তৃণমূল এই যাত্রায় যোগ না দিলেও...
ফাইল ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নামেই ভারত জোড় যাত্রা (Bharat Jodo Yatra)। আদতে লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election) আগে বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়া। রাজনৈতিক মহলের মতে, যে উদ্দেশ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কন্যাকুমারী থেকে পাড়ি দিলেন কাশ্মীর পর্যন্ত, সেই লক্ষ্য তাঁর আদৌ পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে বড়সড় একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন। ভারত জোড় যাত্রায় রাহুল ব্যয় করেছেন প্রায় পাঁচ মাস। কন্যাকুমারীতে শুরু হওয়া ওই পদযাত্রা শেষ হবে কাশ্মীরে শ্রীনগরে, ৩০ জানুয়ারি। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দলকে এক ছাতার তলায় আনতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ। কংগ্রেসের কমিউনিকেশন হেড তথা প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ গত সপ্তাহেই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কংগ্রেসকে অবশ্যই যে কোনও কার্যকর বিরোধী জোটের পাশে থাকতে হবে। তবে বিরোধী ঐক্যের ভরকেন্দ্র যে কংগ্রেসই, সেদিন তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, যে কোনও বিরোধী জোটের ভরকেন্দ্র অবশ্যই কংগ্রেস (Congress)। কংগ্রেস ছাড়া কোনও বিরোধী জোট অর্থবহ হবে না।
অতএব বিরোধীদের একজোট করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে সমমনস্ক ২১টি রাজনৈতিক দলকে ভারত জোড় যাত্রায় (Bharat Jodo Yatra) অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ফাইনাল ইভেন্টে তারা আহ্বান জানিয়েছিল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, ডিএমকে, এবং সিপিআই(এম)কে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, তেলগু দেশম পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি এবং সিপিআইকেও। অদ্ভুতভাবে আমন্ত্রিত দলের তালিকায় নেই আম আদমি পার্টি, শিরোমণি অকালি দল, ভারত রাষ্ট্র সমিতি এবং গুলাম নবি আজাদের ডেমক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টি।
আরও পড়ুুন: বন্ধ একশো দিনের প্রকল্প, ফের ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু ৩ পরিযায়ী শ্রমিকের
গত সপ্তাহে জনতা দল ইউনাইটেডের তরফে রাজীব রঞ্জন সিং খাড়গেকে জানিয়ে দেন, অন্য কাজ থাকায় তিনি ওই যাত্রায় যোগ দিতে পারছেন না। যদিও বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আসলে শক্তিশালী বিরোধী জোটের প্রাসঙ্গিকতার কথা সকলে স্বীকার করলেও, কংগ্রেসকে তার মুখ হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তার জেরে ডাক পেয়েও সচেতনভাবে কংগ্রেসের ভারত জোড় যাত্রা এড়িয়ে গিয়েছেন অনেকেই।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ভারত জোড় যাত্রাকে (Bharat Jodo Yatra) কংগ্রেসের অভ্যন্তরণী বিষয় বলে জানিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, আমরা এই যাত্রায় যোগ দেব না। যাত্রা শেষে বিরোধী ঐক্য নিয়ে কথা বলা যাবে। বিহারে জন সুরজ অভিযানে অনেক হেঁটেছি। এই অজুহাতে ভারত জোড় যাত্রা এড়িয়ে গিয়েছেন ইলেকশন স্পেশালিস্ট প্রশান্ত কিশোর। কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দেননি আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবও। অখিলেশ যাদবে সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি উত্তর প্রদেশের প্রধান এই দুই বিরোধী দলই যোগ দেননি কংগ্রেসের ভারত জোড় যাত্রায়। যদিও ডাক পেয়েছিল ওই দুই দলই।
কংগ্রেসের তরফে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর অখিলেশ বলেছিলেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। যদিও সমাজবাদী পার্টির সহযোগী দল রাষ্ট্রীয় লোক দলের তরফে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা ও তাঁর ছেলে তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা দুজনেই যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসের ওই যাত্রায়। যোগ দিয়েছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও। তৃণমূল এই যাত্রায় যোগ না দিলেও, দলের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এই যাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তবে সংবাদ মাধ্যমে তিনি এও বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির একটা বোঝাপড়া রয়েছে। মোদি যাতে আপসেট হয়ে পড়েন, এমন কোনও কাজ মমতা করবেন না। যখন মোদিজি বলেছিলেন ভারতকে কংগ্রেস মুক্ত করতে হবে, তখন মমতাও বলেছিলেন বাংলা থেকে কংগ্রেসকে দূর করা উচিত।
যে লক্ষ্যে রাহুল পাঁচ মাস ধরে হাঁটলেন, সেই লক্ষ্য পূরণ হবে কি? বলবে সময়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।