S Jaishankar: চাবাহার বন্দর চুক্তি নিয়ে কী বললেন জয়শঙ্কর?...
এস জয়শঙ্কর। ফাইল ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৩ মে, সোমবার ভারত স্বাক্ষর করেছে ঐতিহাসিক চাবাহার বন্দর চুক্তিতে (Chabahar Port Agreement)। ইরানে গিয়ে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ভারতের জাহাজ ও জলপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তার পরে পরেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে ভারতের এই চুক্তিতে মধ্য এশিয়ায় ভারতের জন্য খুলে গেল বিনিয়োগের বৃহত্তর দ্বার।
সংবাদ মাধ্যমে এক সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “চাবাহার বন্দর চুক্তি নিয়ে আজ আমার কথা হয়েছে সতীর্থ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে। চুক্তি স্বাক্ষর করতে তিনি গিয়েছেন ইরানে। এটা আশা করা হচ্ছে যে ভারত ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি (দশ বছরের জন্য) এই চুক্তি আজই স্বাক্ষরিত হবে। অ্যাড হক অ্যারেঞ্জমেন্টসের ভিত্তিতে এই চুক্তি হচ্ছে। এতে ভারতের দিক থেকে কোনও সমস্যা নেই। যদিও ইরানের তরফে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে (এর আগেই অবশ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গিয়েছে)।” তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যখন (Chabahar Port Agreement) এই দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে যাবে, তখন এই বন্দরে বৃহত্তর বিনিয়োগের দ্বার খুলে যাবে। বন্দরটির এখনও সেভাবে নামডাক হয়নি। কারণ দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি না হলে বন্দরে মোটা অঙ্কের টাকা লগ্নি করা খুব কঠিন। এখন যখন দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি হচ্ছে, তখন অবশ্যই ওই বন্দরে আমরা মোটা অঙ্কের টাকা লগ্নি করব।”
বিদেশমন্ত্রী এদিন ইন্ডিয়া-মিডল-ইস্ট ইউরোপ ইকনমিক করিডর চুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন। গত বছর জি২০ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারত। সেখানেই এই চুক্তি হয়। জয়শঙ্কর জনান, চাবাহার বন্দর ভারতকে জুড়ে দেবে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই বন্দরের মাধ্যমে অনেকগুলি কানেকটিভিটি লিঙ্কেজ তৈরি হবে। আজ আমরা বিশ্বাস করি, এই অংশের কানেকটিভিটি একটা বড় ইস্যু। ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর, যেটা করা হয়েছিল ইরান-রাশিয়ার সঙ্গে, এর সঙ্গে আমাদের যুক্ত করবে চাবাহার। মধ্য এশিয়াকেও যুক্ত করবে এই বন্দর।” বিদেশমন্ত্রী বলেন, “আমাদের একটা আলাদা করিডর আছে, আইএমইইসি করিডর সৌদি আরবের মধ্যে দিয়ে। তাই আমি মনে করি, চুক্তি (চাবাহার চুক্তি) নিয়ে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমায় অপেক্ষা করতে হবে। আপনারা জানেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।” প্রসঙ্গত, চাবাহার বন্দর চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে এদিনই ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের বিশেষ বিমানে ইরানে উড়ে গিয়েছিলেন জাহাজ ও জলপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
ইরানের এই চাবাহার বন্দর রয়েছে ওমান উপসাগরের মুখে। এর আগে প্রতি বছরের জন্য চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হলেও, এবার টানা দশ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে। অবস্থানগতভাবে ভারতের কাছে এই বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। পাকিস্তানের করাচির পাশাপাশি গদর বন্দরকে বাইপাশ করেই ইরানের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্য করতে পারবে ভারত। ব্যবসায়িক যোগাযোগের একটি নয়া রাস্তাও খুলে দেবে এই বন্দর। সংবেদনশীল এবং ব্যস্ত পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর বিকল্প ব্যবসায়িক রুট হিসেবেও কাজ করবে এই বন্দর (Chabahar Port Agreement)। বিভিন্ন বন্দরের রাশ হাতে নেওয়ার খেলায় মেতেছে চিন। এভাবে বিভিন্ন দেশে মাতব্বরি করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না বেজিং। চিনকে টেক্কা দিতে কোমর কষে নেমে পড়েছে ভারতও। ইতিমধ্যেই মায়ানমারের সিট্টে বন্দরের রাশ হাতে নিয়েছে ভারত। গত বছর মে মাসে মায়ানমারের ওই বন্দরের রাশ হাতে নিয়েছিল নয়াদিল্লি। সেই বন্দরের উদ্বোধনও করেছিলেন সোনোয়াল। এবার ভারত নিল চাবাহার বন্দরের রশিও।
আরও পড়ুুন: শ্রীনগরে পড়ল রেকর্ড ভোট, কী প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর?
ভারত ও ইরান দুই দেশের কাছেই চাবাহার বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বন্দর-চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ভারতের সঙ্গে ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার যোগাযোগের রুট হল সংক্ষিপ্ততর। চাবাহার বন্দরকে ট্রানজিট হাব বানাতে চাইছে ভারত। এর মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের মাধ্যমে কমনওয়েল্থ অফ ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটসের দেশগুলিতে অনায়াসে পৌঁছতে পারবে ভারত। ভারতের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার কার্গো যোগাযোগের জেরে মজবুত হবে ভারতের অর্থনীতির ভিত। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে চাবাহার বন্দর পরিণত হবে এই অঞ্চলের কমার্সিয়াল ট্রানজিট সেন্টারে। আইএনএসটিসি একটি মাল্টি টান্সপোর্টেশন রুট। এটি কাস্পিয়ান সাগরের মধ্যে দিয়ে ভারত মহাসাগর ও পারস্য উপসাগরে সংযোগকারী পরিবহণ রুট হিসেবে কাজ করে। ইরান এবং ভায়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ হয়ে ইউরোপের উত্তরাংশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ করে সুগম। মুম্বই থেকে সমুদ্র পথে শাহিদ বেহেস্তি বন্দর-চাবাহার, চাবাহার থেকে স্থলপথে কাস্পিয়ান সাগরে থাকা ইরানের আর এক বন্দর বন্দের-ই-আনজালি এবং সেখান থেকে কাস্পিয়ান সাগর হয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগও অনায়াস হবে চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে (Chabahar Port Agreement)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।