Battlefield Tourism: যুদ্ধক্ষেত্র পর্যটনে উৎসাহ দিতে পর্যটকদের জন্য অবারিত কার্গিল, গালওয়ান, শিয়াচেনও, অভিনব ভাবনা কেন্দ্রের...
সেনা দিবসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘ভারত রণভূমি দর্শন’ নামে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। ছবি: ট্যুইটার
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওয়্যার মেমোরিয়াল কিংবা ইতিহাসের খ্যাতনামা যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে দেশ-বিদেশে ছুটে যান পর্যটকরা (Tourists)। এবার ভারতেও সেই সুযোগ মিলতে চলেছে পর্যটকদের। সেই তালিকায় থাকছে সীমান্তে সদ্য ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ স্থলও। এত দিন পর্যন্ত সাধারণ পর্যটকদের জন্য কার্যত নিষিদ্ধ ছিল ওই এলাকাগুলি। দেশের সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রগুলিকে এ বার পর্যটনক্ষেত্র (Battlefield Tourism) হিসাবে গড়ে তুলতে সক্রিয় হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এই উদ্দেশ্যে বুধবার সেনা দিবসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘ভারত রণভূমি দর্শন’ (Bharat Ranbhoomi Darshan) নামে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেছেন।
২০২০ সালে গালওয়ানে চিনের সেনার সঙ্গে ভারতের সেনার সংঘর্ষ। যে ঘটনায় ২০ জন ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন। কিংবা ২০১৭ সালে ডোকলামে ভারত ও চিন সেনার মধ্যে প্রায় দুমাস ধরে চলা উত্তেজনা। অথবা শিয়াচেনে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় সেনার প্রহরা। ১২০০০ ফুট উচ্চতা থেকে দুর্গম ভূমিতে সেনার আত্মত্যাগের কথা জানতে পারবেন পর্যটকরা (Battlefield Tourism)। এছাড়া ৭৫টি অন্যান্য যুদ্ধভূমিও রয়েছে সেই তালিকায়। কার্গিলে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের স্মৃতি— সবই চাক্ষুষ করতে পারবেন পর্যটকরা। বুধবার ৭৭তম সেনা দিবসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও পর্যটন মন্ত্রক যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে।
"Bharat Rannbhoomi Darshan"#IndianArmy transforming border areas and historic battlefields into tourist destinations, enabling citizens to explore the historic sites where bravehearts fought for the nation and pay tribute to their valour and sacrifice.
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) January 13, 2025
" Saluting the… pic.twitter.com/nMO5O0xUnr
আশির দশকে সিয়াচেন হিমবাহ, নব্বইয়ের দশকে কার্গিল কিংবা হালফিলে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় আগ্রাসী শত্রুসেনার বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনা যে বীরত্বের সাক্ষ্য রেখেছিল, তা দেশের মানুষকে জানার সুযোগ করে দিতেই এই পদক্ষেপ বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে। ভারতীয় সেনার এক্স পোস্টে ভ্রমণার্থীদের উদ্দেশে আহ্বান— ‘‘সেই পবিত্র স্থানগুলি দর্শন করুন যেখানে আমাদের বীর সেনারা মাতৃভূমির জন্য লড়াই করেছিলেন।’’
ভারতের ব্যাটলফিল্ড ট্যুরিজম (Battlefield Tourism)। পোশাকি নাম, ভারত রণভূমি দর্শন (Bharat Ranbhoomi Darshan)। এর মধ্যে রয়েছে লাদাখে কার্গিল ও গালওয়ান, রাজস্থানের লোঙ্গেওয়ালা, অরুণাচল প্রদেশের কিবিথু, বুম লা, সিকিমে চো লা ক্ল্যাশ। কিংবা কার্গিলে ড্রজ ওয়ার মেমোরিয়াল দেখার সুযোগ। চিফ অফ আর্মি স্টাফ উপেন্দ্র দ্বিবেদী (Chief of Army Staff, General Upendra Dwivedi) বলেন, সীমান্ত এলাকায় সামগ্রিক উন্নয়নের একটি অংশ এই উদ্যোগ। এই বিষয়ে ওয়েবসাইটে সব তথ্য পাওয়া যাবে। এই উদ্যোগ চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেগুলি হল পরিকাঠামো, যোগাযোগ, পরিকাঠামো, শিক্ষা। ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, সীমান্ত এলাকাকে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র করে তোলা হবে। এখানে ইতিহাসের তথ্য তুলে ধরা থাকবে। অনুমতি নেওয়া যাবে নিষিদ্ধ এলাকায় যাওয়ার জন্য, ওয়ার মেমোরিয়াল, মিউজিয়ামের বিষয়ে বিশদে জানা যাবে।
Bharat Rannbhoomi Darshan: Witness Valour Up Close
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) January 12, 2025
The Indian Army is transforming border areas and historic battlefields into tourist destinations, offering citizens a chance to witness valour up close. Explore the hallowed grounds where gallant soldiers fought and serve the… pic.twitter.com/F4hZmuEGaI
প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রকে পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে সেনার তরফে। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র (বর্তমানে যা হরিয়ানায়) পর্যটকদের পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদেরও যুগ যুগ ধরে আকর্ষণ করে এসেছে। মুঘল সম্রাট আকবর এবং রানা প্রতাপের ঐতিহাসিক হলদিঘাটি যুদ্ধক্ষেত্রে বহুদিন ধরেই পর্যটনস্থল (Bharat Ranbhoomi Darshan) হিসাবে জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম সারিতে রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে বলিউডের ছবি ‘বর্ডার’ জয়সলমেরের মরুভূমিতে ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধে রক্তসিক্ত লোঙ্গেওয়ালাকে পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ওয়ার মেমোরিয়াল’। এবার টলোলিং, টাইগার হিল, সালতারো রিজ, পিপি ১৪-তেও ভিড় জমাবে মানুষ।
ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে যুদ্ধকালীন পর্যটন (Bharat Ranbhoomi Darshan) বিকাশের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী এই নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রের ৭৫টি স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব স্থান ভারতের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সাক্ষী। এই উদ্যোগের প্রথম দিকের প্রধান স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে গালওয়ান উপত্যকা, যেখানে ২০২০ সালে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ হয়েছিল। চিনী বাহিনী ভারতীয় সেনাদের রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বাধা দেয়, এবং এই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারান, যদিও চিনা বাহিনীর ক্ষতির পরিমাণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
"Bharat Rannbhoomi Darshan"
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) January 14, 2025
Explore the valour of India's #Bravehearts in their battle grounds.
Transforming border areas & historic battlefields into tourist destinations.
Hallowed grounds where #Bravehearts fought for the Nation.#bharatrannbhoomidarshan#IndianArmy… pic.twitter.com/03et4gZ8tN
ভারতীয় সেনাবাহিনী একইভাবে সিয়াচেন গ্লেসিয়ারের মতো অঞ্চলে পর্যটন বিকাশের পরিকল্পনা করছে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৮৪ সাল থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। ২০২৩ সালে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয় (Battlefield Tourism)। এর পাশাপাশি কাকরেল, কার্গিল, এবং লোঙ্গেওয়ালা সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রও এই উদ্যোগের আওতায় আনা হয়েছে। কাকরেল, ১৯৯৯ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, এবং লোঙ্গেওয়ালা, যেখানে ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সাধন করেছিল, সেগুলি এখন পর্যটকদের জন্য একটি ইতিহাসের সাক্ষী। এছাড়াও, ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলের মতো কিবিতু, বুমলা, রেজাংলা এবং পাংগং ত্সো, যেগুলি ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল, সেগুলিও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়া, ১৯৬৭ সালের চো-লা সংঘর্ষস্থলও এই উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যেখানে ভারতীয় বাহিনী চিনের উপর বড় ধরনের আঘাত হেনেছিল।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চায়। এটি একটি সুযোগ, যেখানে দর্শনার্থীরা ভারতের সামরিক ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং দেশের জন্য সংগ্রাম করা সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, যে গত চার বছরে লাদাখ, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে পর্যটক সংখ্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মূল কারণ উন্নত পরিকাঠামো, ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সীমান্ত পর্যটনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ। এবার সেই পর্যটনের সঙ্গেই জড়িয়ে যাবে ভারতীয় সেনা বাহিনীর জয়ের উপাখ্যান।
'ভারত রণভূমি দর্শন' (Bharat Ranbhoomi Darshan) ওয়েবসাইটটি জনসাধারণের জন্য চালু করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে তাঁরা ভ্রমণ পরিকল্পনা সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেয়ে যাবেন এক ক্লিকে। যার মধ্যে এই স্থানগুলির কিছু পারমিটের জন্য কীভাবে আবেদন করতে হবে তাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ওয়েবসাইটটিতে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিশদ বিবরণ থাকবে (Battlefield Tourism)। ভার্চুয়াল ভ্রমণ, ঐতিহাসিক আখ্যান এবং ইন্টার্যাক্টিভ কন্টেন্ট প্রদান করা হবে স্থানগুলি সম্পর্কে। পর্যটন মন্ত্রক এবার থেকে অতুল্য ভারত (Incredible India) প্রচারের অংশ হিসাবে এই স্থানগুলির কথাও তুলে ধরবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।