মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এমন কোনও দিন শুনেছেন যে, কোনও এক গ্রামে কোনও মানুষ কথা বলেন না বা কানে শোনেন না? যাঁদের আছে নিজস্ব সাঙ্কেতিক ভাষা? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটা সত্যি! হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে আছে এমন এক গ্রাম, যে গ্রামের প্রায় প্রত্যেক মানুষ মূক ও বধির (Kashmir’s Silent Village)। যাঁদের আছে নিজস্ব সাঙ্কেতিক ভাষা, যা হার মানায় বইয়ের পৃষ্ঠায় থাকা রূপকথার গল্পকেও। অনেকই হয়তো জানেন না ভারতবর্ষের মধ্যেই আছে এমন এক গ্রাম। বর্তমানে বিশ্ব দরবারে এই গ্রামের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। যে গ্রামকে নিয়ে অনেক লেখালেখি ও গবেষণাও করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পার্বত্য ডোডা জেলায় অবস্থিত এই গ্রাম, যার নাম দাধকাই। কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রাম।
কীভাবে শুরু হয় গ্রামের এই পরিস্থিতির? (Kashmir’s Silent Village)
এই গ্রামটির অবস্থান হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে হওয়ায় সব সময়ই এখানে শুষ্ক আবহাওয়া এবং শীতের পরিমাণ বেশি। অনেক সময় তুষারপাতও হয়। এই গ্রামে প্রায় ৩০০টি পরিবার বসবাস করে, যেখানে প্রায় ৩০০০ মানুষের বসবাস। ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আধা যাযাবর মানুষের বাস এখানে। কৃষিকাজ এবং পশু পালনের মাধ্যমেই তাঁদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।
কী বলছেন এঁরা? (Kashmir’s Silent Village)
এই গ্রামেরই এক পরিবারের সদস্যর কাছ থেকে জানা যায়, এই মূক ও বধির ব্যক্তির প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯০১ সালে। যেখানে গ্রামের একটি পরিবারের ছেলে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নিয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় সময়ের সাথে সাথে এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের জন্ম আরও বাড়তে থাকে যেটির সংখ্যা ১৯৯০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ জন। আবার ২০০৭ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৯ জন। আবার ২০২৩ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ জন (Kashmir’s Silent Village)। আবার দেখা গেছে এই মূক ও বধির সমস্ত মানুষের মধ্যে নারীর সংখ্যা সব থেকে বেশি।
গ্রামের এক সদস্য জানান, বিংশ শতকের শেষের দিকেও বধির দম্পতির সংখ্যা বাড়তেই থাকে। এই কারণে তাঁদের সন্তানও এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মানোর আশঙ্কা বেড়ে যায়। এমনকি বাবা এবং মা দুজনের বাকশক্তি অথবা শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক থাকলেও সন্তান মূক-বধির হতে পারে, এমনটাও দেখা যায়।
গবেষণা কী জানিয়েছে এই বিষয়ে? (Kashmir’s Silent Village)
এই সমস্ত ঘটনা নজরে আসে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর। ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি জার্নালের উদ্যোগে ধাদকাই গ্রামের মানুষদের ওপর বিভিন্ন জেনেটিক পরীক্ষা চালানো হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায় এই গ্রামের মানুষদের জেনেটিক মিউটেশনের কারণে অটোফেরলিন নামক প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে। এই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে মানুষের মধ্যে শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি হ্রাস পায়।
আবার পরবর্তীতে ২০১২ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব হিউম্যান জেনেটিক্স-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সম্প্রদায়টির নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বংশবৃদ্ধির কারণেই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে মূক-বধিরতা বেড়ে গিয়েছে। গ্রামে বাসিন্দারা এখনও সেই রীতিনীতি বজায় রাখার কারণেই বর্তমানেও এই মূক ও বধির মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে (Kashmir’s Silent Village)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours