img

Follow us on

Thursday, Sep 12, 2024

Ajmer Gangrape: ৩২ বছর পর আজমের গণধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা, ৬ জনের যাবজ্জীবন

POCSO Court: আজমের গণধর্ষণ মামলায় দোষী একদা কংগ্রেস নেতা নাফিস চিস্তিকে যাবজ্জীবন পকসো আদালতের

img

আজমের গণধর্ষণ মামলায় দোষীদের সাজা পকসো আদালতে।

  2024-08-20 18:32:44

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রায় ৩২ বছর আগে ঘটে যাওয়া আজমের গণধর্ষণ (Ajmer Gangrape) মামলার রায় ঘোষণা করল বিশেষ পকসো আদালত। স্কুলের ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেল করে দিনের পর দিন গণধর্ষণ। মুখ বন্ধ করতে অশালীন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল। ৩২ বছর আগের এই ঘটনায় নড়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। ১০০ জনেরও বেশি কিশোরীকে এ ভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় ৬ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনাল আদালত।

ঘটনাস্থল ছিল রাজস্থানের আজমের। ১৯৯২ সালে সে শহরের বুকে ধারাবাহিক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। তার পর যত তদন্ত এগিয়েছে, ততই উঠে এসেছে একের পর এক নতুন তথ্য। মঙ্গলবার ওই মামলায় বাকি ৬ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়। এর আগে পকসো (POCSO Court) আদালত নাফিস চিস্তি, নাসিম ওরফে টারজান, সেলিম চিস্তি, ইকবাল ভাটি, সোয়েল ঘানি এবং সৈয়দ জামিন হুসেনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এই মামলায় আগেই ১৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাজা হয়েছিল ৯ জনের। একজন আসামী অন্য মামলায় জেলে রয়েছেন। একজন আত্মহত্যা করেছে এবং একজন পলাতক। 

ঠিক কী ঘটেছিল?

১৯৯২ সালের ২১ এপ্রিল আজমেরের (Ajmer Gangrape) স্থানীয় এক সংবাদপত্র এই ঘটনা সামনে আনে। এলাকার গুন্ডাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে স্কুলের মেয়েরা, এই খবর ও ছবি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হইচই পড়ে যায়। শুরু হয় তদন্ত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, আজমেরে মেয়েদের স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত ফারুখ। তার পর প্রলোভন দিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করত। গণধর্ষণ করা হত। ধর্ষণের সময়কার ছবিও তোলা হত। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছিল, ছবি দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করা হত। ব্ল্যাকমেল করে নির্যাতিতা ছাত্রীকে বলা হত সে যেন তার বান্ধবীদেরও ফারুখ এবং নাফিসের কাছে পাঠায়। এ ভাবেই ওই স্কুলের একাধিক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। ফারুখদের শিকার হয়েছিল আজমেরের আরও একটি স্কুলের ছাত্রীরা। ফারুখ ও নাফিস যুব কংগ্রেসের নেতা ছিল। এলাকায় তাদের একটা গ্যাং ছিল। আজমের ধারাবাহিক গণধর্ষণের ঘটনায় ফারুখ এবং নাফিসই ছিল মূল অপরাধী।

গুন্ডা-রাজ

সেই সময় ওই এলাকায় ফারুখ এবং নাফিসের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। রাজনৈতিক প্রতাপ, প্রতিপত্তিতে ভর করে এলাকায় রাজ করত তারা। আর সেই কারণেই নির্যাতিতা এবং তাদের পরিবার সব জেনেও মুখে টুঁ শব্দটি করত না। ফারুখ এবং নাফিসদের হাতে নির্যাতিতারা অধিকাংশই ছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কোনও কোনও কিশোরীর বাবা সরকারি কর্মীও ছিলেন। এই ঘটনার পর বহু নির্যাতিতার পরিবারই আজমের ছেড়েছিল। কেউই প্রকাশ্যে এ নিয়ে সরব হননি। বহু দিন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে ঘুরেছে অভিযুক্তরা। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ছিল। প্রধান অভিযুক্ত ফারুক চিস্তি আজমের যুব কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। নাফিস চিস্তি ছিল আজমের (Ajmer Gangrape) ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। আনোয়ার চিস্তি আজমের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করত। এই গ্যাংটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ছিল। আজমের জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, সুফি সাধু খাজা মইনুদ্দিন হাসান চিস্তির দরগার খাদিমদের পরিবার থেকে আসা বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী যুবক এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল। পুলিশ, উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ এবং কর্মকর্তারাও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অনুমান।

হিন্দু সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ

অভিযোগ সামনে আসার পরই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় হিন্দু সংগঠনগুলি। বিচার দাবি করে প্রতিবাদ শুরু করে তারা। হিন্দু সংগঠনগুলি আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ারও হুমকি দেয়। তীব্র চাপে, আজমের জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে এবং জনগণের ক্রোধ প্রশমিত করতে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রতিরোধ করতে সন্দেহভাজনদের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। শেষ পর্যন্ত, তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি সিবি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালের ৩০ মে, সিআইডি সিবি আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই কেলেঙ্কারিটি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের, যেমন খাদিম চিস্তি পরিবারগুলির সদস্য এবং যুব কংগ্রেসের সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করে, যারা স্কুলছাত্রীদের শোষণ করেছিল। একটি ফটো ল্যাব থেকে ফাঁস হওয়া স্পষ্ট ছবি অপরাধটির প্রমাণ দেয়।

আরও পড়ুন: ব্যর্থ রাজ্য, আরজি করের নিরাপত্তার দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

তদন্তের পর তদন্ত

অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। তাদের সাজাও হয়। ২০০৭ সালে ফারুখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে ফারুখকে মুক্তির নির্দেশ দেয় রাজস্থান হাইকোর্ট। ফারুখ গ্রেফতার হলেও পলাতক ছিল নাফিস। ২০০৩ সালে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। পরে অবশ্য জামিন পায়। ফারুখের মতোই এলাকায় রয়েছে নাফিস। অন্য অভিযুক্তরাও জামিনে মুক্ত। এই ঘটনায় মোট ৬টি চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। তাতে নাম ছিল ১৮ জন অভিযুক্তের। ১৪৫ জনেরও বেশি সাক্ষীর নাম ছিল। মাত্র ১৭ জন নির্যাতিতা তাদের বয়ান রেকর্ড করিয়েছিল। আজমের (Ajmer Gangrape) পুলিশের সন্দেহ, ১০০ জনেরও বেশি কিশোরী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে অধিকাংশই তদন্তের মুখোমুখি হয়নি। এখনও ৩০ বছর আগের সেই ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে আজমের।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

 

Tags:

Madhyom

national news

bangla news

police

crime

1992 Ajmer gangrape and blackmail case

‘Khadims’ of Ajmer dargah

Ex-Congressman Nafis Chisti

POCSO Court


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর