হাতের কাছেই জঙ্গলের হাতছানি, চলুন হারিয়ে যাই বেতলার অরণ্যে
বেতলায় জঙ্গল সাফারির সংগৃহীত ছবি।
মাধ্যম বাংলা নিউজ: পশ্চিমবঙ্গের একদম প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড। এই রাজ্যেরই এক অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল লাতেহার জেলার বেতল। পোশাকি নাম যদিও বা "পালামৌ", কিন্তু অরণ্য প্রেমিক পর্যটকদের কাছে এর পরিচিতি "বেতলা" (Betla Forest) নামেই। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সহোদর সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তি "বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে " এই পালামৌকে কেন্দ্র করেই লেখা। বিখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর বিভিন্ন উপন্যাসে অতীব সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে এই লাতেহার জেলার বেতলা, কেচকি, মহুয়াডার, ছিপাদোহর, কেড়, গাড়ু-র অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এখানকার সহজ, সরল আদিবাসী মানুষের জীবনের কথা।
যাবেন কীভাবে (Betla Forest)?
কলকাতা থেকে সরাসরি যাওয়ার জন্য চেপে বসতে হবে হাওড়া-ভূপাল এক্সপ্রেস অথবা শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে। নামতে হবে ডাল্টনগঞ্জ অথবা তার আগের স্টেশন বারাওডি-তে। এই দুই জায়গা থেকেই গাড়িতে যেতে হবে বেতলা। দূরত্ব ডালটনগঞ্জ ২৪ এবং বারাওডি ১৬ কিমি।
কোথায় থাকবেন (Betla Forest)?
বেতলায় (Betla Forest) থাকা খাওয়ার জন্য রয়েছে ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম বা জেটিডিসি-র হোটেল বনবিহার (কলকাতা অফিস: ঊষা কিরণ বিল্ডিং, ১২/ এ , ক্যামাক স্ট্রিট , কলকাতা ১৭ )। এছাড়া বেতলা, মারুমাড় প্রভৃতি স্থানে রয়েছে ট্রি হাউস, বন বাংলো প্রভৃতি। এগুলি বুকিং করার জন্য যোগাযোগ করতে হবে এই ঠিকানায়- ডিএফও, ডালটনগঞ্জ (দঃ) ফরেস্ট ডিভিশন, ডালটনগঞ্জ টাইগার প্রোজেক্ট, পালামৌ ন্যাশনাল পার্ক, ডালটনগঞ্জ ৮২২১০১। অথবা ফোন করা যেতে পারে ০৯৯৫৫৫২৭৩৭১ নম্বরে।
কী কী দেখবেন (Betla Forest)?
বেতলা ভ্রমণের মূল কারণই হল অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন এবং অবশ্যই অরণ্য দর্শন বা জঙ্গল সাফারি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের শিরোপা লাভ করে বেতলা।ভারতের ৯ টি জাতীয় উদ্যান এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্যতম এই অরণ্য (Betla Forest)। ১০২৬ বর্গ কিমি আয়তন বিশিষ্ট এই জাতীয় উদ্যানের ২১৩ বর্গ কিমি অঞ্চল কোর এরিয়া। বাকিটা বাফার জোন। মূলত পলাশ, মহুয়া, বাঁশ, করৌঞ্জিয়া গাছের নিবিড় অরণ্যে বাস চিতল হরিন, শম্বর, গউর, বাইসন, বার্কিং ডিয়ার, বন্য শূকর, জংলি কুকুর, বন বিড়াল, আর দামাল হাতির পাল। বাঘও আছে এই ব্যাঘ্র প্রকল্পে। তবে শারদুল মহারাজের দর্শন লাভ কিন্ত কপাল ভালো থাকলে তবেই সম্ভব। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ১৯৩২ সালে এই অরণ্যেই হয় ভারতের প্রথম ব্যাঘ্র গণনা।
এছাড়াও এখানে দেখা মেলে হরেক রঙের, হরেক কিসিমের পাখির, যার মধ্যে রয়েছে ময়ূর, হর্নবিল, বনমোরগ, কোয়েল, বিরল প্রজাতির ঈগল প্রভৃতি। এখানে জঙ্গল সাফারির জন্য ফোন করতে পারেন ০৬২০৬২২০৩১৪ নম্বরে।
জঙ্গল সাফারি শেষ করে চলে আসুন মাত্র ৫ কিমি দূরে আর এক অপূর্ব সুন্দর স্থানে "কেচকি"। দূরে দূরে ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি, ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গাছ গাছালির সারি, আর মাঝে কিশোরীর উচ্ছলতায় বয়ে চলেছে কোয়েল নদী। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই কেচকিতেই শ্যুটিং হয়েছিল বিশ্ব বরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিশ্ব বন্দিত ছবি, আর এক যশস্বী সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ছবি "অরণ্যে দিনরাত্রি"। একই সঙ্গে দেখে নিন প্রায় ৪-৫ কিমি দূরে চেরো রাজা মেদিনী রায়ের দূর্গের ভগ্নাবশেষ, বড়াডিহার শিবমন্দির, কেচকির খুব কাছেই কোয়েল এবং ঔরঙগা নদীর সঙ্গম, বাসুদেব মনডল ড্যাম, সেভেন রিভার পয়েন্ট, কোয়েল ভিউ পয়েন্ট, কুসুম বন বাংলো প্রভৃতি। আর বেতলা থেকে নেতারহাট যাওয়ার পথেই পড়বে দুটি অনন্য সুন্দর স্পষ্ট, লোধ ফলস এবং সুগা বাঁধ। ঘন অরণ্যের মাঝে অবস্থিত এই লোধ ফলস মহুয়াডার থেকে প্রায ১৪ কিমি দূরে। বুরহা নদীর জলধারা থেকে সৃষ্ট এই লোধ ফলস ঝাড়খণ্ড রাজ্যের উচ্চতম এবং ভারতের ২১ তম উচ্চতম ফলস। প্রায় ১৪৩ মিটার উচ্চতা থেকে পাথরের বুকে ধাক্কা খেতে খেতে নেমে আসছে জলধারা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। আর মারুমার থেকে ২০ কিমি দূরে বারেসাদ। এখানে রয়েছে সুগা বাঁধ। এই দুটি স্পট দেখে এই পথেই চলে যেতে পারেন নেতারহাট। ফেরার পথে ইচ্ছে হলে চলে যাওয়া যায় রাঁচি। প্রয়োজনে রাঁচি থেকেই ট্রেন ধরে ফিরে আসা যায় কলকাতায়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।