img

Follow us on

Saturday, Jan 18, 2025

Akashteer: এয়ার-ডিফেন্সের গেম-চেঞ্জার! ‘আয়রন ডোম’কেও ছাপিয়ে যাবে ভারতের ‘আকাশতীর’?

Air Defence System: এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে ভারতের নয়া হাতিয়ার ‘আকাশতীর’ ভয় ধরাচ্ছে চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের বুকে...

img

আকাশতীর, ভারতের নয়া হাতিয়ার। ছবি: ট্যুইটার

  2025-01-18 18:05:09

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চারিদিকে বাড়ছে শত্রু। চিন-পাকিস্তানের চোখ রাঙানির সঙ্গে বছর শেষে যোগ হয়েছে বাংলাদেশের আস্ফালনও। এই পরিস্থিতিতে বেড়েছে দেশে অনুপ্রবেশ। বেআইনি কাজ রুখতে একদিকে যেমন সীমান্তে নজরদারি বেড়েছে, তেমনই ভারতীয় সেনাও নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। শক্তিশালী সামরিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা হুমকির দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে, ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী তার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের উন্নতির জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছে ‘আকাশতীর’, পরবর্তী প্রজন্মের একটি আকাশসীমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ডিআরডিও এবং ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড (BEL) যৌথভাবে তৈরি করেছে।

আয়রন ডোমের থেকেও ভয়ঙ্কর আকাশতীর!

প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার পথেই হেঁটেছে ভারত। একাধিক দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি যেমন হয়েছে, তেমনই দেশীয় প্রযুক্তিতেও অস্ত্র-শস্ত্র উৎপাদন করা হচ্ছে। আধুনিক যুগে অত্য়াধুনিক অস্ত্র যোগ হয়েছে ভারতীয় সেনার ভাণ্ডারে। সেনাবাহিনীতে মাল্টিপল সেন্সর ইনপুটের জন্য যোগ করা হয়েছে আকাশতীর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। বিশ্বজুড়ে ইজরায়েলের আয়রন ডোমের দিকে নজর থাকলেও, ভারত চুপচাপ তার নিজস্ব আকাশসীমা প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে আকাশতীর প্রকল্পের মাধ্যমে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'ডিকেড অব ট্রান্সফরমেশন' এবং 'ইয়ার অব টেক অ্যাবজর্বশন' উদ্যোগের অধীনে আকাশতীর তৈরি করা হয়েছে, যা আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকরী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। ভারতের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা কৌশলকে শক্তিশালী করবে। আকাশতীর ভারতের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ গেম-চেঞ্জার।

ইজরায়েলের আয়রন ডোম

ইরান-লেবাননের শয়ে শয়ে মিসাইল হামলা ইজরায়েল প্রতিহত করেছে তাদের বিখ্যাত আয়রন ডোম মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে। ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে সবথেকে সুপরিচিত, ‘লৌহগম্বুজ’ বা ‘আয়রন ডোম’ ব্যবস্থা। ৪ কিমি থেকে ৭০ কিমি দূর থেকে ছোড়া স্বল্প-পাল্লার রকেট, শেল এবং মর্টারগুলিকে আটকানোর জন্য নকশা করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যেভাবে বারে বারে হামাস-সহ গাজার যোদ্ধা গোষ্ঠীগুলি এবং লেবাননের হিজবুল্লা গোষ্ঠী নাগাড়ে ইজরায়েল লক্ষ্য করে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে গিয়েছে এবং ইজরায়েল যেভাবে সেই হামলাগুলিকে ভোঁতা করে দিয়েছে, তাতে আয়রন ডোমকে বর্তমান বিশ্বের সবথেকে যুদ্ধ-পরীক্ষিত এবং সফল বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

কীভাবে কাজ করেছে আয়রন ডোম

ইজরায়েল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আয়রন ডোমের ব্যাটারি। প্রতিটি ব্যাটারিতে তিন থেকে চারটি লঞ্চার থাকে। প্রতিটি লঞ্চারে থাকে ২০টি করে ইন্টারসেপ্টর মিসাইল। রাডারের সাহায্যে উড়ে আসা রকেটগুলিকে শনাক্ত করে এবং ট্র্যাক করে আয়রন ডোম। তারপর এই ব্যস্থা হিসেব কষে দেখে যে, রকেটগুলি কোনও জনবহুল এলাকায় পড়তে পারে কিনা। যদি দেখে সেই সম্ভাবনা রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে ওই রকেটগুলি লক্ষ্য করে ইন্টারসেপ্টর মিসাইল নিক্ষেপ করে। আর যেগুলি কোনও জনবহুল এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, সেগুলিকে মাটিতে পড়ে নষ্ট হতে দেয়। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, তাদের এই ব্যবস্থা ইজরায়েলের দিকে উড়ে আসা ৯০ শতাংশ রকেটকেই ধ্বংস করে।

বিমান প্রতিরক্ষায় ভারতের বিপ্লব

ভারত দীর্ঘদিন ধরে তার আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে, বিশেষ করে আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং অত্যাধুনিক বিমান আক্রমণের হুমকি বৃদ্ধি পাওয়ায়। আয়রন ডোমের মতোই ভারতের আকাশতীর এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী সমাধান। এটি অত্যাধুনিক রেডার, ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনা এবং কমান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের সমন্বয়ে তৈরি। আকাশতীর বিশেষভাবে উচ্চ-গতি, কম উচ্চতার এবং স্টেলথ লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। আকাশতীরের রেডার সিস্টেম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিশাল অগ্রগতি। এটি একাধিক লক্ষ্যবস্তু বিভিন্ন উচ্চতায় শনাক্ত করতে সক্ষম, এবং অত্যাধুনিক সিগন্যাল প্রসেসিং অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে স্টেলথ বিমান, ড্রোন এবং সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে। ঐতিহ্যবাহী রেডার সিস্টেমের তুলনায়, আকাশতীরের রেডার প্রায় মাটি ঘেঁষে চলা লক্ষ্যবস্তুও শনাক্ত করতে সক্ষম, যা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে ৩৬০-ডিগ্রি সুরক্ষা প্রদান করে।

বর্ধিত পরিসর এবং সঠিকতা

আকাশতীরের মিসাইলটি একটি বর্ধিত হামলা পরিসর প্রদান করবে, যার মাধ্যমে এটি বৃহত্তর দূরত্ব থেকে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। এর ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো, যেমন সেনা ঘাঁটি, বিমানবন্দর এবং জাতীয় অবকাঠামোকে একাধিক সম্ভাব্য হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারবে। মিসাইলটির উন্নত পরিসর এবং সঠিকতা, শত্রু বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে তাদের ক্ষতি করার আগেই লক্ষ্যবস্তু থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অধিক কার্যকরী। আকাশতীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এটি ভারতের বিদ্যমান আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সমন্বয় স্থাপন করতে সক্ষম। এটি রাশিয়ার এস-৪০০ সিস্টেম এবং ইজরায়েল-উন্নত বারাক-৮ সিস্টেমের সঙ্গেও একত্রে কাজ করবে।

মোবিলিটি এবং মোতায়েনের নমনীয়তা

আকাশতীরের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং রেডার ইউনিটগুলি উচ্চ-মোবিলিটি যানবাহনে স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে এটি বিভিন্ন ধরনের ভূ-প্রকৃতিতে দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব। সুতরাং, এটি যেকোনও পরিস্থিতিতে, বিশেষত সীমান্তে জরুরি সময়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করতে সক্ষম। সমতল ভূমি, পাহাড়ি এলাকা বা উপকূলীয় অঞ্চলে আকাশতীর সহজেই স্থাপন করা যেতে পারে, যা বাস্তব সময়ে কৌশলগত সুরক্ষা প্রদান করবে।

প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারত

আকাশতীরের অন্যতম প্রধান দিক হল এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দেশীয় প্রযুক্তি, যা সম্পূর্ণভাবে ভারতের ডিআরডিও এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড দ্বারা তৈরি। এই সিস্টেমটির উন্নয়ন ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির প্রতি বাড়তি দক্ষতা এবং 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগের অধীনে আত্মনির্ভরতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। এটি বিদেশি সরবরাহকারীদের উপর নির্ভরশীলতা কমায় এবং একটি দেশীয় প্রতিরক্ষা পরিবেশ তৈরি করে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করে। ‘প্রজেক্ট আকাশতীর’-এর লক্ষ্য হল পরিস্থিতিগত সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণের একটি “অভূতপূর্ব স্তর” প্রদান করা যাতে বন্ধুত্বপূর্ণ বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং “প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আকাশপথে” শত্রু বিমানকে নষ্ট করা যায়। 

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

Indian Army

bangla news

air defence system

Project Akashteer

Akashteer


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর