ছেলে-মেয়েরা যাতে একে অপরের পাশে বসতে না পারেন, সেই জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ওই সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ ভেঙে তাকে তিন ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন।
সিট অন ল্যাপ বিতর্ক
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গত জুলাই মাসের শেষের নীতি পুলিশির অভিযোগে উত্তাল হয় কেরলের (Kerala) তিরুবনন্তপুরম। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল হয় সামাজিক মাধ্যমও। তিরুবনন্তপুরমের (Thiruvananthapuram) এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছেই অবস্থিত এক পুরনো বাসস্ট্যান্ড। সেখানেই ছাত্রদের কোলে বসে আছেন ছাত্রীরা। কোনও ছাত্রের কোলে বসে একজন ছাত্রী, কোনও কোনও ছাত্রের কোলে আবার দুইজনও রয়েছেন। একেবারে গায়ে গা এলিয়ে বসে রয়েছেন কলেজ পড়ুয়ারা। এরকমই এক অভিনব প্রতিবাদের ছবি সেই সময় ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিবাদের নাম দিয়েছিলেন 'সিট অন ল্যাপ প্রতিবাদ' (Sit on lap protest)! এই প্রতিবাদ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নীতি পুলিশগিরির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেই ছাত্রীদের ফের নীট পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিল এনটিএ
ওই বাসস্ট্যান্ডে আগে যাত্রীদের বসার জন্য একটি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বেঞ্চ ছিল। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা পাশাপাশি বসে গল্পগুজব করতেন। ছেলে-মেয়েরা যাতে একে অপরের পাশে বসতে না পারেন, সেই জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ওই সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ ভেঙে তাকে তিন ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এমনভাবে ভাগ করা হয়েছিল, একটি বেঞ্চে একজনই বসতে পারেন। আর প্রতিটি আসনের মাঝে অনেকটা করে ফাঁক। এই ধরনের নীতি পুলিশদের বিরুদ্ধেই অভিনব ‘সিট অন ল্যাপ’ সকলকে চমকে দিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি না বসতে দেওয়ায়, একে অপরের কোলে বসেই গল্প করা শুরু করে দেন ওই কলেজের পড়ুয়ারা। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
In #Kerala some 'SADACHARA premikal' cut a single bench to 3 pieces outside an engineering college to make sure that boys & girls won't sit together... & the students replied in STYLE 🔥👏👌 pic.twitter.com/jbcHgZqXQK
— AB George (@AbGeorge_) July 20, 2022
এবার ঘটনার দুমাস পরে ওই বেঞ্চ সরিয়ে নিল স্থানীয় প্রশাসন। মেয়র আর্জা এস রেজেন্দ্রম কথা দিয়েছেন সেই এলাকায় নতুন করে একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি হবে, যেখানে কোনও লিঙ্গসাম্য বজায় থাকবে।
তিরুবনন্তপুরমের ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাইরের বাসস্ট্যান্ডটিতে ছাত্রছাত্রীরা প্রায়শই পাশাপাশি বসে কথা বলত। স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা এই ভাবে একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছে, এটা স্থানীয় কিছু মানুষের চক্ষুশূল হয়েছিল। এই পড়ুয়াদের 'সায়েস্তা' করতেই তারা বাসস্ট্যান্ডের বসার বেঞ্চটিকে তিনটি আলাদা ভেঙে ফেলেছিল। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের সিট অন ল্যাপ প্রতিবাদে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মেয়র ওই বাসস্ট্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, "যেভাবে বেঞ্চটি ভেঙে তিন টুকরো করা হয়েছে এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা করা হয়েছে, সেটা আধুনিক সমাজের জন্য অশোভন। আমি তিরুবনন্তপুরম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে এখানে একটি নতুন বাস স্ট্যান্ড তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছি।"
আরও পড়ুন: বন্ধ করে দিন সমস্ত বেআইনি ধর্মীয় স্থান, ‘মসজিদ’ মামলায় রায় কেরল হাইকোর্টের
নন্দনা পিএম নামে, এই অভিনব 'সিট অন ল্যাপ' প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক ছাত্রী বলেন, "আমাদের এই ছবিটা স্থানীয় মানুষদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ছবি নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচানোর প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। আমরা যে পরিস্থিতিতে বড় হয়েছি এবং এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি, তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা মনে করি না যে, সমাজ রাতারাতি বদলে যাবে। তবে, শিক্ষার্থীদের আবেগে, অনুভূতিতে আঘাত করলে প্রতিবাদ হবেই। আমাদের এই ছবিটা ভাইরাল হওয়ার পর থেকে, আমরা বহু মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। যদিও, ফেসবুকে কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও এসেছে। কিন্তু ন্যায় যখন আমাদের পক্ষে আছে, তখন এই সব সমালোচনা আমরা গায়ে মাখছি না।" কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অশ্বিন এম বলেছেন, "৯ বছর আগে অবৈধভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি করেছিল। এই বাসস্ট্যান্ডে বসা শিক্ষার্থীরা বহু বছর ধরেই সমস্যায় ভুগছেন। ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বসলে, স্থানীয় লোকজন তাদেরকে লক্ষ্য করে অশালীন মন্তব্যও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।