার জন্য তক্ষশীলায় নিয়ে গেছিলেন।

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠার পাঁচশো বছরেরও আগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে

পতনের কারণ 

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় (Takshila University) শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। এর পতনের অনেক কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক কারণও বেশ কতকগুলি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ: মনে করা হয় খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে হুণ শাসক তোরমান এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করেন। যার ফলে তক্ষশীলার শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন: মনে করা হয় উত্তর ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনও তক্ষশীলা (Takshila University) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

ramayan

mahabharat

Takshila

famous University of Ancient India

eastern bank of the Indus River

Buddhist literature

Jatakas

Sir Alexander Cunningham

Chanakya


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর