MEA: বানভাসি বাংলাদেশ, ভারতকে দায়ী করে পোস্ট সেদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়, কী প্রতিক্রিয়া দিল্লির?...
বানভাসি বাংলাদেশ। দায় নেই ভারতের। সাহায্য় চাইলেন ইউনূস।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক অস্থিরতা হোক বা বন্যা— যে কোনও কিছুর জন্য ভারতের হাত খুঁজতে ব্যস্ত বাংলাদেশের একাংশ। বা বলা ভালো, বর্তমান বিএনপি-জামাত ও তাদের ঘেঁষে থাকা সংগঠনগুলি। গত একমাস ধরে হিংসা ও অশান্তিতে জেরবার বাংলাদেশে এবার বন্যা-পরিস্থিতি। প্রবল বৃষ্টিতে প্লাবিত ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির একাংশ। বানভাসি সেদেশের ৬ জেলা। তবে এর পিছনেও ভারতের চক্রান্ত দেখছে বাংলাদেশের একাংশ। বাংলাদেশের বন্যা (Bangladesh Flood) পরিস্থিতির জন্য ভারতেকে দায়ী করে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হচ্ছে। বাংলাদেশের একাংশের এই দাবিকে তথ্য দিয়ে খারিজ করেছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বিশেষজ্ঞরাও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি খারিজ করেছে। যদিও এই কঠিন সময়ে বন্যা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় গঠন করতে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস।
ত্রিপুরায় গোমাতী নদীর বাঁধের স্লুইস গেট খোলার ফলে বাংলাদেশে বন্যা (Bangladesh Flood) পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খারিজ করল ভারত। এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে বিদেশমন্ত্রক সাফ জানিয়েছে, “ত্রিপুরার ডম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা হচ্ছে। সেদেশে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, এই তত্ত্ব একেবারেই সত্য নয়। গত কয়েকদিন ধরে ভারত ও বাংলাদেশের নানা জায়গায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। দুদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদী সংলগ্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমরা উল্লেখ করতে চাই, ডম্বুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশের সমতলভূমি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে উচ্চভূমিতে অবস্থিত। এটি একটি কম উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এখান থেকে কিন্তু বাংলাদেশেও ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।”
Flood situation in Bangladesh not due to release of waters from Indian dam on Gumti River, Tripura:https://t.co/8hcnRkoBF1 pic.twitter.com/p5zY0LII7D
— Randhir Jaiswal (@MEAIndia) August 22, 2024
এছাড়াও বিবৃতিতে জানানো হয়, “বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমগ্র ত্রিপুরা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ২১ অগাস্ট থেকে ভারী বর্ষণ জারি রয়েছে। ফলে এই এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ফলে দুদেশের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে বিঘ্ন ঘটছে। তবু আমরা বাংলাদেশকে বন্যা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি।” প্রসঙ্গত, ভারী বৃষ্টির জেরে ত্রিপুরাতেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের (Bangladesh Flood) কুমিল্লা, ফেনি, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালি ও মৌলভিবাজার জেলার ৪৩টি উপজেলা বন্যাপ্লাবিত। এই অঞ্চলে মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত তবে এর জন্য ভারতের দোষ নেই বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের দাবি, ২নদেশের মধ্যে দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হলে সেখানে যদি বন্যা হয় তাহলে ভারত ও বাংলাদেশ-২টি দেশেই ভোগান্তি হয়। দুটি দেশের জনগণই সমস্যায় পড়েন। এই ধরনের সমস্যা সামাল দিতে দু'পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। বুধবার সকাল থেকে পুরো ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। যার জেরে বিকেল ৩টের পর জলপ্রবাহ অতিরিক্ত বেড়ে যায়। যার পরিণামে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বাঁধের স্লুইস গেট খুলে কিছু জল প্রবাহিত হয়ে যায় বাংলাদেশের দিকে।
আরও পড়ুন: বিমানে নয়, ১০-ঘণ্টা ট্রেনে চেপে ইউক্রেন যাচ্ছেন মোদি, জানেন এর বিশেষত্ব?
বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের জেলাগুলিতে এমন বন্যা বলতে গেলে প্রতি বছর হয়ে থাকে। ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু এবার সীমান্ত লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরার একটি নদীর উপর তৈরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পর বাঁধকে কাঠগড়ায় তুলে তীব্র ভারত বিরোধী প্রচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। যদিও সে দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, বিগত এক সপ্তাহ যাবত প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়া সত্বেও কেন প্রশাসন জন সাধারণকে আগাম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়নি। ভারতের ত্রিপুরারও বিরাট অংশ জলের তলায়। সেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত। ৬৬২০টি পরিবার বন্যার ফলে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৩৪৬টি ত্রাণ শিবির গড়ে তোলা হয়েছে।
ধলাই জেলায় গোমতী নদীর ডুম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার কারণেই বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি (Bangladesh Flood) দেখা দিয়েছে বলে সমাজ মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে ইতিমধ্যেই। বন্য়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচার চলছে, তা দুঃখজনক, বলে জানান বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় তিনি ভারতের কাছে সাহায্যের আর্জি জানান। ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণব বর্মা। ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাঁদের সাক্ষাত্ হয় বলে খবর। সূত্রে খবর, স্রেফ বন্যা পরিস্থিতিই নয়, বৈঠকে দু'দেশের যৌথ নিরাপত্তা, বাণিজ্য়, এবং সর্বোপরি দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।