আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে হনুমান জয়ন্তী...
হনুমান (ফাইল ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ব্যস্ততা এবং কাজের চাপে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে বস্তুবাদী জীবন এবং আধ্যাত্মিক জীবন এই দুটিরই সমান ভূমিকা রয়েছে সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের ক্ষেত্রে। বর্তমানকালে আমরা জীবনের বস্তুগত উপাদানগুলির দিকেই বড় বেশি ঝুঁকে পড়ছি। এর ফলে মানসিকভাবে চাপ বাড়ছে আমাদের। ডিপ্রেশনের শিকার হচ্ছি। আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। সেটা কোনওভাবে অস্বীকার করা যায়না। জীবনকে আরও অনেক বেশি ছন্দময় এবং গতিময় করতে আধ্যাত্মিকতার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু কীভাবে আমরা জীবনে এই ইতিবাচক পরিবর্তন আনব?
আজকে হনুমান জয়ন্তীর (Hanuman Jayanti 2024) পূণ্য তিথিতে আমাদের জানা দরকার যে ভগবান রামচন্দ্রের এই মহান শিষ্য কীভাবে তাঁর জীবন, চরিত্র এবং ব্যক্তিত্বকে ভরপুর উৎসাহ এবং অসীম শক্তির মোড়কে সাজিয়েছিলেন। বজরংবলীর জীবন আমাদের শেখায় শৃঙ্খলা পরায়ণতা, কঠিন পরিস্থিতিতে নেতৃত্বদান, গুরুর প্রতি আনুগত্য, ভগবানের প্রতি সমর্পণ, যুক্তিবাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
সূক্ষ্ম রূপধরি সিযহি দিখাবা ।
বিকট রূপধরি লংক জলাবা ॥
হনুমানজি (Hanuman Jayanti 2024) যখন মা সীতার সন্ধানে লঙ্কায় গেলেন তখন অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সমুদ্র পার হয়ে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছলেন। এখান থেকে আমরা কী শিক্ষা পেলাম? তিনি মনের মধ্যে একটি লক্ষ্যকে স্থাপন করে নিতে পারতেন। চলার পথে বিশ্রামের স্থানও পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি গ্রহণ করলেন না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি মা সীতাকে খুঁজে পেলেন। মা সীতাকে দেখার পরেও হনুমানজি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে গেলেন না, এখান থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
এত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছানোর পরেও তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকলেন সঠিক সময়ের জন্য। কখন সেই ক্ষণ আসবে যখন মা সীতার সঙ্গে কথা বলার মতো অনুকূল পরিবেশ সেখানে তৈরি হবে। ভগবান রামচন্দ্র তাঁকে যে আংটি দিয়েছিলেন সেটা তিনি মা সীতাকে দেখালেন এবং নিজের পরিচয় দিলেন। বললেন যে রামচন্দ্র তাঁকে এখানে পাঠিয়েছেন। ফিরে আসার সময় রাক্ষস রাজা রাবণের বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সামনাসামনি সংঘর্ষ হল। রাক্ষসরা হনুমানজির লেজে আগুন ধরিয়ে দিল। তিনি এটাকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখলেন। ওই আগুনে তিনি গোটা লঙ্কাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেন। অর্থাৎ পরিস্থিতি যখন কঠিন হল তখন তিনি পরিস্থিতিকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর (Hanuman Jayanti 2024) কাছ থেকে আমরা শিখতে পারলাম একজন নারীকে কিভাবে সম্মান করা উচিত।
তুম্হরো মংত্র বিভীষণ মানা ।
লংকেশ্বর ভযে সব জগ জানা ॥
যখন হনুমানজি উপলব্ধি করলেন যে রাবণের আপন ভ্রাতা বিভীষণ অনেক ভালো গুণের অধিকারী তখন তিনি তাঁকে এই প্রস্তাব দিলেন যে রাবণের সঙ্গ ত্যাগ কর এবং লঙ্কা তথা মানবতার কল্যাণের জন্য রামচন্দ্রের পক্ষে এস। বিভীষণ রামচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন এবং তখন মর্যাদা পুরুষোত্তম প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করলেন যে বিভীষণকে প্রয়োজন কিনা! তখন বেশিরভাগ জনই বললেন, না। কিন্তু রামচন্দ্র যখন হনুমানজিকে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি বললেন তাঁকে প্রয়োজন এবং রামচন্দ্র সেই সিদ্ধান্তটাই নিলেন। এরপরের ঘটনাক্রম আমরা প্রত্যেকেই জানি, রামচন্দ্র নিজের সঙ্গে বিভীষণকে রেখেছিলেন এবং এই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল। পরবর্তীকালে বিভীষণ লঙ্কার একজন ভালো রাজা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। এভাবেই আমরা বুঝতে পারি যে হনুমানজির (Hanuman Jayanti 2024) দূরদর্শিতা ঠিক কতটা ছিল, এবং কিভাবে তিনি সঠিক মানুষকে চিনতে পারতেন।
সব পর রাম তপস্বী রাজা ।
তিনকে কাজ সকল তুম সাজা ॥
যখন একজন ভক্ত তাঁর গুরুর প্রতি গভীর আনুগত্য এবং বিশ্বাস রাখেন তখন গুরু সর্বশক্তিমান এবং অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। কারণ ভক্তের (Hanuman Jayanti 2024) আনুগত্য সমস্ত বাধা-বিপত্তি থেকে তাঁকে দূরে রাখে। বর্তমান সমাজ জীবনের ক্ষেত্রেও একই কথা। গুরুর প্রতি এমন চরম আনুগত্য এবং বিশ্বাস জীবনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
সাধু সংত কে তুম রখবারে ।
অসুর নিকংদন রাম দুলারে ॥
অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ করার যে প্রবণতা সেটা হনুমানজির মধ্যে ছিল। যার ফলে সমস্ত অশুভ শক্তিকে তিনি ধ্বংস করতে পেরেছিলেন এবং সকলকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এখানেও বজরংবলির কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। আমরা যারা দুর্বল প্রকৃতির মানুষ তাদের অবশ্যই শক্তিশালী হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ জোগাড় করার চেষ্টাও করা উচিত আমাদের যাতে নিজেদের সংস্কৃতি এবং সমাজকে আমরা বাঁচাতে পারি।
পবন তনয সংকট হরণ - মংগল মূরতি রূপ্ ।
রাম লখন সীতা সহিত - হৃদয বসহু সুরভূপ্ ॥
স্বামী তুলসীদাস প্রার্থনা করছেন হনুমানজির (Hanuman Jayanti 2024) সম্পর্কে যে তুমি হলে সমস্ত রকমের আনন্দ এবং শুভ যা কিছু আছে তার সমষ্টি। আমরা প্রার্থনা করছি ভগবান রামচন্দ্র, মা সীতা, এবং লক্ষণ আমাদের হৃদয়ে সর্বদা থাকবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।