Raymond: কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার, অনুকূল পরিবেশ, ভারতে টেক্সটাইল শিল্পক্ষেত্রে বিকাশ ঘটছে দ্রুত
ভারতে বস্ত্র-শিল্পের অনুকূল পরিবেশের কথা জানালেন রেমন্ডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌতম হরি সিঙ্ঘানিয়া।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের (Bangladesh Crisis) কারণে রেডিমেড পোশাক এবং কাপড়ের জন্য সে দেশের উপর নির্ভরশীলতা কমছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পোশাক আমদানির জন্য আপাতত আর বাংলাদেশের ওপর ভরসা করতে চাইছে না। তাই ভারতের প্রথম সারির টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সংস্থা রেমন্ডের (Raymond) দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা পোশাক সংস্থা। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যে সব সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসা করে, সেগুলিও রেমন্ডের কাছে তাদের ব্যবসা বিক্রি নিয়ে কথাবার্তা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌতম হরি সিঙ্ঘানিয়া।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা (Bangladesh Crisis) দেখা দেওয়ার পর বিশ্বের নানা পোশাক বিক্রয়কারী সংস্থা রেমন্ডের (Raymond) সঙ্গে কথা বলেছে, বলে জানালেন গৌতম হরি সিঙ্ঘানিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্কটের কারণে বিশ্বের বহু দেশ থেকে পোশাক বিক্রেতা সংস্থাগুলি রেমন্ডের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহ দেখিয়েছে এবং খোঁজখবর চালাচ্ছে। আমরা সেগুলি পর্যালোচনা করে দেখছি।’ ভারতে পোশাক তৈরির অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। পোশাকশিল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা প্রয়োজন, ভারতে তা রয়েছে। রেমন্ডের কাপড় তৈরির যেমন ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনই রয়েছে পোশাক তৈরির ব্যবস্থাও। ফলে পণ্যের চূড়ান্ত সরবরাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো সময় বাঁচাতে পারবে। গৌতম বলেন, বাংলাদেশের কাপড়ের সরবরাহ নেই। কাপড় সরবরাহের দিক থেকে ভারতে খুব সুবিধা রয়েছে। ভারতে শ্রমিকের মজুরি বেশি হলেও বিষয়টি সার্বিকভাবে দেখতে হবে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্যুট নির্মাতা সংস্থা হিসাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের কারখানায় বিপুল বিনিয়োগ করেছে রেমন্ড। বর্তমান পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ তুলে সেই দিশায় এগোতে প্রস্তুত সংস্থাটি। রেমন্ডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে ৭৫ লাখ জ্যাকেট, ট্রাউজার ও শার্ট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এই কোম্পানির। এর বাইরে ইথিওপিয়ায় তাদের ৩২ লাখ পোশাক তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। রেমন্ড (Raymond) কর্তার কথায়, ‘বাংলাদেশে ফ্যাব্রিক সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। সে দেশে শুধুমাত্র পোশাক তৈরির ব্যবস্থা রয়েছে। কাপড়ের চাহিদা মেটাতে ভারতের উপরেই নির্ভর করতে হবে। এই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করার বিপুল সুযোগ ভারতের কাছে রয়েছে।’
চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল-জুন পর্বে ভারত থেকে টেক্সটাইল রফতানি ৪.১৫ শতাংশ বেড়েছে। সিআইএস গোষ্ঠীভুক্ত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির বিপুল চাহিদাই এর প্রধান কারণ বলে সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষের একই সময়ের ৮.৪৩ বিলিয়ন ইউএস ডলারের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়ে ৮.৭৮ বিলিয়ন ইউএস ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্লোদিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসেসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার চিফ মেন্টর রাহুল মেহতা বলেন, ‘গত দু’বছর ধরে পোশাক রফতানি নিম্নমুখী ছিল। চলতি অর্থবর্ষের গোড়াতেই সেই দিশা ঘুরে গিয়েছে। আমরা এই বদলকে স্বাগত জানাচ্ছি। ইউএসএ-র অর্থনীতি সামান্য চাঙা হওয়া এবং চিন ও বাংলাদেশ থেকে রফতানি কমে যাওয়াই এর মুখ্য কারণ।’ ধারাবাহিক ঘরোয়া চাহিদা বৃদ্ধি, রফতানি বাড়তে থাকা এবং তুলোর দাম কমতে থাকায় ভারতের টেক্সটাইল শিল্পক্ষেত্রের বিকাশ ঘটবে বলে এক রিপোর্টে জানিয়েছে রেটিং সংস্থা ক্রিসিল।
আরও পড়ুন: ‘বাইরে অপরাধীরা, ভয়ে নির্যাতিতারা’, ধর্ষণের মামলার বিলম্ব নিয়ে সরব রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির (Bangladesh Crisis) কারণে স্বল্পমেয়াদী পোশাকের অর্ডার ভারতে স্থানান্তরিত হতে পারে। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (এইপিসি) মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর সম্প্রতি একথা জানান। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সব রফতানিকারকদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল হোক এবং স্বাভাবিক ব্যবসা আবার শুরু হোক। আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংস বিক্ষোভের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতিশীল। ভারতের বাংলাদেশের এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর কোনও ইচ্ছা বা প্রবণতা নেই। তবে সারা বিশ্বে পোশাকের চাহিদা মেটাতে ভারত সব সময়ই প্রস্তুত।’ এ প্রসঙ্গে রেমন্ডের (Raymond) চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌতম হরি সিঙ্ঘানিয়া জানান, বিশ্ব ‘চিন প্লাস ওয়ান’ কৌশল গ্রহণ করেছে। ফলে ভারতকে পণ্যের উৎস হিসেবে অনেক দেশ দেখতে চাইছে। বিষয়টি ভারতের পক্ষে ভাল। সবাই নিরাপদে থাকার কৌশল গ্রহণ করতে চায়। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। রেমন্ডও সেই পথেরই পথিক।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।