PM Narendra Modi: “আমার মিশন হল সমগ্র দেশের উন্নয়ন”, সাক্ষাৎকারে বললেন মোদি

‘মানি কন্ট্রোল’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কী বললেন মোদি? পড়ুন বিস্তারিত
modi(34)
modi(34)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একদিন পরেই দিল্লিতে বসছে জি২০ সম্মেলন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) সাক্ষাৎকার দিলেন ‘মানি কন্ট্রোল’-কে। বর্তমান পৃথিবীতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতের অবস্থান এবং ভূমিকা ঠিক কী হতে চলেছে, এ বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ‘মানি কন্ট্রোল’কে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হল।

প্রশ্ন: জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারত সভাপতিত্ব করছে, এ বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর (PM Narendra Modi): যদি আপনারা জি২০ সম্মেলনের দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন আমাদের মোটো রয়েছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’। যার অর্থ ‘‘এক পৃথিবী, এক পরিবার এবং এক ভবিষ্যৎ’’। আমাদের কাছে সমস্ত পৃথিবী হল একটা পরিবারের মতো। যেখানে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে অন্য সদস্যের উপর। যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করি তখন আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাই। গত ৯ বছর ধরে আমরা সাক্ষী থেকেছি ‘‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’’ এই নীতির। এটাই হল আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের উপাদান।

সবকা সাথ: সমগ্র পৃথিবী একসঙ্গে থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা।

সবকা বিকাশ: পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে মানব উন্নয়নের কাজ করা।

সবকা বিশ্বাস: প্রত্যেকের বিশ্বাসকে জিতে নেওয়া।

সবকা প্রয়াস: প্রতিটি দেশের যে সমস্ত কিছু শক্তি এবং রসদ আছে, তার ভরপুর প্রয়োগ করা।

প্রশ্ন: বর্তমানে আপনি (PM Narendra Modi) বিশ্ব নেতাদের সম্মেলন করছেন, যখন সারা পৃথিবী একটি ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এমন অস্থির-পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। এই আবহে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের থিম রাখা হয়েছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, ‘‘এক পৃথিবী এক পরিবার এবং এক ভবিষ্যৎ।’’ এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: বিগত কয়েক বছরে সারা পৃথিবী সাক্ষী থেকেছে ভারতবর্ষের উন্নয়নের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই উন্নয়ন হয়েছে। আমরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়েছি, আমাদের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সংস্কার হয়েছে। সামাজিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এগিয়েছি। ডিজিটাল, ফিনান্সিয়াল সহ আরও অনেক দিকে ভারতের উন্নতি যথেষ্ট সদর্থক। বিদ্যুৎ, হাউসিং সমেত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত উন্নতির শিখর ছুঁয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং সংস্থা ভারতের এই বিকাশকে স্বাগত জানিয়েছে। সারা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা ভারতবর্ষকে তাঁদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

যখন বিশ্বব্যাপী মহামারি ছড়িয়ে পড়ল, তখন সবার একটা কৌতূহল ছিল যে ভারত কীভাবে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে! আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পেরেছি। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদেরকেও এই সুবিধা আমরা দিয়েছি। আমাদের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার আমাদের সাহায্য করেছে সরাসরি উন্নয়নকে ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে। আমরা ২০০ কোটিরও বেশি করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ বিনামূল্যে দিতে পেরেছি। আমরা ১৫০-এরও বেশি দেশে করোনার ভ্যাকসিন এবং ওষুধ সরবরাহ করতে পেরেছি। এটা আমাদের মানবকেন্দ্রিক বিকাশ নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।

