গুরু গোবিন্দ সিংয়ের চার পুত্রের অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বগাথার (Veer Bal Divas) কথাই আজ আমরা জানব
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুরের মুন্ডচ্ছেদ করেছিলেন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব। বিধর্মীদের কাছে আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যুর মধ্যে মৃত্যুকেই সেদিন বেছে নিয়েছিলেন বীর তেগ বাহাদুর সিং। গুরু তেগ বাহাদুরের মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন গুরু গোবিন্দ সিং তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর।
একদিকে গুরু গোবিন্দ সিং ছিলেন নেতা, যোদ্ধা, কবি ও দার্শনিক। শিখদের পঞ্চ ‘ক’ অর্থাৎ কেশ, কাঙা, কারা, কৃপান ও কাচ্চেরার ঐতিহ্যের প্রচলনের পাশাপাশি শিখধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহিবকে শিখদের পরবর্তী ও চিরস্থায়ী গুরু হিসেবে ঘোষণাও করেন গোবিন্দ সিংই। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের চার পুত্রের অসীম সাহসিকতা এবং বীরত্বগাথার (Veer Bal Divas) কথাই আজ আমরা জানব, যাঁদের হত্যা করেছিল মোঘলরা। তাঁর চার পুত্রের নাম অজিত সিং, জুঝর সিং, জোরাওয়ার সিং এবং ফতেহ সিং। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতেই ২৬ ডিসেম্বর দিনটি ‘বীর বাল দিবস’ (Veer Bal Diwas) হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত ৯ জানুয়ারি এ কথা ঘোষণা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শোনা যায় মুঘলরা অতর্কিতে শিখদের একটি দুর্গ আক্রমণ করে। যেখানে গুরু গোবিন্দ সিং এর পরিবার থাকতো। গুরু গোবিন্দ সিং মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলেও তাঁর বাহিনী তাঁকে চলে যেতে বলে। এর পর গুরু গোবিন্দ সিংয়ের পরিবারসহ অন্যান্য শিখরা ওই দুর্গ ছেড়ে চলে যান। সবাই যখন সরসা নদী পার হচ্ছিলেন, তখন জলের স্রোত এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, পুরো পরিবার আলাদা হয়ে যায়। বিচ্ছেদের পর গুরু গোবিন্দ সিং এবং দুই বড় সাহেবজাদা বাবা অজিত সিং এবং বাবা জুঝর সিং চমকৌরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। মাতা গুজরি এবং দুই ছোট সাহেবজাদা বাবা জোরওয়ার সিং, বাবা ফতেহ সিং এবং গুরু সাহেব গাঙ্গু অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। এর পরে গাঙ্গু তাঁদের সবাইকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান কিন্তু এই খবর কোনওভাবে মুঘলদের কাছে চলে যায়। এর পরে উজির খান মাতা গুজরি ও ছোট সাহেবজাদাকে বন্দি করেন।
২২ ডিসেম্বর চামকৌরের যুদ্ধ শুরু হয় যেখানে শিখ এবং মুঘল বাহিনী মুখোমুখি হয়। মাত্র ৪০ জন শিখের সঙ্গে কয়েক লক্ষ মোঘলের এক অসম যুদ্ধ। কিন্তু কী অসম্ভব বীরত্বের সাক্ষী থাকল সেদিনের চমকৌর। গুরু গোবিন্দ সিং শিখদের উৎসাহ দেন এবং তাঁদের দৃঢ়তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে বলেন। পরের দিনও এই যুদ্ধ চলতে থাকে। শিখদের যুদ্ধে শহিদ হতে দেখে গুরু গোবিন্দ সিং-এর দুই পুত্র বাবা অজিত সিং এবং বাবা জুঝর সিং উভয়েই গুরু সাহেবের কাছে একে একে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চান। গুরু সাহেব তাঁদের অনুমতি দেন। একের পর এক মুঘলকে হত্যা করতে থাকেন দুই সাহেবজাদা। প্রবল যুদ্ধে তাঁরা বীরগতি (Veer Bal Diwas) লাভ করেন। কয়েক লক্ষ বাহিনীর সঙ্গে মাত্র কয়েকজনের এই যুদ্ধ ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
কথিত আছে যে ২৪ ডিসেম্বর গুরু গোবিন্দ সিং এই যুদ্ধে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু অন্য শিখরা তাঁকে আবারও বাধা দেন। বাধ্য হয়ে গুরু সাহেব সেখান থেকে চলে যান। এরপর গুরু গোবিন্দ সিং একটি গ্রামে পৌঁছান, সেখানে তিনি হর্ষরণ কৌরের সঙ্গে দেখা করেন। যুদ্ধে শহিদ হওয়া শিখ ও সাহেবজাদাদের কথা জানতে পেরে তিনি গোপনে চমকৌরে পৌঁছে শহিদদের শেষকৃত্য করতে শুরু করেন। কথিত আছে, মুঘলরা চায়নি যে বীরগতি প্রাপ্তদের শেষকৃত্য এভাবে হোক। তারা চেয়েছিল শকুন মৃতদেহ খেয়ে ফেলুক। মুঘল সৈন্যরা তখন হরশরণ কৌরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং তিনিও শহিদ হন।
২৬ ডিসেম্বর সিরহিন্দের নওয়াজ ওয়াজির খান মাতা গুজরি এবং সাহেবজাদা বাবা জোরওয়ার সিং এবং বাবা ফতেহ সিং উভয়কেই বন্দি করেন। উজির খান উভয় সাহেবজাদাকে তাঁর দরবারে ডাকেন এবং তাঁদের ধর্মান্তরিত করার হুমকি দেন। কিন্তু উভয় সাহেবজাদাই ‘জো বোলে সো নিহাল, সত শ্রী আকাল’ স্লোগান দিতে দিতে ধর্মান্তরিত হতে অস্বীকার করেন। উজির খান আবার হুমকি দেন, একদিনের মধ্যে ধর্মান্তরিত না হলে মরতে হবে। কথিত আছে যে, পরের দিন বন্দি মাতা গুজরি উভয় সাহেবজাদাকে পরম ভালোবাসায় প্রস্তুত করে আবার উজির খানের দরবারে পাঠান। এখানে আবার উজির খান তাঁদের ধর্মান্তরিত হতে বলেন, কিন্তু সাহেবজাদারা অস্বীকার করেন এবং আবার স্লোগান দিতে থাকেন। এ কথা শুনে উজির খান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং উভয় সাহেবজাদাকে প্রাচীরের মধ্যে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং বাকি দুই সাহেবজাদা এভাবেই বীরগতি (Veer Bal Divas) প্রাপ্ত হন। এই খবর মাতা গুজরির কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
Tags: