বিবাহে অগ্নিসাক্ষী রেখে সাতপাক ঘোরার সময়ও স্বামী-স্ত্রী সাধারণ নিয়মের উল্টো দিকেই ঘোরে
সেই গ্রামের সংগৃহীত ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রতিনিয়ত সময় (Indian Standard Time) এগিয়ে চলেছে তার নিজের গতিতে। সবকিছু প্রতি মিনিটে, ঘণ্টায় বদলে যাচ্ছে। জীবনের নির্ধারিত সময় কমে আসছে প্রত্যেক মুহূর্তে। অথচ সময়কে আটকানোর কোনও উপায় নেই। বাড়িতে থাকা ঘড়ি আমাদের সব সময় জানান দেয়, সময় কতটা এগিয়ে গেল। ঘরের দেওয়াল থেকে শুরু করে হাতে ও মোবাইলে সব জায়গায় ঘড়ি তার সময়ের হিসাব দিয়ে চলেছে সব সময়। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে সময়ের স্রোতে। কিন্তু কখনও কি মাথায় এসেছে, ঘড়ির কাঁটা যদি উল্টো দিকে ঘোরে? যদি দুপুর ১২ টার পর ১১ টা বাজে? কি, শুনলে হাসিঠাট্টা লাগছে তো? কিন্তু বাস্তবে এমনটাই হয় ভারতের বুকে এক গ্রামে, যেখানে ঘড়ির কাঁটা ঘোরে সময়ের উল্টো দিকে।
কোথায় এই ধরনের উল্টো ঘড়ি দেখা যায়?
ভারতের বুকেই আছে এমন এক গ্রাম, যেখানে সময় (Indian Standard Time) চলে তার বিপরীত দিকে। ঘড়ির কাঁটা ঘোরে তার নির্ধারিত সময়ের উল্টোদিকে। যেখানে দুপুর ১ টার পর ২ টো নয়, বাজে ১২ টা, অর্থাৎ একদম উল্টো সময় বলে সেখানকার ঘড়ি। এমনটা হয় ছত্তিসগড়ের কোরবা নামক জেলায়, সেখানে গেলেই এই অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে। শোনা যায়, ছত্তিসগড়ের আরও অনেক জায়গায় এই ঘড়ি প্রচলিত আছে। মধ্য ভারতের এই ছত্তিসগড় রাজ্যের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা একটি উপজাতি হল গোন্ড। এই উপজাতিই সাধারণত ব্যবহার করে এই উল্টো ঘড়ি। এমনকী ভারতের ফৌজদারি আইন ছাড়া আইনকানুন, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি সব কিছুই আলাদা, সব হয় তাদের নিয়ম অনুযায়ী। যেন ভারতের বুকে এক অন্য পৃথিবী। গ্রামের যে কোনও সমস্যা ও বিষয় পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব গ্রামসভার মাধ্যমে। প্রচলিত নিয়মের বাইরে তাদের নিজস্ব তাত্ত্বিক জীবনদর্শনকেই প্রাধান্য দেয় তারা। আর বহু বছর আগে থেকেই চলে আসছে তাদের এই সময়ের উল্টো স্রোতে ভেসে চলা।
কেন এমন নিয়ম মানেন তাঁরা?
গোন্ড উপজাতিদের বিশ্বাস, আমাদের জীবনের সময় (Indian Standard Time) বাড়ে না, বরং ক্রমশ কমে আসছে প্রতিনিয়ত। তাই দুপুর ১ টার পর তাদের সময় কমে ১২ টা হয়। এমনকী চাঁদ পৃথিবীকে এবং পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকেই। এই সব কারণকে সামনে রেখেই তাদের মতানুযায়ী নিজেদের ঘড়ি নির্মাণ করেন, যে ঘড়ি সময়ের উল্টোদিকে চলে। তাদের এই ঘড়িকে অনেকে গণ্ডোয়ানা ঘড়ি বলে নামাঙ্কিত করেছেন। তাদের মতে, প্রকৃতির নিয়ম মেনে এটিই একমাত্র আদর্শ ঘড়ি যা সঠিক সময় বলে।
বিয়ের সাতপাকও ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে
শুধু যে ঘড়ির ক্ষেত্রে কাঁটা উল্টো দিকে ঘোরে তা নয়, এই উপজাতি বস্তির যখন কোনও বিবাহ অনুষ্ঠান থাকে, সেই বিবাহে স্বামী-স্ত্রীর অগ্নিসাক্ষী রেখে সাতপাক ঘোরার সময়ও (Indian Standard Time) তারা সাধারণ নিয়মের উল্টো দিকেই ঘোরে। সব মিলিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রায় দশ হাজারের বেশি পরিবারে ব্যবহৃত হয় এই একই নিয়ম ও এই উল্টো ঘড়ি। গোন্ড উপজাতি ছাড়াও সেখানে আরও প্রায় ২৯ টি সম্প্রদায় আছে যারা এই অদ্ভুত রীতি মেনে চলে। আর এই অদ্ভুত রীতিনীতির জন্যই এদেরকে সাধারণের থেকে আলাদা হিসাবে গণ্য করা হয়, যা ভারতের বুকে সত্যিই বিচিত্র।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।