এরই মাঝে বিগত ৯ বছর ধরে সারা পৃথিবী সাক্ষী থেকেছে, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার এবং বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকাঠামো তৈরিতে ভারত ঠিক কতটা এগিয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গা করে নিতে পেরেছে আমাদের দেশ। সে কারণেই আমরা জি২০ এর মতো শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করতে পেরেছি। জি২০ বিষয়ে যখন আমরা আমাদের অ্যাজেন্ডা প্রকাশ করি, বিশ্বব্যাপী তা গ্রহণ করা হয় এবং প্রশংসিত হয়। তার কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন ইস্যুতে সমস্যার সমাধান করতে আমরা সক্ষম, যা সকলেই জানে। বর্তমান জি২০ সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে আমরা লঞ্চ করব বায়োফুয়েল-অ্যালায়েন্স। এর ফলে পরিবেশ বান্ধব শক্তির ব্যবহার যেমন বাড়বে বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে, তেমনই খরচ কমবে জ্বালানির।

প্রশ্ন: আপনি (PM Narendra Modi) ব্যাখ্যা করেছেন যে ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সম্মেলন আসলে জনগণের সভাপতিত্ব। শুধু একটি বা দু'টি শহরে নয়, জি২০ এর ইভেন্টগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে। কেন নিলেন এমন সিদ্ধান্ত?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: অনেক মানুষই আমার জীবন সম্পর্কে পুরোটা জানেন। আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে, অনেক দশক ধরেই সাংগঠনিক কাজ করতাম রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ক্ষেত্রে। সেই হিসেবে আমাকে জেলায় জেলায় সফর করতে হতো। ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই আমার সফর করার সৌভাগ্য হয়েছে। এই সময়কালের মধ্যে আমি অনেক কিছু শিখেছি, ভারতের বৈচিত্র, বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের সংস্কৃতি, তাদের সমস্যা এবং আরও বিভিন্ন দিক সম্পর্কে। যা আমার কাছে একটা অনন্য অভিজ্ঞতা। এই এত বৈচিত্রতার মধ্যেও আমি লক্ষ্য করেছি যে আমাদের মধ্যে একটা সাধারণ বিষয় আছে এবং সেটা হল ‘হ্যাঁ পারব’ ‘আমরা পারব’। ক্ষমতার বৃত্তে থেকে সর্বপ্রথম ভাবা গিয়েছে দিল্লির বাইরেও কিছু করার কথা।

আমরা (PM Narendra Modi) আরও দেখেছি যে পৃথিবীব্যাপী নেতারা শুধুমাত্র রাজধানীতে অথবা দু-একটি নির্বাচিত শহরে আসতেন। এবারে দেশের প্রায় কম বেশি গুরুত্বপূর্ণ সব শহরেই অনুষ্ঠিত হয়েছে জি২০ সম্মেলন। যার ফলে বিশ্বের নেতারা ভারতের বৈচিত্র নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। এই যেমন ধরুন তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল তিনি বেঙ্গালুরুতে সফর করেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বারাণসীতে সফর করেছেন। পর্তুগিজের রাষ্ট্রনেতারা গোয়া এবং মুম্বইতে সফর করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শান্তিনিকেতনের সফর করেছেন। দিল্লির বাইরেও বিভিন্ন জায়গাতে সফর করার সুযোগ পেয়েছেন বিশেষ তাবড় রাষ্ট্রনেতারা। জি২০ সম্মেলনে ২২০টি মিটিং হয়েছে দেশের ৬০টি শহরে, ২৮টি রাজ্যে এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। এক লাখেরও বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন ১২৫টি দেশ থেকে। আমাদের দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কোনও না কোনও ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এই অনুষ্ঠানগুলোকে সফল করার জন্য।

প্রশ্ন: জি২০ গঠন করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটকে সামলানোর জন্য। ঘটনা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে অসংখ্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, কিন্তু সেগুলি তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সেভাবে সফল হয়নি। আপনি (PM Narendra Modi) কি মনে করেন জি২০ তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সফল হবে? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: আমি মনে করি এটা আমার বিষয় নয়। কিন্তু আমি মনে করি এটা একটা ভালো প্রশ্ন। সম্প্রতি, জি২০, ২৫ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই দেখতে হবে জি২০ কতটা উদ্দেশ্য পূরণ করতে পেরেছে! জি২০ প্রসঙ্গে বলতে গেলে এটা বলা যায় যে বিভিন্ন দেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, ধারাবাহিকভাবে জি২০ এর সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের মতো করে তথ্য আদান-প্রদান করছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছে। আমাদের দেশ ভারতও এই অ্যাকটিভ ফোরামের অংশ। সন্ত্রাসবাদ থেকে কালো টাকা, জলবায়ু থেকে সার্বিক উন্নয়ন-এই সমস্ত বিষয়েই আলোচনা হয়েছে এবং পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন শক্তির বিচ্ছিন্নতা নজরে পড়ছে। যেমন একদিকে চিনের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে জোট, অন্যদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে অন্য আরেকটি জোট। অন্যদিকে ভারত ‘মাল্টি পোলার’ পৃথিবীর পক্ষে সওয়াল করছে। এ বিষয়ে আপনার (PM Narendra Modi) কী বক্তব্য?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের উপর নির্ভরশীল। এই সময়ে মধ্যে এটাও বাস্তব যে প্রত্যেক দেশই তার নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। তাই এই আবহে সচেতনতা বাড়াতে হবে আমাদের, প্রত্যেকের সাধারণ উদ্দেশ্যটা ঠিক কী। বর্তমানে পৃথিবীতে অনেকগুলি শক্তি অবস্থান করছে। প্রত্যেকেই অন্য দেশের একাধিক ইস্যুতে সম্মত হচ্ছে। আবার বিরুদ্ধ মতও পোষণ করছে। এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিজ দেশের স্বার্থকে তুলে ধরতে হবে আমাদের। বহু দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে যারা বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আবার বিরোধিতাও করেছে।

প্রশ্ন: বহুমুখী সংস্কারের ক্ষেত্রে আপনার নীতি ঠিক কী?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: কোনও প্রতিষ্ঠানে কখনও সংস্কার হতে পারে না, যদি তা পৃথিবীর কোনও নিয়মকে লঙ্ঘন করে। আমরা প্রতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা বলি। এর বাইরেও বহুমাত্রিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নয়নকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, সামাজিকভাবে অগ্রগতির জন্য সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হওয়ার জন্য এবং সভ্যতার অগ্রগতির জন্য যে কোনও ক্ষেত্রে সংস্কার খুবই প্রয়োজন। এটা তখনই সম্ভব যখন গণতান্ত্রিকভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিটি দেশের সঙ্গে প্রতিটি দেশের একটি সম্পর্ক তৈরি হবে। সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সেতু তৈরি হলেই এটা সম্ভব। এক দেশের মানুষের সঙ্গে অপর দেশের মানুষের যোগাযোগ বাড়বে বাণিজ্য এবং পর্যটনের মাধ্যমে, বিজ্ঞান এবং ক্রীড়ার মাধ্যমে, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যের মাধ্যমে।

প্রশ্ন: সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের আজ সুসম্পর্ক রয়েছে।  আপনার (PM Narendra Modi) কি মনে হয় যে জি২০ তে ভারতবর্ষ বর্তমানে সকল দেশের বিশ্বস্ত কণ্ঠস্বর? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: বিগত কয়েক দশকের একটি অস্থিরতার পরে ২০১৪ সালে ভারতের জনগণ একটি স্থায়ী সরকারকে নির্বাচিত করেছেন। যে সরকারের অ্যাজেন্ডা শুধুই সারা ভারতের অগ্রগতি এবং বিকাশ। এই সংস্কারগুলি সম্ভব হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এবং সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যখনই কোনও দেশ আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে তখনই তারা বুঝেছে যে ভারত একটি বিশ্বস্ত বন্ধু। সেই সমস্ত দেশগুলির নিজেদেরও নানা সমস্যার মোকাবিলা এবং সংস্কারের জন্য ভারতকে দরকার পড়ছে। এইভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।

প্রশ্ন: জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উন্নত দেশগুলি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি, উপরন্তু দেখা যাচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে তারা অর্থ ব্যয় করেই চলেছে। এবিষয়ে জি২০ সম্মেলনে বিশ্বের ধনী দেশগুলি সম্পর্কে আপনার (PM Narendra Modi) বার্তা ঠিক কী?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: আমার মনে হয় আমাদের সকলকে বুঝতে হবে যে সারা পৃথিবীতে উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নত দেশ রয়েছে। শুধুমাত্র জলবায়ুর পরিবর্তন কোনও অঞ্চলের সমস্যা নয়, এটা সারা পৃথিবীব্যাপী সমস্যা। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে এই পৃথিবীতে গরিব দেশগুলির সাহায্য দরকার। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্য়াকে যা বিপদে ফেলবে তা অবশ্যই সারা বিশ্বের সমস্যা-এটা আমাদের বুঝতে হবে। পাশাপাশি আমাদের নীতি এবং কৌশলেও পরিবর্তন করতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপ, সমালোচনা এগুলি আমাদের যেন লক্ষ্য না হয়। পরিবর্তে আমাদের সম্পূর্ণ ফোকাস করতে হবে কৃষি সমেত শক্তিক্ষেত্র এবং জীবনযাত্রার মানের ওপর।

প্রশ্ন: আপনি (PM Narendra Modi) অপ্রচলিত শক্তির ক্ষেত্রে সর্বদাই সওয়াল করেন। অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারের বিষয়ে জি-২০ এর সদস্য দেশগুলির কী করা উচিত? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: আমি আপনাদেরকে বলে দিতে চাই, ২০২৩ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ আমাদের শক্তি আসবে নন ফসিলস্ জ্বালানির উৎস থেকে। সরকার এখন নজর দিচ্ছে ইলেকট্রিক যানবাহন শিল্পের উপর এবং এতে এখন সফলতাও দেখা গিয়েছে। মানুষ ভাল রকমের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কারণ এটি একটি বিকল্প শক্তির উৎস। গত ৯ বছরে মোদি সরকারের নানা প্রকল্পের ফলে নিরাপদ স্যানিটেশন, ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স বর্তমানে একটি মন্ত্র নিয়েছে তা হল, ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান সান ওয়ান গ্রিড’। বিশ্বের ১০০টি দেশে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। ভারতবর্ষ এমন একটি দেশ যা দেশের মানুষের জীবন শৈলী এবং পরিবেশকে পাশাপাশি সমান দৃষ্টিতে দেখছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ করা উচিত যাতে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়। তাই যা প্রকৃতি, পরিবেশকে ধ্বংস করবে এগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আমি মনে করি স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন একজন মানুষ সদা তাঁর স্বাস্থ্যের প্রতি যেমন দৃষ্টি রাখেন, তেমনি আমাদেরও নিজেদের গ্রহের প্রতি সদা দৃষ্টি রাখা দরকার। ভারতের নীতি হল প্রকৃতি বান্ধব। যে কোনও অঞ্চলের অধিবাসীদের দেখলেই তা বোঝা যায়।

প্রশ্ন: বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের সুবিধার্থে জি২০ এর ছাতার তলায় ভারতের ভূমিকা ঠিক কী? 

প্রধানমন্ত্রীর (PM Narendra Modi) উত্তর:  ভূ-রাজনৈতিক এবং অন্যান্য উপাদান বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এরকম অবস্থায় প্রতিটি দেশের প্রয়োজন একটি স্থায়ী নীতি যা বাণিজ্য, শিল্প এবং নতুন নতুন আবিষ্কারকে উৎসাহিত করবে। জি২০ সম্মেলনের সভাপতিদের জন্য ভারত একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জি২০ এর সভাপতিত্বের দ্বারা ভারত খুব উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করছে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কারের ক্ষেত্রেও ভারতের দৃষ্টি রয়েছে।

প্রশ্ন: বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির উন্নয়নের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যনীতি থাকা প্রয়োজন কি? 

প্রধানমন্ত্রীর (Pm Modi) উত্তর: ভারত বর্তমান জি২০-তে সভাপতিত্ব করছে। এর পাশাপাশি বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত সদা আগ্রহী। যে সমস্ত দেশ জি২০ এর সদস্য নয়, সেই দেশগুলোর উন্নয়নের দিকেও ভারতের দৃষ্টি রয়েছে। যেমন আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ। সম্ভবত এটা জি২০ ইতিহাসে প্রথম যখন ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিল এই তিন দেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলির সম্পর্কে আওয়াজ তুলেছে।

প্রশ্ন: কম এবং মধ্য আয়ের দেশগুলিতে ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই সমস্ত দেশগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য এবং ঋণ কমানোর জন্য জি-২০ কী করতে পারে?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ সম্মেলন হচ্ছে যেখানে কম এবং মধ্য আয়ের দেশগুলির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোচনা হবে। আমরা এই সমস্ত দেশগুলির স্বার্থের পক্ষে আওয়াজ তুলেছি। আমরা সমন্বয়ে আস্থা রাখি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই এই ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে আমাদের (PM Narendra Modi) মনে হয়। জি২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয় ব্যাঙ্কের গভর্নররা এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বর্তমানের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ঋণের এই সংকটের খবর এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছে যেতে খুব বেশি সময় নেয় না। যার ফলে আরেক দেশ সহজেই বুঝে যায় যে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি না করার জন্য কী কী করতে হবে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুফল আনতে পারে এই সমস্ত নীতিগুলি থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই জাতীয় ভুল নীতি শুধু অর্থনীতি নয় সমাজকেও ধ্বংস করে দেয়।

প্রশ্ন: আমাদের দেশ ‘ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’-এর ক্ষেত্রে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। ইউপিআই, আধার বা ওএনডিসি-এই সমস্ত কিছুই রয়েছে যা প্রভাব সৃষ্টি করেছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। বিশ্বের মাপকাঠিতে আপনি (PM Narendra Modi) কীভাবে দেখেন একে?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: বছর বছর ধরে আমাদের দেশ প্রতিভার জন্য পরিচিত। বর্তমানে ‘ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ গত ৯ বছর ধরে আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। ভারতবর্ষের এই প্রযুক্তি বিপ্লব শুধুমাত্র যে অর্থনীতিক প্রভাবিত করেছে তা নয়, সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। মানবকেন্দ্রিক এই উন্নয়নের মডেলে আমরা ভরপুর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছি। জনধন প্রকল্প, আধার এবং মোবাইল এই তিন প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের কাছে দেশের উন্নয়নকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতবর্ষে বিদেশী প্রতিনিধিরা এসে আশ্চর্য হয়েছেন যে কীভাবে রাস্তার ধারের ব্যবসায়ীরাও কিউআর কোড শেয়ার করে ক্রেতাদের কাছে টাকা নিচ্ছেন। করোনার সময়কালে একটি টেক প্ল্যাটফর্ম Cowin আমাদেরকে ২০০ কোটি ভ্যাকসিন দিতে সাহায্য করেছে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের ‘ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার’-এর নীতি সারা দেশের বিভিন্ন অর্থমন্ত্রীরা গ্রহণ করেছেন।

প্রশ্ন: সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় সমস্যা, এ বিষয়ে জি২০ এর ধনী দেশগুলির কী দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে মুদ্রাস্ফীতির বোঝা না বইতে হয়? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: মুদ্রাস্ফীতি আজকে একটা সারা পৃথিবীব্যাপী ইস্যু। করোনা মহামারির পর থেকে সারা পৃথিবীতে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ বাড়তে থাকে। জি২০ সম্মেলনে একটি মিটিং হয় বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নরদের মধ্যে। সেখানে তাঁরা বলেন, ‘‘একটা শক্তিশালী নীতির প্রয়োজন। যেখানে প্রত্যেকটি দেশ মিলিতভাবে এই মুদ্রাস্ফীতিকে রোধ করতে পারবে।’’ আমাদের ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে আমরা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে ২০২২ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী যে মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে, ভারতে তার থেকে ২.২ শতাংশ কম রয়েছে। এই কারণে আপনারা বুঝতে পারবেন এই বছরের রাখি বন্ধনের সময় আমরা গ্যাসের দাম কমাতে পেরেছি উপভোক্তাদের জন্য।

