Lord Vishnu: ‘বিষ্ণু সহস্রনাম’ পাঠে কী কী সুফল মেলে জানেন?
বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠে জীবনে আসে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিষ্ণুর সহস্রনাম (Vishnu Sahasranamam) কমবেশি আমরা সকলেই শুনেছি। ছন্দ-উচ্চারণে শ্রুতি মধুর এই সংস্কৃত মন্ত্রমালা মনকে শান্তির জগতে নিয়ে যায়। বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ বলতে বোঝায় ভগবান বিষ্ণুর হাজার (Lord Vishnu) নাম নেওয়া। হিন্দু পণ্ডিতরা বলেন, ‘‘বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করলে আমাদের চারপাশে এক ইতিবাচক শক্তি বলয় তৈরি হয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না ঠিকই। কিন্তু তার প্রভাবে ধীরে ধীরে জীবনটা বদলে যেতে শুরু করে।’’ ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান বিষ্ণুর (Vishnu Sahasranamam) আশীর্বাদে যে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। ফলে জীবনের নিরাপত্তা যে অনেকটাই বাড়ে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। পণ্ডিতদের আরও মত, প্রতিটি দেবতার আরাধনা করার জন্য বিশেষ দিন রয়েছে। যেমন, শনিবার কালীর, মঙ্গলবার বগলামুখীর। শিবের বিশেষ দিন হল সোমবার। তেমনই বৃহস্পতিবার হল ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করার বিশেষ দিন। তবে প্রতিদিনই বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করা যেতে পারে। ভক্তদের বিশ্বাস, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শুদ্ধ শরীর এবং বস্ত্রে বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করলে জীবনে আসে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি। এই প্রতিবেদনে বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠে কী কী ফল মেলে তা নিয়েই আলোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি বিষ্ণুর সহস্রনামের উৎপত্তি কোথায়, সেই বিষয়েও আলোকপাত করা হবে।
মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৪৯তম অধ্যায়ে প্রথম বারের জন্য বিষ্ণুর সহস্রনামের (Vishnu Sahasranamam) উল্লেখ পাওয়া যায়। পিতামহ ভীষ্ম যখন কুরুক্ষেত্রের ময়দানে মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, তখন পাণ্ডব পুত্র যুধিষ্ঠির তাঁকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল, ‘‘হে পিতামহ এমন কোন দেব বা দেবী রয়েছেন যাঁর নাম নিলে অফুরন্ত শান্তির সন্ধান মিলবে, সঙ্গে সমৃদ্ধি এবং উন্নতিও আসবে?’’ প্রত্যুত্তরে ভীষ্ম পিতামহ বলেছিলেন, ‘‘প্রতিদিন হাজার বার বিষ্ণুর নাম নাও, দেখবে সব সমস্যা মিটে যাবে, মিলবে সুখ সাগরের সন্ধান।’’ ভক্তদের বিশ্বাস সেই থেকেই বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠের উপকারিতা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিষ্ণুর সহস্রনামের উপকারিতার বিষয়ে যে শুধু মহাভারতেই লেখা রয়েছে এমনটা নয়। পদ্ম পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ এবং গরুড় পুরাণেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, নানা সময় আদিগুরু শঙ্করাচার্যও বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠের উপকারিতার ওপর আলোকপাত করেছেন।
১. গ্রহ দোষ সব কেটে যায়, জীবনে আসে সৌভাগ্য: জ্যোতিষীরা বলছেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান যখন বদলায়, সেই মতো আমাদের জন্ম কোষ্ঠীতে কোনও গ্রহ শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তো কোনও কোনওটা বেজায় দুর্বল হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, কিছু গ্রহের প্রভাবে নানাবিধ খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আর ঠিক এই পরিস্থিতিকেই গ্রহ দোষ বলা হয়ে থাকে।’’ এক্ষেত্রে জ্যোতিষীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করলে যে কোনও ধরনের গ্রহ দোষ তো কেটে যায়ই, সেই সঙ্গে খারাপ সময় কেটে যেতেও দেরি হয় না। বিষ্ণুর সহস্রনাম (Lord Vishnu) জীবনে নিয়ে আসে সৌভাগ্য। আর ভাগ্য যখন একবার সঙ্গ দিতে শুরু করে, তখন জীবনের প্রতিটা দিন যে আনন্দে ভরে ওঠে, তা তো বলাই বাহুল্য!
২. টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সব ঝামেলা মিটে যায়: শাস্ত্র মতে, এক মনে বিষ্ণুর সহস্রনাম জপ করলে চারপাশে ইতিবাচক শক্তির মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি খুব দ্রুত হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠে যে কোনও ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যাও মিটে যায়। প্রসঙ্গত, এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে এক মনে ভগবান বিষ্ণুর নাম নিলে দেবতা এতটাই প্রসন্ন হন যে তাঁর আশীর্বাদে কর্মক্ষেত্রে চরম উন্নতি লাভের পথ প্রশস্ত হয়।
৩. দুশ্চিন্তা দূর হয়, মন ভরে ওঠে ইতিবাচক শক্তিতে: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে নিয়মিত এক মনে ভগবান বিষ্ণুর নাম নিলে শরীর এবং মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে তার প্রভাবে মানসিক চাপ তো কমেই, দুশ্চিন্তা এবং অ্যাংজাইটিও কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, ব্যস্ত দুনিয়ায় সবাই ছুটছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদ সম্পর্কিত নানা রোগ। তাই মনের গভীরে প্রশান্তি লাভ করতে বিষ্ণুর সহস্রনাম জপ করার পরামর্শ দিচ্ছেন শাস্ত্রবিদরা।
৪. যে কোনও সমস্যা মিটে যায় সহজেই: শাস্ত্র মতে, বিষ্ণুর সহস্রনাম জপ করলে যে কোনও ধরনের বাধা খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে যে কোনও সমস্যাও মিটে যায় নিমেষেই। প্রতিদিন তাই বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করতে বলছেন পণ্ডিতরা।
৬. যে কোনও বিপদ থেকে রক্ষা মেলে: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করলে মন ও মস্তিষ্কে বিপুল পরিমাণে ইতিবাচক শক্তি মজুত হয়। এর প্রভাবে যে কোনও ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে খারাপ সময়ও কেটে যায়। শুধু তাই নয়, কালো জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকের খারাপ প্রভাব থেকেও রক্ষা মেলে। সেই সঙ্গে শত্রুদেরও জয় করা যায়। বিষ্ণুর সহস্রনাম জপ করলে জীবন অনেক নিরাপদ হয়ে ওঠে।
৭) মনসংযোগ বৃদ্ধি করে: পড়ায় মন বসে না, এমন ছাত্রছাত্রীদের বিষ্ণু সহস্রনাম জপ করার পরামর্শ দিচ্ছেন পণ্ডিতরা। বিষ্ণু সহস্রনাম গভীর মনসংযোগ তৈরি করাতেও সক্ষম।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।