জানুন জামাই ষষ্ঠীর লৌকিক কথা ও ইতিহাস....
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাঙালি হিন্দুর ষষ্ঠীর তালিকা নেহাত ছোট নয়। অশোক ষষ্ঠী, নীল ষষ্ঠী এসব তো রয়েছেই। জামাই ষষ্ঠী তবে বেশ জনপ্রিয়। খাওয়া দাওয়ার রাজকীয় আয়োজন। জামাই আপ্যায়নে ত্রুটি থাকে না কোনও শ্বশুরবাড়িতেই। সকাল থেকেই লুচি সমেত নানা ব্যঞ্জনে ভরে যায় জামাইয়ের পাত। দুপুরেও এ চিত্র বদলায় না। জামাই ষষ্ঠীকে (Jamai Shasthi) ঘিরে ভিড় দেখা যায়, ফলের স্টলে, বাজারে, পোশাকের দোকানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামাই ষষ্ঠীর প্রথা অনেক প্রাচীন। সেই বৈদিক আমল থেকেই।
কন্যার সুখের জন্য জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে ব্রত পালন করেন মা। এটাই প্রসিদ্ধ জামাই ষষ্ঠী নামে। জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেন শাশুড়ি মা। এরপর মঙ্গল কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করেন। মাথায় ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন মেয়ের মা। সেই সঙ্গে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের গোটা ফল। পরে দুপুরে জামাইয়ের জন্য নানা পদ সাজিয়ে দেওয়া হয়। যা নিজের হাতে রান্না করেন শাশুড়ি মা।
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লা পক্ষের ষষ্ঠী তিথিকে জামাই ষষ্ঠী হিসেবে পালন করা হয়। এই বছর জামাই ষষ্ঠী পড়েছে ২৫ মে অর্থাৎ ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩টা ০২ মিনিটে ষষ্ঠী লাগছে এবং ষষ্ঠী ছেড়ে যাবে ১১ জ্যৈষ্ঠ বিকেল ৫টা ২৬ মিনিটে।
কথিত আছে, কোন এক সময়ে এক পরিবারে এক বউ খেতে ভীষণ ভালোবাসত। বাড়িতে মাছ বা অন্য কিছু ভাল রান্না হলেই নিজে সব খেয়ে ফেলে দোষ চাপাত একটি কালো বিড়ালের ওপর। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, বিড়াল হল মা ষষ্ঠীর বাহন। নিজের সম্পর্কে এই মিথ্যে অভিযোগ শুনে বিড়াল মা ষষ্ঠীর কাছে গিয়ে সব জানায়। নিজের বাহন সম্পর্কে এই মিথ্যে কথা শুনে মা ষষ্ঠী অত্যন্ত রেগে যান এবং অভিশাপ দেন। এরপর মা ষষ্ঠীর অভিশাপে ওই বউ এর একটি করে সন্তান হয়, আর জন্মের কিছু পরেই তার মৃত্যু হয়। সাত পুত্র ও এক কন্যা এই ভাবে জন্মের পরেই মারা যায়। স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির সবাই মিলে তখন বউকে অলক্ষণা বলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বউ এরপর মনের দুঃখে বনে চলে যায়।
একদিন জঙ্গলে বসে একা একা কাঁদছে, এমন সময় বৃদ্ধার ছদ্মবেশ ধারণ করে তাকে দেখা দেন মা ষষ্ঠী। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বউ তখন সব সত্যিটা বলে ওই বৃদ্ধাকে। নিজের আগের অন্যায় আচরণের কথা স্বীকার করে মা ষষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চায় সে। মা ষষ্ঠী তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং বলেন যে ঘরে ফিরে গিয়ে ভক্তিভরে তাঁর পুজো করলে নিজের মৃত সাত পুত্র ও এক কন্যার জীবন ফিরে পাবে। এরপর সংসারে ফিরে এসে মা ষষ্ঠীর পুজো করে নিজের সব পুত্র কন্যাদের ফিরে পায় বউ। এরপরেই ষষ্ঠী পুজোর মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মেয়ে দীর্ঘদিন বাপের বাড়ি যায়নি। তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান। জামাই ষষ্ঠী (Jamai Shasthi) পুজোর দিনে সস্ত্রীক উপস্থিত হন। সেই থেকে শুরু হয় জামাই ষষ্ঠী।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।