প্রশ্ন: ভারতবর্ষ বর্তমানে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০২৭ সালের মধ্যে আমরা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে চলেছি। সারা পৃথিবীব্যাপী এর প্রভাব কী হতে পারে?

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: আপনারা ঠিকই বলছেন ভারতবর্ষ পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। কীভাবে এটা হল, আমার (PM Narendra Modi) মনে হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এই শিরোপা দখল করতে অনেক কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। সব থেকে বড় কথা বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার তার জনগণকে বিশ্বাস করে। জনগণের যে সামর্থ্য সেটাকেও বিশ্বাস করে। এটা মনে রাখতে হবে যে জনগণ আমাদেরকে এতটাই বিশ্বাস করে যে তারা আমাদেরকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে শুধুমাত্র একবারের জন্য নয়, দু'দুবারের জন্য। এর ফলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক স্থিরতা এসেছে। সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বঞ্চিত শ্রেণির ক্ষমতায়ন হয়েছে। সামাজিক বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ‘ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’ ভারতবর্ষে এসেছে রেকর্ড পরিমাণে। ভারতবর্ষের রফতানি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। বিগত বছরগুলির সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। এর ফলে সারা দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে ১৩.৫ কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। যেটা আমাদের কাছে একটা বড় সফলতা। ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই শ্রীবৃদ্ধি শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয় সারা পৃথিবীর জন্যই ভাল।

প্রশ্ন: আপনি (PM Narendra Modi) ৭২ বছরে পা দিলেন, কিন্তু আপনার এনার্জি লেভেল দেখে যে কোনও যুবকও ঈর্ষা করবে। আপনি কীভাবে এতটা তরতাজা এবং সক্রিয় থাকেন? 

প্রধানমন্ত্রীর উত্তর: সারা পৃথিবীব্যাপী অনেক মানুষই থাকেন, যাঁরা তাঁদের শক্তিকে সময় এবং সংস্থান দিয়ে উদ্দেশ্যের পথে নিয়ে যান। এটা শুধুমাত্র আমি একা নই বা আমি ব্যতিক্রম এমনটাও নয়। আমি যখন রাজনীতিতে আসিনি তখন সমাজের জন্য কাজ করতাম এবং একদম ভূমিস্তরে এই কাজ ছিল আমার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমি ঘুরতে পেরেছি। দ্বিতীয় দিক হল, পার্থক্য আছে একটি মিশন এবং অ্যাম্বিশনের মধ্যে। যখন একজন মানুষ অ্যাম্বিশনের জন্য কাজ করেন, তখন তিনি নিজের পদ, ক্ষমতা এবং সুবিধাকে লক্ষ্য রাখেন। কিন্তু যখন একজন মানুষ মিশনের জন্য কাজ করেন, তখন তাঁর ব্যক্তিগতভাবে সেখানে পাওয়ার কিছু থাকে না। তাই উত্থান এবং পতন সেখানে খুব বেশি ভূমিকা রাখে না। তিনি মিশনের মধ্যেই নিজেকে উৎসর্গ করে দেন। তাঁর যা কিছু সংস্থান আছে সেই সমস্ত কিছুকে তিনি সেখানে রাখেন। আমার মিশন হল সমগ্র দেশের উন্নয়ন। আমি আগেও বলেছি যে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে আমি সারা ভারতের প্রতিটি জেলাতেই সফর করেছি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এবং সেখানে আমি দেখেছি যে সাধারণ মানুষ কীভাবে থাকে এবং বাঁচে।

‘মানি কন্ট্রোল’-কে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎকার থেকে অনুবাদিত। 

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles