CIHS: বাংলাদেশে হিন্দু গণহত্যা নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে বড় দাবি জানাল 'দ্য সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্ড হলিস্টিক স্টাডিস'...
বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুরা, ভাঙচুর ঘর-মন্দির। ছবি— সংগৃহীত।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নয়াদিল্লির একটি স্বাধীন সংস্থা হল 'দ্য সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্ড হলিস্টিক স্টাডিস' (CIHS)। সম্প্রতি, এই সংস্থা একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে বাংলাদেশি হিন্দুদের (Bangladeshi Hindu) ওপর। ওই রিপোর্টে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, 'হিন্দু জেনোসাইড আনফোল্ডিং ইন বাংলাদেশ', এবং এখানেই উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে বেছে বেছে টার্গেট বানানো হচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের। এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সর্বদাই লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, এমন কথাও উল্লেখ রয়েছে ওই রিপোর্টে। এর পাশাপাশি, ওই সংস্থার পক্ষ থেকে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও দাবি জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত ওই সংস্থা, 'সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড অ্যান্ড হলিস্টিক স্টাডিজ'- এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। বিগত ৭৬ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমশই কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর (Bangladeshi Hindu) এমন সংখ্যা ক্রমশই কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সাম্প্রদায়িক হিংসা, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের পাশাপাশি বৈষম্যকেও দায়ী করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুর জনসংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ কিন্তু ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশে।
ওই রিপোর্টে উল্লেখযোগ্যভাবে দাবি করা হয়েছে, বিগত ৭৬ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা কোনও স্বাভাবিক কারণে কমেনি। উপরন্ত তা কমানো হয়েছে অত্যাচারের মাধ্যমে, ধর্মান্তকরণের (Bangladeshi Hindu) মাধ্যমে। ওই সংস্থার রিপোর্টে আরও দাবি জানানো হয়েছে যে, মহিলাদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বেশিরভাগ ধর্মান্তকরণ সম্ভব হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে, বেছে বেছে হিন্দুদের ধর্মীয় স্থান এবং মূর্তিগুলির উপরে হামলা চালানো হয়েছে। ঘটেছে লুট এবং অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও। হিন্দু সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দেওয়ার জন্যই এমন তাণ্ডব সেখানে মৌলবাদীরা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই রিপোর্টে ইতিমধ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের নতুন কালী মন্দির অথবা চট্টগ্রামের শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের কথা। এই মন্দিরগুলিতে লুট হয়, মূর্তি ভাঙা হয় এবং সম্পূর্ণভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি, বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলাতে গৌড়-নিতাই মন্দিরে হামলা চালায় একদল মৌলবাদী। সেখানকার হিন্দু জনগোষ্ঠীগুলির বাড়িতেও লুট চালানো হয়।
সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন ছিল আসলে মুখোশ, যার মুখ বেরিয়ে এল গত সোমবারই। ক্ষমতার রাশ সম্পূর্ণভাবে চলে এসেছে জামাত-ই-ইসলাম এবং বিএনপি'র মতো সংগঠনগুলির হাতে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বর্তমানে হেফাজতি ইসলামের মতো সংগঠনগুলিও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার যে সংজ্ঞা রয়েছে তার প্রতিটি শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশের (Bangladeshi Hindu) মৌলবাদীরা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, হিন্দু পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমারকে কুপিয়ে হত্যা করে জেহাদিরা। অন্যদিকে হিন্দু রাজনৈতিক নেতা হারাধন রায় ও তাঁর ভাইপোকে যেভাবে হত্যা করা হয় তাতে বোঝাই যায় যে সম্পূর্ণভাবে এই ঘটনা সাম্প্রদায়িক। ওই সংস্থার (CIHS) রিপোর্টে ২০২৪ সালের ১৪ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৬ অগাস্ট পর্যন্ত ৫৭টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ বাংলাদেশের (Bangladeshi Hindu) লক্ষীপুরের একটি ঘটনা ঘটে, যখন ১৪ বছরের একজন হিন্দু নাবালিকাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় জেহাদিরা, স্থানীয় গালইয়ারচর গ্রাম থেকে। ঠিক তার পরের দিন ঢাকাতেই একটি হিন্দু পরিবার, যারা লালবাগ অঞ্চলে বসবাস করত তাদের ওপরে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় মৌলবাদীরা। তাদের বাড়িতে লুট চালানো হয়। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে একাধিক ঘটনা ঘটে যখন হিন্দুর মন্দিরগুলিতে উগ্র মৌলবাদীরা হামলা চালায়। এই ঘটনা ঘটে গত জুনের ২৫ তারিখ।
জুলাই মাসেও একই ধরনের তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে মৌলবাদীরা। ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ইসলামিক মৌলবাদীরা হিন্দুদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি, হিন্দুদের বাড়িগুলিতেও হামলা চালানো হয়। ১৪ জুলাই ঢাকাতে একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ২০ জুলাই বরিশালে হিন্দুদের ব্যবসার প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে হামলা চালানো হয়। চলতি অগাস্ট মাসের ৪ তারিখ হিন্দু কাউন্সিলর কাজল রায়কে হত্যা করা হয়। ইস্কন ও কালী মন্দির ভাঙচুর করা হয় নোয়াখালিতে। একই দিনে উগ্র মৌলবাদীরা তাণ্ডব চালাতে থাকে এবং সেখানকার রায়গঞ্জের হিন্দু সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিককে হত্যা করা হয়। চট্টগ্রামে হিন্দু দোকানগুলিকে লুট করা হয়, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও সংগঠনগুলি অভিযোগ, ২৯টি জেলাতেই হিন্দুদের উপরে আক্রমণ চলে।
ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সিআইএইচএস আবেদন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তারা এমন দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের কাছে। ভারত সরকারের কাছে একইভাবে ওই সংস্থা দাবি জানিয়েছে যে, কূটনৈতিকভাবে চাপ তৈরি করে বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে যেন রক্ষা করা হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।