img

Follow us on

Thursday, Dec 26, 2024

Atal Bihari Vajpayee: হিন্দুত্বের রাষ্ট্রনায়ক, ভারতবর্ষের গর্ব অটল বিহারী বাজপেয়ী

Vajpayee’s 100th Birth Anniversary: সনাতন হিন্দু ধর্মের অন্তর্নিহিত নির্যাস বুঝতেন বাজপেয়ী

img

দেশের গর্ব অটল বিহারী বাজপেয়ী। ফাইল চিত্র

  2024-12-25 12:45:15

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের রূপান্তরের স্থপতি অটল বিহারী বাজপেয়ীর শততম জন্মদিন বুধবার। এদিন থেকেই শুরু হল তাঁর শতবর্ষ উদযাপন। হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদ এবং সাংস্কৃতিক গর্বের প্রতীক ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনিই প্রথম যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি, তাঁর নেতৃত্বে দেশকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন, যা আজও প্রাসঙ্গিক।

জীবনের পাঠ

১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর গোয়ালিয়রে এক শিক্ষিত ও মূল্যবোধে ভরপুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। তাঁর পিতা কৃষ্ণ বিহারী বাজপেয়ী, একজন শিক্ষক ও পণ্ডিত, ছিলেন। অটলজি’র প্রাথমিক বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তাঁর বাবাই। বীর সাভারকারের বিপ্লবী চিন্তা এবং ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী তরুণ বয়সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এ যোগ দেন। আরএসএস তাঁকে আত্মনির্ভরতা, সাংস্কৃতিক গর্ব এবং ভারত মাতার প্রতি অবিচল কর্তব্যের মূলনীতিগুলি শেখায়।

রাজনীতির হাতেখড়ি

বাজপেয়ীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৫১ সালে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জনসংঘ (বিজেএস) থেকে। তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে জাতীয়তাবাদী ভারতের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের জন্য নিরলস প্রচার চালাতে থাকেন। তাঁর সংসদীয় ভাষণগুলো ছিল রাষ্ট্রনায়কোচিত, যেখানে তিনি ভারতকে তাঁর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করার আহ্বান জানাতেন। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাচীন ভারতের শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

হিন্দুত্বের মৌলিক ভাবনাকে অগ্রাধিকার

১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থায় যখন ইন্দিরা গান্ধী গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে দমন করেছিলেন, বাজপেয়ী তা প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে উদিত হন এবং তাঁর বক্তব্য ও লেখনীর মাধ্যমে হিন্দুত্বের মৌলিক ভাবনার পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর ধারা এবং বিশ্বাস ভারতের সাংস্কৃতিক সত্তার রক্ষায় প্রতিনিয়ত অবদান রেখেছিল। ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রতিষ্ঠার পর বাজপেয়ী দলটির একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি হিন্দুত্বের আদর্শকে একটি আধুনিক ও সমন্বিত রূপে উপস্থাপন করে। বাজপেয়ীর কৌশলগত সমঝোতা এবং প্রজ্ঞা ভারতকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে আধুনিকীকরণ এবং ঐতিহ্য সমন্বিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় যোগ। কিন্তু দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর প্রতি ছিল অপার শ্রদ্ধা। এক টালমাটাল সন্ধিক্ষণে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন - এক দিকে জোট রাজনীতির উত্থান, অন্য দিকে দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় বদল আনার প্রক্রিয়া। ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯-২০০৪ সাল এই তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ছিলেন বাজপেয়ী। অর্থাৎ ২২৬৮ দিন প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নেতৃত্বের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা ছিল ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পারমাণবিক পরীক্ষা, যা ভারতকে একটি পারমাণবিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাজপেয়ীর কূটনৈতিক কৌশল এবং রাষ্ট্রীয় আত্মবিশ্বাস ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদা প্রদান করেছিল। পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "এটি আগ্রাসন নয়, আত্মরক্ষার অংশ"।

কার্যকরী রাষ্ট্রনীতির অংশ ছিল হিন্দুত্ব

অটল বিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হিন্দুত্বকে শুধু একটি আদর্শ হিসেবে নয়, বরং কার্যকরী রাষ্ট্রনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাঁর নেতৃত্বে, ভারত তার সাংস্কৃতিক পরিচয় ও গর্ব বজায় রেখে প্রগতির পথে এগিয়েছিল। তাঁর বক্তব্যগুলি দেশবাসীকে ভারত মাতা এবং তার ঐতিহ্যের প্রতি গর্বিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। হিন্দুত্বের এক দৃঢ় পথপ্রদর্শক ছিলেন বাজপেয়ী। সনাতন ভারতের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ আস্থা। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরেই তিনি দেশকে উন্নতির পথ দেখিয়েছিলেন।

হিন্দু ধর্ম নিয়ে বাজপেয়ীর অভিমত

বাজপেয়ী নিজে শুধু সনাতনী হিন্দু ছিলেন না, তার পাশাপাশি সনাতন হিন্দু ধর্মের অন্তর্নিহিত নির্যাস তিনি বুঝতেন। হিন্দু ধর্ম নিয়ে এক এক প্রবন্ধে বাজপেয়ী লিখেছিলেন, “হিন্দুধর্মের প্রতি আমার আকর্ষণের প্রধান কারণ হল এটি মানবজাতির সর্বোচ্চ ধর্ম। হিন্দু ধর্ম কোন বইয়ের সাথে বা কোন নির্দিষ্ট ধর্ম প্রচারকের সাথে যুক্ত নয়। হিন্দু ধর্মের রূপটি সর্বদা হিন্দু সমাজ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এই কারণেই এটি অনাদিকাল থেকে ক্রমবর্ধমান এবং বিকাশ লাভ করে আসছে।”

আরও পড়ুন: ক্লাব অফ রোমের মাধ্যমে উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করেছিলেন মনমোহন সিং?

যখন সমগ্র সমাজ ধর্ম ও জাতপাতের ভিত্তিতে সমাজে বিভাজন তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ই বাজপেয়ীর বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করা হয়। একবার তিনি বলেছিলেন, “আপনারা জানেন, আমার জীবনের প্রথম দিকে, আমি পৈতে পরিধান করতাম, কিন্তু যখন আমি নিজেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে নিবেদিত করি, তখন আমি এটি সরিয়ে দিয়েছিলাম কারণ আমি অনুভব করেছি যে এটি আমাকে অন্য হিন্দুদের থেকে আলাদা করেছে। আগে ‘শিখা’ এবং ‘সূত্র’ ছিল হিন্দুদের দুটি পরিচয়। বেশিরভাগ মানুষ শিখাকে আর রাখেন না। শিখা পালন না করে কেউ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করেছে এমন কথা বলা ভুল। হ্যাঁ, শিখা যখন জোর করে কাটা হয়, ধর্মীয় দমনের রূপক, তখন তা বন্ধ করা আমাদের কর্তব্য।”

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Atal Bihari Vajpayee

Vajpayee’s 100th Birth Anniversary

Atal Bihari Vajpayee Hinduism


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর