কথিত আছে, একদা বিষ্ণুর কাছে তাঁর বিরাট রূপ দেখতে চান দেবর্ষি নারদ। দেব ঋষির এই ইচ্ছা পূরণ করে, তাঁকে বিরাট রূপে দর্শন দেন শ্রীহরি।
অনন্ত চতুর্দশী
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনন্ত চতুর্দশী পালন করা হয়। এবছর ৯ সেপ্টেম্বর অনন্ত চতুর্দশী পালিত হবে। অনন্ত চতুর্দশীর দিনে বিষ্ণুর অন্তত রূপের পুজো করা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এদিন উপবাস করলে সমস্ত বাধা ও সঙ্কট দূর হয়।
পুরাণে বলা আছে, পাশা খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে পাণ্ডবরা যখন অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, তখন কৃষ্ণ তাঁদের অনন্ত চতুর্দশীর দিনে বিষ্ণুর অনন্ত রূপের পুজো ও উপোসের পরামর্শ দেন। এর পরই তাঁদের সংকট এক এক করে দূর হতে শুরু করে। অবশেষে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভ করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে গণেশ চতুর্থী, জানুন এই বিশেষ দিনের মাহাত্ম্য, তাৎপর্য
কীভাবে বিষ্ণু অনন্ত নামে প্রসিদ্ধ হন?
কথিত আছে, একদা বিষ্ণুর কাছে তাঁর বিরাট রূপ দেখতে চান দেবর্ষি নারদ। দেব ঋষির এই ইচ্ছা পূরণ করে, তাঁকে বিরাট রূপে দর্শন দেন শ্রীহরি। এর পর শ্রী সচ্চিদানন্দ সত্যনারায়ণের অনন্ত স্বরূপের জ্ঞান লাভ করেন নারদ। এই দিনটি ছিল ভাদ্রপদ মাসের শুক্ল চতুর্দশী। তার পর থেকে এই দিনটি অনন্ত চতুর্দশী হিসেবে পূজিত হতে শুরু করে।
কথিত আছে, সৃষ্টির সূচনায় ১৪ সৃষ্টি করেন বিষ্ণু। তাঁরা হলেন, তল, অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, রসাতল, পাতাল, ভূ, ভুবঃ, স্বঃ, জন, তপ, সত্য, মহ। এই সমস্ত লোকের রচনার পর এদের সংরক্ষণ ও পালনের জন্য ১৪টি রূপে প্রকট হন নারায়ণ। এ সময় অনন্ত প্রতীত হন তিনি। অনন্তকে এই ১৪ লোকের প্রতীক মনে করা হয়। এদিন বিষ্ণুর অনন্ত, ঋষিকেশ, পদ্মনাভ, মাধব, বৈকুণ্ঠ, শ্রীধর, ত্রিবিক্রম, মধুসূদন, বামন, কেশব, নারায়ণ, দামোদর ও গোবিন্দ স্বরূপের পুজো করা হয়।
আরও পড়ুন: কৌশিকী অমাবস্যা তিথি পড়ছে কখন? এই দিনের মাহাত্ম্য, তাৎপর্যই বা কী?
অনন্ত চতুর্দশীর পুজোর পর পুরুষরা ডান এবং মহিলারা বাঁ দিকের হাতে অনন্ত সুতো বাঁধেন। এর প্রভাবে অনন্তের আশীর্বাদ লাভ করা যায় এবং ব্যক্তির জীবনের সমস্ত সংকট দূর হয়। পাশাপাশি ব্যক্তি পাপ মুক্ত হয়। একদা কৌণ্ডিন্য মুনি নিজের স্ত্রীর বাঁ হাতে বাঁধা অনন্ত সূত্রকে বশীকরণের সুতো ভেবে ছিঁড়ে দেন। এখানেই না-থেমে সেই সুতোয় আগুন লাগিয়ে দেন তিনি। এতে বিষ্ণু রুষ্ট হন এবং কৌণ্ডিন্য মুনির সমস্ত সম্পত্তি নষ্ট করে দেন। সব জানার পর নিজের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অনন্ত ভগবানের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জঙ্গলে যান ঋষি। পথে সবার কাছেই অনন্ত ভগবানের ঠিকানা জানতে চান তিনি। কিন্তু কারও কাছেই তা জানতে পারেননি।
এতে হতাশ হয়ে প্রাণ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন কৌণ্ডিন্য ঋষি। তখন এক ব্রাহ্মণ এসে তাঁকে আত্মহত্যা করা থেকে আটকান। এর পর ঋষি কৌণ্ডিন্যকে একটি গুহায় নিয়ে গিয়ে চতুর্ভূজ অনন্ত দেবের দর্শন করান। ব্রাহ্মণ ওই মুনিকে জানান যে, অনন্ত সূত্রের তিরস্কারের কারণে তাঁর এই দশা হয়েছে। এই পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ১৪ বছরের নিরন্তর অনন্ত উপবাস পালনের নিদান দেন ওই ব্রাহ্মণ। কৌণ্ডিন্য মুনি ১৪ বছর পর্যন্ত নিয়ম মেনে অনন্ত ব্রত পালন করেন। এর পর তার জীবনে আনন্দের আগমন ঘটে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।